পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসা বা ইসলামি শরীয়াহ ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। অনার্স, মাস্টার্স, পিএইচডি সব লেভেলেই মাদরাসায় থেকে পাশ করা কিংবা ইসলামিক বিষয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়তে পারবে। তবে এক্ষেত্রে সব সময় সরাসরি ইসলামিক স্ট্যাডিজ বা শরীয়াহ, কুরআন, হাদিস নামে সাবজেক্ট বা ডিপার্টমেন্ট পাওয়া যায় না। তাই উদিষ্ট বিষটি খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। এই ক্ষেত্রে শরীয়াহ ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদেরকে এই সুযোগগুলো খুঁজতে কিছু কাছাকাছি নাম মাথায় রাখতে হবে, আমরা সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করবো, এছাড়াও কোন কোন দেশে, কোন কোন ইউনিভার্সিটিতে, কোন ডিপার্টমেন্টে তারা পড়তে পারবে সে বিষয়েও আলোকপাত করবো।
বিভিন্ন দেশে যে সকল নামে পড়ার বিষয় খুঁজে পাবেন, তার সামান্য কিছু উদাহরণ:
- ইসলামী স্টাডিজ (Islamic Studies): ইসলামের বিভিন্ন দিক, যেমন কুরআন, হাদিস, ফিকহ, ইসলামিক ইতিহাস ইত্যাদি নিয়ে এই বিষয়ে গবেষণা এবং শিক্ষা প্রদান করা হয়। এই বিষয়টি প্রায় সব ইসলামিক এবং বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যায়।
- ইসলামী ধর্মতত্ত্ব (Islamic Theology): ইসলামিক আকিদাহ, বিশ্বাস, এবং ধর্মতত্ত্বের ওপর গভীর গবেষণা এবং শিক্ষা। এ বিষয়ে ইরান, সৌদি আরব, মিসর, এবং তুরস্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা যায়।
- ইসলামী স্টাডিজ ও আরবী (Islamic Studies and Arabic): ইসলামী স্টাডিজের পাশাপাশি আরবি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা করা হয়। সৌদি আরব, মিসর, মরক্কো, কুয়েত, এবং লেবাননে এই বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ আছে।
- মধ্যপ্রাচ্য স্টাডিজ (Middle Eastern Studies): মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, এবং রাজনীতি নিয়ে গবেষণা এবং পড়াশোনা করা হয়। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, এবং ইউরোপীয় দেশগুলিতে এই বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে।
- ধর্মতত্ত্বের স্টাডিজ (Religious Studies): বিভিন্ন ধর্মের মূল শিক্ষা, ইতিহাস, এবং নৈতিক দিকগুলো নিয়ে এই বিষয়ে পড়াশোনা করা হয়। এটি বিশ্বের প্রায় সব বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যায়।
- তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব (Comparative Religions): বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং অধ্যয়ন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপীয় দেশগুলিতে এই বিষয়ে কোর্স পাওয়া যায়।
- ধর্মীয় সংলাপ (Interreligious Dialogue): বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া নিয়ে গবেষণা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, এবং ভ্যাটিকান সিটির কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই বিষয়ে কোর্স প্রদান করে।
- ধর্মীয় স্টাডিজ (Interreligious Studies): বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক এবং সংলাপ নিয়ে গবেষণা। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, এবং মধ্যপ্রাচ্যে এই বিষয়ে কোর্স পাওয়া যায়।
- ইসলামী স্টাডিজ ও সভ্যতা (Islamic Studies and Civilization): ইসলামিক সভ্যতা, ইতিহাস, এবং সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশোনা করা হয়। তুরস্ক, ইরান, মালয়েশিয়া, এবং অন্যান্য ইসলামী দেশগুলোতে এই বিষয়ে কোর্স পাওয়া যায়।
- ইসলামী স্টাডিজ ও দর্শন (Islamic Studies and Philosophy): ইসলামিক দর্শন এবং চিন্তাধারা নিয়ে গবেষণা। ইরান, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ আছে।
- সাংস্কৃতিক স্টাডিজ (Cultural Studies): বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা। এটি বিশ্বের প্রায় সব বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যায়।
- কুদস স্টাডিজ (Quds Studies): কুদস (জেরুসালেম) এবং তার ইতিহাস, ধর্মীয় গুরুত্ব, এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা। ফিলিস্তিন, জর্ডান, এবং তুরস্কের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে পড়াশোনা করা যায়।
- সুফিবাদ স্টাডিজ (Sufism Studies): সুফিবাদ এবং ইসলামী আধ্যাত্মিকতা নিয়ে গভীর গবেষণা। পাকিস্তান, ভারত, তুরস্ক, এবং ইরানে এই বিষয়ে কোর্স রয়েছে।
- ধর্মীয় ফ্যাকাল্টি (Faculty of Divinity): ধর্মীয় শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য বিশেষায়িত বিভাগ। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই ফ্যাকাল্টি রয়েছে।
- প্রাচ্য স্টাডিজের ফ্যাকাল্টি (Faculty of Oriental Studies): প্রাচ্য সংস্কৃতি, ভাষা, এবং ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা হয়। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, এবং জার্মানি, ফ্রান্সের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি পড়ানো হয়।
- আলওয়ালিদ ইসলামী স্টাডিজ প্রোগ্রাম (Alwaleed Islamic Studies Program): ইসলামী স্টাডিজ এবং সমসাময়িক আরব বিশ্ব নিয়ে বিশেষায়িত গবেষণা প্রোগ্রাম। কেমব্রিজ (যুক্তরাজ্য) এবং হার্ভার্ড (যুক্তরাষ্ট্র) বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রোগ্রামটি পাওয়া যায়।
- আধুনিক আরব স্টাডিজ (Contemporary Arab Studies): আধুনিক আরব বিশ্বের ভাষা, সংস্কৃতি, এবং রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করা হয়। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে কোর্স পাওয়া যায়।
- আরব বিশ্ব ও ইসলামী সভ্যতা (Arab Worlds and Islamic Civilizations): আরব বিশ্ব এবং ইসলামী সভ্যতার ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং সমাজ নিয়ে গবেষণা। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, এবং মিসরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে অধ্যয়ন করা যায়।
তবে এখানে বলে রাখা ভালো মাদরাসা বা শরীয়াহ ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীরা সামাজিক বিজ্ঞান (Social Sciences) ও কলা ও মানবিকের (Arts and Humanities) যেকোনো বিষয়ে পড়তে পারবে। যারা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিলেন, তাদের জন্য তো বিজ্ঞানের যেকোনো বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছেই। আমরা এখানে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করেছি, সেগুলো বিশেষভাবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য। আমরা এখন মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথিবীর কোন দেশে কী কী স্কলারশিপ আছে ও কোন ইউনিভার্সিটিতে কোন ডিপার্টমেন্টে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা পড়তে পারবে সে বিষয়ে দৃষ্টিপাত করবো।
স্কলারশিপের তালিকা:
- আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ প্রোগ্রাম (Al-Azhar University Scholarship Program): আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিশরের অন্যতম প্রাচীন এবং প্রসিদ্ধ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা ইসলামিক স্টাডিজ ও থিওলজির বিভিন্ন শাখায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। এই স্কলারশিপটি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, বাসস্থান, স্বাস্থ্যবীমা এবং অন্যান্য একাডেমিক খরচের পুরোপুরি প্রদান করে। আবেদনকারীদের উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রি থাকতে হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয়। সাধারণত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে আবেদন করা যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। লিংক: azhar.eg/foreignstudent
- ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম (Islamic Development Bank Scholarship Program): ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (IsDB) উন্নয়নশীল দেশগুলোর মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে এই স্কলারশিপটি প্রদান করে। এতে সম্পূর্ণ টিউশন ফি, মাসিক ভাতা, স্বাস্থ্যবীমা, এবং গবেষণার জন্য অতিরিক্ত ফান্ডিং অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আবেদনকারীদের মুসলিম হতে হবে এবং তাদের দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার উদ্দেশ্য থাকতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আবেদন নেয়া হয়ে থাকে। লিংক: isdb.org/scholarships
- অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজ স্কলারশিপ (Oxford Centre for Islamic Studies Scholarships): এই স্কলারশিপটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ প্রদান করে। এটি সম্পূর্ণ টিউশন ফি এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মাসিক ভাতা প্রদান করে, যা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক এবং ব্যক্তিগত খরচ কভার করতে সহায়তা করে। আবেদনকারীদের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যোগ্য হতে হবে এবং তাদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড শক্তিশালী হতে হবে। এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল আবেদন প্রক্রিয়ার অনুরূপ।লিংক: oxcis.ac.uk
- আল-মাকতুম কলেজ স্কলারশিপ (Al-Maktoum College Scholarships): আল-মাকতুম কলেজ স্কলারশিপটি ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামিক ফিন্যান্স, এবং ইসলামিক সংস্কৃতির উপর উচ্চতর শিক্ষা লাভ করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উৎকৃষ্ট সুযোগ। এই স্কলারশিপটি টিউশন ফি কভার করে এবং কিছু ক্ষেত্রে বাসস্থানের সুবিধাও প্রদান করে। আবেদনকারীদের ভালো একাডেমিক রেকর্ড থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আগ্রহ থাকতে হবে। সাধারণত আবেদন প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়। লিংক: dundee.ac.uk/scholarships/al-maktoum-college-hamdan-bin-rashid-scholarship-september-2024
- তুর্কি দিয়ানেত স্কলারশিপ (Turkish Diyanet Scholarship): তুর্কি দিয়ানেত স্কলারশিপটি বিশেষভাবে ইসলামিক স্টাডিজে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রদান করা হয়। এতে টিউশন ফি, মাসিক ভাতা, প্রতিবছর একবার দেশে আসা-যাওয়ার বিমান টিকিট, বাসস্থান এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি স্তরের শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এর মধ্যে সম্পূর্ণ করতে হয়। এই বিষয়ে আমরা পূর্বের পর্বগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম। লিংক: diyanetburslari.tdv.org/en
- তুর্কি বুরসলারি স্কলারশিপ (Turkish Scholarships): তুর্কি সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ অর্থায়িত এই স্কলারশিপটি প্রদান করে, যা টিউশন ফি, মাসিক ভাতা, স্বাস্থ্যবীমা, এবং বাসস্থানের খরচ কভার করে। এই বিষয়ে আমরা পূর্বের পর্বগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম। সাধারণত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদন প্রক্রিয়া খোলা থাকে। লিংক: turkiyeburslari.gov.tr
- ইমাম খোমেইনি স্কলারশিপ (Imam Khomeini Scholarship): ইরানের ইমাম খোমেইনি স্কলারশিপটি ইসলামিক স্টাডিজ এবং থিওলজিতে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রদান করা হয়। এই স্কলারশিপটি টিউশন ফি, বাসস্থান এবং মাসিক ভাতা কভার করে। আবেদনকারীদের ইসলামিক স্টাডিজে আগ্রহী এবং খুব ভালো একাডেমিক রেকর্ড থাকতে হবে। সাধারণত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে আবেদন করা যায়। লিংক: en.msrt.ir
- কিং আব্দুল্লাহ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম (King Abdullah Scholarship Program): সৌদি আরবের কিং আব্দুল্লাহ স্কলারশিপ প্রোগ্রামটি মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ অর্থায়ন সহ স্কলারশিপ প্রদান করে। শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি, বাসস্থান, জীবনযাত্রার ভাতা, স্বাস্থ্যবীমা এবং স্থানান্তর সহায়তা পায়। এই স্কলারশিপটি সাধারণত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য খোলা থাকে। লিংক: kaust.edu.sa/en/study/idb-kaust-scholarship
- কাতার স্কলারশিপ প্রোগ্রাম (Qatar Scholarship Program): কাতার স্কলারশিপ প্রোগ্রামটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কাতারে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করে থাকে। এটি টিউশন ফি, বাসস্থান এবং মাসিক ভাতা কভার করে। সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত খোলা থাকে। লিংক: qatarscholarships.qa/en-US
- সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্কলারশিপ (UAE Ministry of Education Scholarships): সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের নাগরিকদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সহায়তা প্রদান করে। এই স্কলারশিপের আওতায় টিউশন ফি, বাসস্থান, মাসিক ভাতা এবং অন্যান্য একাডেমিক সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সাধারণত আবেদন প্রক্রিয়ার সময়সীমা নির্ভর করে নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের উপর। লিংক: moe.gov.ae/en/pages/home.aspx
এগুলো ছাড়াও আরো অনেক ধরনের স্কলারশিপ রয়েছে। আমরা এখন বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ার সুযোগগুলো দেখবো।
উত্তর আমেরিকা:
- হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় – আলওয়ালিদ ইসলামিক স্টাডিজ প্রোগ্রাম: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রোগ্রামটি ইসলামিক স্টাডিজ এবং মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কিত গবেষণার প্রচারে নিবেদিত। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের গবেষণার সুযোগ এবং সম্পূর্ণ অর্থায়নসহ স্কলারশিপ প্রদান করে। লিংক: islamicstudies.harvard.edu
- শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় – ডিভিনিটি স্কুল, ইসলামিক স্টাডিজ প্রোগ্রাম: এই প্রোগ্রামটি ইসলামিক থিওলজি এবং মুসলিম সংস্কৃতি নিয়ে গভীর গবেষণার সুযোগ প্রদান করে। শিক্ষার্থীরা এখানে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রির জন্য অধ্যয়ন করতে পারে। লিংক: divinity.uchicago.edu/academics/committees-and-areas-study/islamic-studies
- জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় – আরব স্টাডিজ কেন্দ্র:
এই প্রোগ্রামটি আরব বিশ্বের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করতে সহায়তা করে। লিংক: ccas.georgetown.edu - ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে – মধ্যপ্রাচ্য স্টাডিজ কেন্দ্র: বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রোগ্রামটি মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা, ইতিহাস, এবং সংস্কৃতির ওপর গবেষণা করতে সহায়তা করে। লিংক: cmes.berkeley.edu
- মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় – ইসলামিক স্টাডিজ প্রোগ্রাম: এই প্রোগ্রামটি ইসলামিক থিওলজি, আইন, এবং মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দিক নিয়ে গভীর গবেষণার সুযোগ প্রদান করে। লিংক: ii.umich.edu/islamicstudies
- প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় – নিকট পূর্ব স্টাডিজ বিভাগ: এই বিভাগটি মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস, সাহিত্য, এবং ভাষার ওপর গবেষণা করার সুযোগ প্রদান করে। লিংক: nes.princeton.edu
- টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়, অস্টিন – মধ্যপ্রাচ্য স্টাডিজ বিভাগ: টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা এবং সংস্কৃতি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ প্রদান করে। লিংক: liberalarts.utexas.edu/mes
- ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় – ইসলামিক স্টাডিজ কেন্দ্র: এই কেন্দ্রটি ইসলামিক স্টাডিজে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক এবং গবেষকদের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়, যা শিক্ষার্থীদের জন্য গভীর গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করে। লিংক: islamicstudies.duke.edu
- ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস (UCLA) – সাম্প্রতিক প্রাচ্য স্টাডিজ কেন্দ্র: UCLA এর এই কেন্দ্রটি মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ভাষা নিয়ে গবেষণা করতে সহায়তা করে। লিংক: international.ucla.edu/cnes
- টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় – ধর্মতত্ত্ব বিভাগ: টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগটি বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক গবেষণা এবং ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে কাজ করে। লিংক: religion.utoronto.ca
ইউরোপ:
- অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় – প্রাচ্য স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি, খলিলি গবেষণা কেন্দ্র: অক্সফোর্ডের এই কেন্দ্রটি মধ্যপ্রাচ্যের শিল্পকলা এবং সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণায় সহায়ক।
লিংক: orinst.ox.ac.uk - কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় – এশিয়ান ও মধ্যপ্রাচ্য স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি: এই প্রোগ্রামটি এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা, সাহিত্য, এবং ইতিহাস নিয়ে গবেষণার সুযোগ প্রদান করে।
লিংক: ames.cam.ac.uk - লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় – স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ: SOAS এর এই বিভাগটি বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক গবেষণা এবং ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে কাজ করে।
লিংক: soas.ac.uk - লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় – ইসলামিক স্টাডিজ এবং সমাজবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র: লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কেন্দ্রটি ইসলামিক সমাজ এবং সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণায় বিশেষায়িত।
লিংক: universiteitleiden.nl/en/humanities/centre-for-the-study-of-islam-and-society - এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় – ডিভিনিটি স্কুল, ইসলামিক স্টাডিজ:
এডিনবার্গের এই প্রোগ্রামটি ইসলামিক থিওলজি এবং ধর্মতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার সুযোগ প্রদান করে।
লিংক: divinity.ed.ac.uk - ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় – সাম্প্রতিক প্রাচ্য স্টাডিজ বিভাগ: এই বিভাগটি মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণায় সহায়ক।
লিংক: orientalistik.univie.ac.at - কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় – ক্রস কালচারাল এবং আঞ্চলিক স্টাডিজ বিভাগ: কোপেনহেগেনের এই প্রোগ্রামটি বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং আঞ্চলিক স্টাডিজ নিয়ে গবেষণা করতে সহায়তা করে।
লিংক: ccrs.ku.dk - স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয় – এশিয়ান, মধ্যপ্রাচ্য এবং তুর্কি স্টাডিজ বিভাগ: স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগটি এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং তুর্কি স্টাডিজ নিয়ে গবেষণার সুযোগ প্রদান করে।
লিংক: su.se
উপরোল্লেখিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়াও আরব বিশ্বের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়, তুরস্ক, ইরান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাইসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থী তথা ইসলাম সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে স্কলারশিপসহ পড়তে পারবেন। সুতরাং সুযোগের কোনো অভাব নেই। আমরা বিশেষভাবে তুর্কি দিয়ানেত (Türkiye Diyanet) স্কলারশিপের কথা উল্লেখ করতে পারি, যা কেবলমাত্র ইসলামী থিওলজির জন্য দেয়া হয়।
একজন মাদরাসা শিক্ষার্থী কী ধরনের প্রস্তুতি নিবে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় পড়তে যাবার জন্য:
প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আমরা এই সিরিজের ১ম পর্বে আলোকপাত করেছিলাম, সেগুলো সবার জন্যই প্রযোজ্য। তবে এই পর্বটি যেহেতু বিশেষভাবে মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের জন্য লেখা, তাই তাদের প্রস্তুতির জন্যেও কিছু বিষয় জোর দিয়ে উল্লেখ করছি।
- ভিশন ও মিশন: প্রথমত ভিশন এবং মিশন থাকতে হবে। দেশে চাকরি কিংবা অন্যান্য যেকোনো বিষয়ের প্রস্তুতির জন্য যেভাবে নির্দিষ্ট ফ্রেমওয়ার্ক করে সময় নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়, উচ্চশিক্ষার জন্যেও সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
- যথাযথ প্রস্তুতি (স্কলারশিপ ক্যালেন্ডার তৈরি): উপরে যে তালিকাগুলো দেয়া হয়েছে, সেগুলোর ওয়েবসাইটে ভিজিট করে, নিজের জন্য বেস্ট ইউনিভার্সিটি ও স্কলারশিপগুলো নিয়ে একটি এক্সেল শিট তৈরি করে নিতে হবে। কখন, কোথায় আবেদন, কী কী লাগে আবেদন করতে ইত্যাদি তথ্যাবলী দিয়ে সমৃদ্ধ করতে হবে এক্সেল শিটটি।
- ভালো সিজিপিএ: সিজিপিএ ভালো রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। মিনিমাম ৩ পয়েন্ট দিয়ে সব জায়গায় এপ্লাই করা যাবে। তবে স্কলারশিপ পেতে স্কোর আরো অনেক ভালো থাকা বাঞ্চনীয়।
- ভাষাগত দক্ষতা: আইইএলটিএস এর প্রস্তুতি নিয়ে এক্সাম দিয়ে ভালো একটি স্কোর নিয়ে রাখতে হবে। এছাড়াও আরবী ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
- সিভি ও কভার লেটার: সুন্দর একটি একাডেমিক সিভি ও কভার লেটার তৈরি করে রাখতে হবে। প্রয়োজনে এই বিষয়ে এক্সপার্ট কাউকে দিয়ে এসেসমেন্ট করিয়ে নিতে হবে।
- মোটিভেশন লেটার: প্রতিটি স্কলারশিপের জন্য মোটিভেশন লেটার লিখতে হয়। তাই একটি মোটিভেশন লেটার / (SOP) ড্রাফট করে রাখতে হবে। এবং তা প্রতিটি স্কলারশিপে আবেদনের জন্য আলাদাভাবে মোডিফাই করে তারপর সাবমিট করতে হবে। এই বিষয়ে এক্সপার্ট কাউকে দিয়ে এসেসমেন্ট করিয়ে নিতে হবে।
- রেফারেন্স লেটার: প্রতিটি স্কলারশিপের জন্য রেফারেন্স লেটার বা রিকমেন্ডেশন সাবমিট করতে হয়। তাই কমপক্ষে তিনটি রেফারেন্স লেটার শিক্ষকদের থেকে নিয়ে রাখতে হবে।
- সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট: সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্টগুলো সংগ্রহে রাখতে হবে। আবেদনের সময় স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
- পাসপোর্ট: যত দ্রুত সম্ভব পাসপোর্ট করে রাখতে হবে। কিছু কিছু দেশে আবেদনের সময়ই পাসপোর্টের প্রয়োজন হতে পারে।
- গবেষণা পত্র: কিছু রিসার্চ আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করতে হবে এবং তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে পাবলিশ করতে হবে।
- সহায়ক কার্যক্রম: একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু এক্সাট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস ও ভলেন্টারিং করতে হবে এবং সেগুলোর সার্টিফিকেট সংগ্রহে রাখতে হবে।
- বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: মাদরাসা থেকে পড়াশোনা করে পৃথিবীর ভিন্ন দেশে অবস্থানকারী সিনিয়রদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যেকোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য তাদের সাথে কথা বলতে হবে।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের বাহিরে ক্যারিয়ার গড়ার কী ধরণের সুযোগ রয়েছে:
- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক: পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের থিওলজি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক হিসেবে চাকরির সুযোগ।
- গবেষক: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেরা সেরা ইসলামিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট রয়েছে। সেগুলোতে কাজ করার অবারিত সুযোগ রয়েছে।
- ইসলামিক এনজিও ও চ্যারিটি অর্গানাইজেশনে চাকরি: ইউকে, আমেরিকা, কানাডা ও তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন চ্যারিটি অর্গানাইজেশন রয়েছে। এগুলোকে জয়েন করার সুযোগ রয়েছে।
- ইমাম ও মুফতি: ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে এখন মুসলিম কমিউনিটি গড়ে উঠেছে। এবং সেগুলোতে বিভিন্ন ইসলামিক ইন্সটিটিউট, মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার তৈরি হয়েছে। সেগুলোতে কাজ করার সুর্বণ সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশী মাদরাসা শিক্ষার্থীদের।
- ইসলামী ব্যাংকিং ও ফিন্যান্স: এশিয়া, মিডলইস্টসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখন বিভিন্ন ইসলামিক ফিন্যান্স সিস্টেম গড়ে উঠেছে। সেগুলোতে জয়েন করার সুযোগ রয়েছে।
- কুটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: বিভিন্ন ধরনের ইন্টারকালচারাল ডায়লগ, ইসলামিক অ্যাফেয়ার্সে কাজ করার ও দা’ঈ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সুতরাং, প্রয়োজন সিদ্দান্ত গ্রহণ ও যথাযথ প্রস্তুতির। আজ শেষ করছি, আগামী পর্বে ভিন্ন কোনো স্কলারশিপ নিয়ে আলাপ হবে। ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
মু. সাইফুল ইসলাম
পিএইচডি গবেষক, আঙ্কারা ইউনিভার্সিটি, তুরস্ক।