সালাতুত তাসবীহ (صلاة تسبيح ) নামাজ কত গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝার জন্য একটি হাদিসের দিকে লক্ষ্য করলেই তা সহজে বুঝা যাবে। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম) তাঁর চাচা হযরত আব্বাস (রা.)-কে বলেন, ‘চাচা, পারলে আপনি সালাতুত তাসবিহ নামাজ দিনে একবার তা না পারলে সপ্তাহে একবার, তাও না হলে মাসে একবার, তাও না পারলে বছরে একবার পড়বেন। তাতেও অক্ষম হলে অন্তত জীবনে একবার হলেও এ নামাজ পড়বেন। এ নামাজ দ্বারা জীবনের ছোট, বড়, স্বেচ্ছায়, অনিচ্ছায়, নতুন, পুরনো, গোপন, প্রকাশ্য সব রকম গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (হে চাচা!) আপনি ৪ রাকাআত নামাজ পড়বেন এবং প্রত্যেক রাকাআতে সুরা ফাতেহা পাঠ করবেন এবং যে কোনো একটি সুরা মেলাবেন। (অর্থাৎ প্রত্যেক রাকাআতে এ তাসবিহটি ৭৫ বার করে আদায় করতে হবে। তারপর নামাজের নিয়মটি বলে দেন।)’ (মূল ইবারতের ভাবানুবাদ করা হয়েছে।)
(সূত্র : আবু দাউদ, হাদিস : ১২৯৭, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৭, সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস : ১২১৬, সুনানে বায়হাকি কুবরা, হাদিস : ৪৬৯৫, হাদিস সহীহ, আলবানী,ইবনে হজর সহ অনেক এ হাসান বলেছেন।)
সালাতুত তাসবিহ পড়ার নিয়ম:
চার রাকাআত নামাজের প্রত্যেক রাকাআতে (سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) অর্থাৎ সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার-এ তাসবিহটি ৭৫ বার পড়তে হয়। একই নিয়মে ৪ রাকাআতে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পড়ার মাধ্যমে তা আদায় করতে হয়। কখন কতবার এই তাসবীহটি পড়তে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বলছি।
- নামাজে দাঁড়িয়ে সুরা ফাতেহা পড়ার আগে এ তাসবিহ (سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) ১৫ বার পড়ুন।
- সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা মিলানোর পর রুকুতে যাবার আগে এ তাসবিহ ১০ বার পড়ুন।
- রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ (سُبْحَانَ رَبِّىَ الْعَظِيْم) পড়ার পর এ তাসবিহ ১০ বার পড়ুন।
- রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় এ তাসবিহ ১০ বার পড়ুন।
- সেজদায় গিয়ে সেজদার তাসবিহ (سُبْحَانَ رَبِّىَ الْأَعْلَى) পড়ার পর সেজদাবস্থায় এ তাসবিহ ১০ বার পড়ুন।
- দুই সেজদার মাঝে বসাবস্থায় এ তাসবিহ ১০ বার পড়ুন।
- দ্বিতীয় সেজদায় গিয়ে সেজদার তাসবিহ পড়ার পর আবার সেজদাবস্থায় এ তাসবিহ ১০ বার পড়ুন।
এভাবে দ্বিতীয় রাকাআতে দাঁড়িয়ে প্রথম রাকাআতের মতো করে উপরোক্ত স্থানগুলোতে উল্লেখিত সংখ্যায় তাসবিহ পাঠ করে চার রাকাআত নামাজ আদায় করুন।
মনে রাখতে হবে, তাসবিহ পড়ার সময় যদি কোনো স্থানে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম তাসবিহ পড়া হয় তবে, পরবর্তী যে রোকনে তা স্মরণ হবে সেখানেই তা পড়ে নিলেই হবে। আর কোনো কারণে যদি এ নামাজে সাহু সেজদার প্রয়োজন হয় তবে এ সেজদায় কিংবা সেজদার মাঝখানে বসাবস্থায় এ তাসবিহ পড়তে হবে না।
তাসবিহ পড়ার ক্ষেত্রে দানাদার তসবিহ হাতে গণনা করা মাকরূহ বা অনুচিত। আঙ্গুলের করগুলোতে গণনা করা যাবে না।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রমজান মাসে সর্বাধিক তাসবিহ সম্বলিত সালাতুত তাসবিহ নামাজ পড়ে উল্লেখিত ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।