সময়টা ৩০শে সেপ্টেম্বর, ১২০৭ সাল। আনাতোলিয়া উপদ্বীপের বালখ (বর্তমান আফগানিস্তান) শহরের ছোট্ট গ্রাম সুলতানুল উলামা-এর বাসিন্দা বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ এবং মুইমিনা খাতুনের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে শিশু। বাহাউদ্দিন সন্তানের নাম রাখেন জালাল উদ্দিন।
কে জানতো আনাতোলিয়ার এই শিশুটি একসময় পুরো পৃথিবী জুড়ে যুগের পর যুগ ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিবে। হয়ে উঠবেন বিখ্যাত কবি, সাধক, আইনজ্ঞ, মাওলানা ও সুফী। মৃত্যু সাতশো বছর পরে আমেরিকায় তাঁর নামে পঞ্চাশটার বেশি ক্লাব তৈরি হবে, ইন্টারনেটে শত শত কাব্য প্রেমিক তাঁর বই পাঠ করার জন্য ‘Chat Club’ -এ এসে প্রতি সকাল সন্ধ্যায় মিলিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি’ কিংবা ‘বেস্ট সেলিং পয়েট’ উপাধীতে ভূষিত হবেন।
হ্যাঁ, বলছিলাম তের শতকের বিখ্যাত উলামা এবং আইনজ্ঞের ঘরে জন্ম নেয়া আমাদের সবার প্রিয় মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির কথা। আজ আমরা এই বিখ্যাত ব্যক্তির গল্প শুনবো। যার উক্তি শুনলে, কবিতা পড়লে আমাদের হৃদয়ে দাগ কাটে, যার কথায় আমরা জীবন বদলে ফেলার প্রেরণা পাই, যার কবিতায় শেখায় নতুন করে ভালোবাসার সংজ্ঞা, খুঁজে পাই স্রষ্ট্রার প্রতি অগাদ ভালোবাসার রসদ।
বাবা বড় কাজী (আইনজ্ঞ), মা খোয়ারিজমী রাজবংশের বংশধর হওয়ার সুবাদে শৈশব থেকেই রুমি সমাজের উঁচু পর্যায়ের জ্ঞানীগুণীদের সাহচর্য পেয়ে ইসলামি শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে গভীরভাবে জ্ঞান অর্জন করার পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠার সুযোগ পান।
কৈশোর বয়সে রুমি কেমন প্রতিভার অধিকারী ছিলেন, তা আমরা পারস্যের বিখ্যাত আধ্যাত্মিক কবি আত্তার কিশোর রুমিকে দেখে যে মন্তব্য করেন তা শুনলেই অনুমান করতে পারবো। রুমির বয়স তখন ১১ বছর, বালখ শহরের রাজার সাথে এক বিবাদের জের ধরে বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ তার পরিবার ও কয়েকশ অনুসারী নিয়ে মধপ্রাচ্যে হিজরতের জন্য বের হয়ে যান। আর এই হিজরত চলাকালেই রুমির সাথে সাক্ষাৎ ঘটতে থাকে সে সময়ের বিখ্যাত সব মনিষীদের।
১৮ বছর বয়সে পরিবারের সাথে রুমি মক্কা যাওয়ার পথে নিশাপুরে দেখা হয় কবি আত্তারের সাথে। তিনি রুমিকে তার বাবার পেছনে হাঁটতে দেখে বলে ওঠেন,“একটি হ্রদের পেছনে একটি সমুদ্র যাচ্ছে”। তিনি রুমিকে ইহজগতের আত্মার উপর লেখা বই ‘আসারনামা’ উপহার দেন। যা রুমির কিশোর বয়সে গভীর প্রভাব ফেলে এবং তিনি মানব রহস্যের উপর আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। হিজরতে থাকা অবস্থায় ১২২৫ সালে রুমি গওহর খাতুনকে বিয়ে করেন। তার মৃতুর পর বিয়ে করেন এক বিধবা মহিলাকে, দুই সংসার মিলে রুমি পাঁচ সন্তানের জনক ছিলেন।
১২২৮ সাল। আনাতোলিয়ার শাসক আলাউদ্দিন কায়কোবাদ, বাহাউদ্দিন এবং তার পরিবারকে কোনিয়ায় আসতে দাওয়াত করেন। বাহাউদ্দিন কোনিয়ায় এসে একটি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিছুদিন পর তিনি মারা গেলে মাত্র ২৫ বছর বয়সে রুমি উত্তরাধিকার সূত্রে তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং ধীরে ধীরে তিনি নিজ যোগ্যতায় সেখানকার প্রধান মৌলভী হয়ে ওঠেন।
শিক্ষক থাকা অবস্থাতেই রুমি পিতা বাহাউদ্দিনের এক ছাত্র সৈয়দ বুরহান উদ্দিন মোহাক্কিকি তীরমিযির কাছে টানা নয় বছর বিভিন্ন ইসলামি শরীয়া এবং সূফীবাদের শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং একসময় তিনি কোনিয়ার মসজিদের প্রধান বিচারক হয়ে ওঠেন এবং মানুষকে নৈতিক শিক্ষা দিতে থাকেন। এই সময়কালে রুমি দামেস্ক ভ্রমণ করেন এবং বলা হয়ে থাকে তিনি সেখানে চার বছর অতিবাহিত করেন।
সমাজের উঁচুস্তরের মানুষ হওয়ার পরও তিনি সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সাথে মেলামেশা করতেন। আর এভাবেই ১২৪৪ সালের ১৫ই নভেম্বর তার সাথে পরিচয় হয়ে যায় একজন চালচুলোহীন ভবঘুরে সাধু, দরবেশ শামস তাবরিজি এর সাথে। মাওলানা রুমী একজন ধর্মীয় গুরু, মৌলভী, সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষক এবং আইনজ্ঞ থেকে সুফী, দরবেশ, সাধু ও কবি হয়ে উঠার পেছনে এই শামসের ভূমিকা অপরিসীম।
শামস তাবরিজি দেখতে ভবঘুরে হলেও তিনি ছিলেন উচ্চাঙ্গের জ্ঞানী ও সাধক। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সর্বত্র ভ্রমণ করে কি যেন খুঁজছেন এবং বলছেন “কে আমার সঙ্গ সহ্য করিবে”। একটি কন্ঠ তাকে বলিল, “বিনিময়ে তুমি কি দিবে?” শামস উত্তর দিলেন, “আমার শির!” কন্ঠটি আবার বলল, “তাহলে তুমি যাকে খুঁজছ সে কোনিয়ার জালাল উদ্দিন”। এভাবে মাওলানা রুমি, শামসের সান্নিধ্য এসে তাকে বন্ধু ও উস্তাদ হিসেবে গ্রহণ করেন, পরে অবশ্য তাঁর সাথে সৎ মেয়েকে বিয়ে দেন।
১২৪৮ সালের ৫ ডিসেম্বরের রাত। রুমি এবং শামস কথা বলছিলেন, এমন সময় কেউ একজন শামসকে পিছনের দরজায় ডাকে। তিনি বের হয়ে যান এবং এরপর আর কোথাও কখনো তাকে দেখা যায়নি। কথিত আছে যে, রুমির পুত্র আলাউদ্দিনের মৌনসম্মতিতে শামসকে হত্যা করা হয়, কারণ সে এই পাগলাটে শামসের সাথে নিজের বোনকে বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না।
শামসকে হারানোর এই শোকই রুমির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ টার্নিংপয়েন্ট। তাঁর কাব্যসাধনার সূচনা ঘটে এই আঘাতের পর থেকেই। নিজের প্রিয় শিক্ষক এবং বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা তাকে করে তোলে প্রেমের ও বন্ধুত্বের কবি। তিনি লেখেন,
তুমি চলে গেলে আমার চোখ দিয়ে রক্ত বাহিত হলো।
আমি কেঁদে কেঁদে রক্তের নদী বহালাম।
দুঃখগুলো শাখা-প্রশাখা বেড়ে বড় হলো, দুঃখের জন্ম হলো।
তুমি চলে গেলে, এখন আমি কীভাবে কাঁদবো?
শুধু তুমি চলে গেছো তা-ই নয়, তোমার সাথে সাথে তো আমার চোখও চলে গেছে।
চোখ ছাড়া এখন আমি কীভাবে কাঁদবো প্রিয়!”
এরপর থেকে রুমি অনায়সে গজল রচনা করতে শুরু করলেন এবং সেগুলো “দেওয়ান-ই কবির” বা দেওয়ান শামস তাবরিজীতে সংগৃহীত করা হয়। রুমির সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ হচ্ছে “মসনবী”। এই মসনবী লেখার পেছনে আছে আরেক কাহিনী। রুমির সহযোগী এবং প্রিয় ছাত্র হুসাম-এ চালাবি সবসময় রুমির সাথে ছায়ার মতো থাকতেন।
রুমি তাঁর ছাত্রকে নিয়ে একদিন কোনিয়ার বাইরে একটি আঙুরক্ষেতে ভ্রমণে আসেন। তখন হুসাম, রুমিকে একটি কথা বলেন, যা রুমিকে চম্বুকের মতো আকর্ষণ করে, হুসাম বলেন- “যদি আপনি একটি বই লিখেন যেমন সানাই এর “এলাহিনামা” বা কবি আত্তার এর “মাতিক উত-তাইর” এর মত, যেটি অনেকের সঙ্গ দেবে। তারা আপনার কাজ থেকে হৃদয়পূর্ণ করবে এবং সংগীত রচনা করবে, এটির মাঝে মানুষ আপনাকে খুঁজে পাবে”। রুমি মুচকি হাসলেন এবং এক টুকরো কাগজ বের করে তার “মসনবী” এর প্রথম আঠারো লাইন লিখে ফেললেন,
বাঁশের বাঁশি যখন বাজে, তখন তোমরা মন দিয়া শোন, সে কী বলে,
সে তাহার বিরহ বেদনায় অনুতপ্ত হইয়া ক্রন্দন করিতেছে…….
হুসাম রুমিকে মিনতি করতে লাগলেন আরো লিখার জন্য। রুমি তার পরের বারটি বছর আনাতোলিয়ায় তার সেরা কাজ “মসনবী” এর ছয়টি খন্ডের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। ১২৭৩ সালের ডিসেম্বরে রুমি অসুস্থবোধ করতে লাগলেন। তিনি তার নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করে একটি গজল রচনা করেন, যা তাঁর মৃত্যুর পর অনেক জনপ্রিয় হয়, যার শুরু হয় এভাবে,
কিভাবে জানব কোন ধরণের রাজা আমার মধ্যে আছে আমার সহচর হিসাবে?
আমার উজ্জ্বল মুখে দৃষ্টি দিও না আমার বদ্ধ পা’গুলোর জন্য।
১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩ সালে রুমি কোনিয়ায় মারা যান। তাকে তার পিতার কাছে সমাহিত করা হয় এবং যেটির নাম, “ইয়াসিল তুর্ব” বা সবুজ সমাধি, قبه الخضراء; যা বর্তমানে মাওলানা মিউজিয়াম হিসেবে পরিচিত, তার সমাধিফলকে লেখা আছে,।
“যখন আমি মৃত, পৃথিবীতে আমার সমাধি না খুঁজে, আমাকে মানুষের হৃদয়ে খুঁজে নাও”।
তাঁর জানাযায় সকল ধর্মের মানুষজন উপস্থিত হয়েছিলো। এই দিকে জর্জিয়ার রাণী গুরসু খাতুন ছিলেন রুমির উৎসাহদাতা এবং কাছের বন্ধু। তিনি কোনিয়াতে রুমির সমাধি ও মিউজিয়াম নির্মানে তহবিল প্রদান করেন।
এই অধমের সুযোগ হয়েছিলো, প্রিয় মানুষটির সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়ার। তাঁর সমাধীর পাশে তৈরি করা হয়েছে মিউজিয়াম, মসজিদ, সেমা নৃত্যশালা, বিদ্যালয়, বিখ্যাত মৌলভী ব্যক্তিদের কবর ও দরবেশদের থাকার জায়গা। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে আসে। তুরস্ক সরকার খুব সুন্দরভাবে মাওলানা রুমির ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে শুরু করে অনেক কিছু এই মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করেছেন। প্রতি শনিবার মাওলানা রুমির লেখা কাসিদাগুলো সেমা নৃত্যের সাথে পরিবেশন করা হয়।
নানান কারণে কেউ কেউ রুমির ধর্মচর্চা ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। হ্যাঁ, সুফী ধারা নিয়ে হয়তো কিছু কথা থাকতে পারে। তবে রুমির বহু কবিতা সাক্ষ্য দেয় মাওলানা রুমি একজন ধর্মভীরু, আল্লাহ ও কোরআন প্রেমিক মানুষ ছিলেন। রুমির অনেক কবিতায় সুপারিশ করে বাহ্যিক ধর্মীয় রীতি এবং কোরাআনকে প্রধান হিসেবে স্থান দেয়ার গুরুত্বকে। যেমন তিনি লিখেন,
আল্লাহর কোরআনের কাছে যাও, তাতে আশ্রয় নাও
সেখানে নবীর আত্মার সাথে মিশো
কিতাবটি বহন করে নবীর বিভিন্ন অবস্থার কথা
সমুদ্রের ন্যায় তাঁর পবিত্র মহিমা প্রকাশ করো।
রুমি আরো বলেন,
যতক্ষণ পর্যন্ত আমার প্রাণ আছে আমি কোরআনের দাস।
আমি মোহাম্মদের রাস্তার ধূলিকণা, নির্বাচিত ব্যক্তি।
যদি কেউ আমার বলা বাণী ছাড়া অন্য কিছু আমার নামে চালায়,
আমি তাকে ত্যাগ করব, সেসকল শব্দের প্রতি ক্ষুব্দ হয়ে।
রুমি আরও বলেন,
আমি আমার দুই চোখকে ‘বিরত’ রেখেছি
এই পৃথিবী আর আখিরাতের অভিলাষ থেকে
যা আমি মুহাম্মদ থেকে শিখেছি।
মসনবীর প্রথম পৃষ্ঠায় রুমি বলেন,
“হাযা কিতাবুল- মসনবী ওয়া হুয়া উসুলু উসুলিদ-দ্বীন ওয়া কাশুশাফুল –কোরআন”
“এই হচ্ছে মসনবী, এবং এটি (ইসলাম) ধর্মের মূলের মূল এবং এটি কোরআনের বর্ণনাকারী”।
রুমি দেওয়ান-এ বলেন,
“সুফী হচ্ছে মোহাম্মদকে আবু বকর এর মত আকড়ে ধরা”।
মসবনীর টিকায় রুমির একটা কথা আমাকে খুব বেশি ভীত করে তুলে, তিনি বলেন,
“সে ব্যক্তি সবচেয়ে বড় প্রতারক, যে সমাজের সবার নিকট ভালো”। কারণ আপনি আমি সমাজে ন্যায়ের কথা, ইনসাফের কথা, ইসলামের কথা বললে আমাদের বিরোধিতা থাকবেই। কেবল মুনাফিকরাই দুই পক্ষের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখে।
তার কবিতা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন শ্রেণীতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। রুমির সাহিত্যকর্ম বেশিরভাগই ফার্সি ভাষায় রচিত হলেও তিনি অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি এবং গ্রীক ভাষায়ও রচনা করেছেন।
ইরান সাম্রাজ্য এবং বিশ্বের ফার্সি ভাষার লোকেরা এখনও তার লেখাগুলো মূল ভাষায় ব্যাপকভাবে পড়ে থাকে, এমনকি আমাদের দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোতে এখনো মসনবী শরীফ সরাসরি ফার্সী থেকে পড়ানো হয়।
রুমির কিতাবের অনুবাদসমূহও খুব জনপ্রিয়, বিশেষ করে তুরস্ক, আজারবাইজান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ায়। তার কবিতা ফার্সি সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে, শুধু তাই নয় তুর্কি সাহিত্য, উসমানীয় তুর্কি সাহিত্য, আজারবাইজান সাহিত্য, পাঞ্জাবের কবিতা, হিন্দী সাহিত্য, উর্দু সাহিত্যকেও অনেক প্রভাবিত করেছে। এছাড়াও অন্যান্য ভাষার সাহিত্য যেমন তুর্কীয়, ইরানী, ইন্দো-আর্য, চাগাতাই, পাশতো এবং বাংলা সাহিত্য ও বাংলাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।
রুমি তাঁর বিভিন্ন বইয়ে কোরআনের কাব্যিক অনুবাদ করেছেন। রুমির সময়কার একজন মহান জীবিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন হাজি হাজরী, তিনি রুমির দেওয়ান এবং মসনবীতে অপ্রকাশিত প্রায় ৬০০০ এর মত পদ্য দেখান, যেগুলো কোরআনের আয়াতের সরাসরি ফার্সী কবিতাতে অনুবাদ।
মাওলানা রুমি গল্প এক লেখায় শেষ করা আসলেই কষ্টসাধ্য। তাই লেখার শিরোনাম দিয়েছি, মাওলানা রুমি: যার গল্পের শুরু আছে, শেষ নেই। তাই আজ ইচ্ছে করেই লেখা ছোট করিনি। যদিও ইতিমধ্যে আপনাদের ধৈর্য্যচুতি হয়ে গেছে, আর কষ্ট দিতে চাই না। শেষ করি মাওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী মৌলভী রুমির কয়েকটি বাণী দিয়ে, এই যে এতক্ষণ ধরে রুমির জীবনের গল্প শুনলেন, এই নিয়ে রুমি কি বলেন শুনেন,
“অন্যের জীবনের গল্প শুনে সন্তুষ্ট হয়ো না, নিজের পথ তৈরি করো, নিজের জীবন সাজাও”।
নিজের জীবন সাজাতে হলে কি করতে হবে? এই নিয়ে রুমি বলেন,
“নতুন কিছু তৈরি করো, নতুন কিছু বলো। তাহলে পৃথিবীটাও হবে নতুন”।
নতুন কিছু করতে কোথায় খোঁজ করবেন? তাও রুমি বলে দিচ্ছে,
“তুমি এ ব্রহ্মাণ্ডে গুপ্তধনের খোঁজ করছো, কিন্তু প্রকৃত গুপ্তধনতো তুমি নিজেই”।
আমরা সবাই সুন্দর দিনের প্রত্যাশা করি, তা কি আমাদের কাছে এসে ধরা দিবে? রুমি বলেন,
“সুন্দর ও উত্তম দিন তোমার কাছে আসবেনা, বরং তোমারই এমন দিনের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত”।
সুন্দরের সন্ধানে বের হলে দুঃখ, কষ্ট আসবেই, রুমির ভাষায় শুনুন,
“ঘষা খেতে যদি ভয় পাও, তাহলে চকচক করবে কীভাবে?”
ঘষা খাবেন, আঘাত পাবেন, বাধা আসবে, কিন্তু তখন আপনার করণীয় কী? তাও রুমি বলে দিচ্ছে,
“শব্দ দিয়ে প্রতিবাদ করো, কণ্ঠ উঁচু করে নয়। মনে রাখবে ফুল ফোটে যত্নে, বজ্রপাতে নয়”।
জীবনে বড় হতে হলে আমাদেরকে কত কিছুই না হারাতে হবে, আর তাই রুমি আমাদের সান্ত্বনা দিচ্ছে,
“যা কিছু হারিয়েছো তার জন্য দুঃখ করো না। তুমি তা আবার ফিরে পাবে, আরেকভাবে, আরেক রূপে”।
নাহ, আজ আর নয়, এভাবে বলতে গেলে সারাদিন বলা যাবে, কিন্তু মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমিকে পড়া শেষ হবে না। আজ এখানেই ক্ষ্যান্ত দিলাম।
তথ্যসূত্র:
১. জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি-এর সাহিত্যকর্ম ও রচনাবলী (ইংরেজি)
২. মসনবী, (নির্বাচিত ইংরেজি সংস্করণ)
৩. Rumi and Self Discovery by Ibrahim Gamard