কিছু পাপ আছে যা বান্দার মাঝে উপস্থিত থাকলে তার দুয়া কবুল হওয়ার জন্য বাঁধা হয়ে যায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে, এই পাপগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, যদি কেউ চায় তার দুয়া কবুল করা হোক।
দো’আ কবুলের অন্তরায় সমূহ:
১. হারাম খাদ্য, হারাম পানীয় ও হারাম বস্ত্র:
কেউ হারাম কোনো খাবার খেলে বা কারো খাবার হারাম টাকায় কেনা হলে, পোশাক হারাম বা হারাম টাকায় কেনা হলে আল্লাহ ঐ অবস্থায় তার দুয়া কবুল করেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হে মানব সকল! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। তিনি এ ব্যাপারে মুমিনদের সে নির্দেশই দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসুলদেরকে। তিনি বলেছেন, “হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর, তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত”। এবং আল্লাহ (মুমিনদেরকে উদ্দেশ্য) করে বলেছেন, “হে মুমিনগণ! তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা হতে আহার কর।”
এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা বললেন, যে দীর্ঘ সফর করে মাথার চুলগুলোকে এলোমেলো করেছে এবং পদযুগল ধুলায় ধুসরিত করেছে অতঃপর আকাশের দিকে হাত তুলে দুআ করে, হে প্রভু! হে প্রভু! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার শরীর গঠিত হয়েছে হারাম দিয়ে, কিভাবে তার দুআ কবুল করা হবে?” সহীহ মুসলিম।
২. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ বর্জন করা:
মানুষকে ভালো কাজের দিকে আহবান না করলে বা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে না বললে অর্থাৎ দাওয়াত ও তাবলীগে অবহেলা করলে তার দুয়া আল্লাহ কবুল করেন না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের প্রতি শাস্তি নাযিল করবেন অতঃপর তোমরা দুআ করবে কিন্তু তিনি তা কবুল করবেন না।” তিরমিজী, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
৩. দুআ কবুলে তাড়াহুড়ো করা:
অনেকে কিছুদিন দুয়া করার পরে আল্লাহর বিশেষ কোনো হেকমত অনুযায়ী দুয়া কবুল হতে দেরী হলে তাড়াহুড়া করে বা হতাশ হয়ে পড়ে। অভিযোগ করা শুরু করে দেয়, কই এতো দুয়া করলাম, আল্লাহ দুয় কবুল করেন না…আল্লাহ মনে হয় আমাদের কথা শুনেন না (নাউযুবিল্লাহ নাফরমানী ও কুফুরী কথা!)
এইসব কথা বলার শাস্তিস্বরূপ সত্যিই আল্লাহ তার দুয়া আর কবুল করেন না। এইজন্য ধৈর্য ধরে দুয়া করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে জাকারিয়া (আঃ) অনেক অনেক বছর দুয়া করার পরে তাঁর দুয়া কবুল হয়েছিলো, তিনি পুত্র সন্তান পেয়েছিলেন একেবারে বৃদ্ধ বয়সে। তিনি ছিলেন আল্লাহর নবী, আর আমরা নিশ্চয়ই তাঁর থেকে উত্তম না (নাউযুবিল্লাহ)। এইজন্য অবস্থা যাইহোক, ধৈর্য ধরতে হবে ও আল্লাহ কাছে আশা রেখে দুয়া করে যেতে হবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “বান্দার দুআ সর্বদা কবুল করা হয় যদি সে দুআতে পাপ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের ছিন্ন করার কথা না বলে এবং তাড়াহুড়ো না করে। জিজ্ঞেস করা হল হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াহুড়ো বলতে কি বুঝায়? তিনি বললেন, দুআতে তাড়াহুড়া হল, প্রার্থনাকারী বলে আমিতো দুআ করলাম কিন্তু কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয় ও ক্লান্ত হয়ে দুআ করা ছেড়ে দেয়। সহীহ মুসলিম।
দুআয় এ ধরনের তাড়াহুড়া করা আল্লাহ অপছন্দ করেন। যেমন তিনি বলেছেন, “আর মানুষ অকল্যাণের দুআ করে, যেভাবে সে কল্যাণের দুআ করে, তবে মানুষ তো অতিমাত্রায় ত্বরা প্রিয়। (আল ইসরাঃ ১১)
তবে দুআর ভিতরে এ কথা বলা নিষেধ নয় যে, হে আল্লাহ এটা আমাকে খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও। দুআতে তাড়াহুড়া করার অর্থ হল দুআ করে কেন এখনো দুআ কবুল হলো না এমন ভাবনা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে দুআ করা ছেড়ে দেয়া।
৪. অন্তরের উদাসীনতা:
মুখে দুআ করে আর যদি দুআর প্রতি অন্তর উদাসীন থাকে তাহলে দুআ কবুল হয় না। অর্থাৎ যে দুয়া করে সে শুধু মুখে মুখে দুয়া করে, কিন্তু দুয়া কবুল হবে এমন দৃঢ় আশা, বিশ্বাস বা আল্লাহর প্রতি আস্থা নাই (নাউযুবিল্লাহ)!
যেমন হাদীসে এসেছেঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রার্থনা কবুল হবে এ দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তোমরা দুআ করবে। এবং জেনে রাখ আল্লাহ কোনো উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা কবুল করেন না।” তিরমিজী, হাকেম, হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ সহীহাহঃ ৫৯৪।
অতএব দুআ যা কিছু বলা হবে তার প্রতি অন্তরের একনিষ্ঠ ভাব থাকতে হবে। মুখে যা বলা হল, মন তার কিছুই বুঝল না। আবার অন্তর বুঝল ঠিকই, কিন্তু তার কথার প্রতি একাগ্রতা ছিল না, মনে ছিল অন্য চিন্তা-ভাবনা। তাহলে এ দুআকে বলা হবে উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা। যা আল্লাহ কবুল করেন না।
৫. ব্যক্তিত্বের এক বিশেষ ধরনের দুর্বলতা:
কিছু চারিত্রিক ত্রুটির কারণেও দুয়া কবুল করা হয়না। যেমন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন ব্যক্তি এমন যে তাদের দুআ কবুল করা হয় না।
এক. যে ব্যক্তির অধীনে দুশ্চরিত্রা নারী আছে কিন্তু সে তাকে তালাক দেয় না।
দুই. যে ব্যক্তি অন্য লোকের কাছে তার পাওনা আছে কিন্তু সে তার স্বাক্ষী রাখেনি।
তিন. যে ব্যক্তি নির্বোধ ব্যক্তিকে সম্পদ দিয়ে দেয় অথচ আল্লাহ বলেন, “তোমরা নির্বোধদেরকে তোমাদের সম্পদ দিও না।” হাকেম ও তাহাবী, হাদীস সহীহ, সহীহুল জামিঃ ৩০৭৫।