১.
রাইফ প্রতিদিন রাতে মুভি দেখে, সেই মুভিটার লিংকও ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করে। হল লাইফে ফজর পর ফেসবুক স্ক্রল করতে একদিনও এমন হয়নি, রাইফের ফেসবুক ওয়াল থেকে মুভি’র দাওয়াত আসেনি। সে কেমন মুভি দেখত আমার কখনো জানার সুযোগ হয়নি।
-মুভি দেখা বা না দেখা আলোচ্য বিষয় নয় আমরা সেদিকে যাবোও না। আমরা কথা বলব টাইমলাইনে শেয়ার করা নিয়ে, রাইফের মুভি দেখার সংবাদ ফেসবুকে প্রচার করার ফলে সে কয়েকটা জায়গায় আটকে যাচ্ছে। সেই পয়েন্টগুলো খেয়াল করুন-
প্রথম ধাপ: “নিশ্চয় যারা এটা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না। -(সূরা নুর ১৯)
দ্বিতীয় ধাপ: “যে লোক বিভ্রান্তির দিকে ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকা হবে না।” -(সহীহ মুসলিম)
তৃতীয় ধাপ: মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামাহ সময়। হায়াতের চেয়ে কম অনিশ্চয়তার কোনো কিছু মানুষকে দেয়া হয়নি। রাইফ কিন্তু সেই হায়াতকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে, যার ফলে চিরস্থায়ী ক্ষতিকেই ক্রয় করে নিচ্ছে। ‘সময়ের কসম নিশ্চয়ই সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, শুধু তারা নয় যারা ঈমান এনেছেন, সৎকাজ করেছেন, একে অপরকে সত্য ও সবরের উপদেশ দিয়েছেন/দিয়ে থাকেন/দিচ্ছেন।” -(সূরা আছর)
২.
নাভিদ নেওয়াজ। বুয়েটে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। বাবা ড্রাগ ইন্ডাস্ট্রি’তে জব করেন। মা গৃহিনী। ছোটবেলা থেকেই অসাধারণ মেধাবী ও বিনয়ী। নাভিদের খুব বাগান করার সখ। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর ফ্রি সময়ে অনেকগুলো ফুল ও ঔষধি গাছ লাগিয়েছিল। কিন্তু কোচিংয়ের জন্য যখন ঢাকা চলে যাবে তখন গাছের কি হবে? চট করে বুদ্ধি আসলো আপুকে দায়িত্ব দিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু আপুর এসবে ভাল লাগেনা। সে সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে বন্ধুদের সাথে চ্যাট করে। এখন কিভাবে কনভিন্স করা যায়!
হঠাৎ মনে পড়লো কোর’আন শিখানোর সময় হুজুর একটি হাদীস বলেছিলেন, আপুকে চিঠি দিয়ে হাদীসটি পাঠিয়ে দিবো আর চিঠিতে তার প্রিয় একটি চকোলেট ঢুকিয়ে রাখবো, যে চিন্তা সেই কাজ। খাতা কলম নিয়ে লেখতে বসলো- আপু তোর মনে আছে, হুজুর যখন আমাদের বাসায় কোর’আন পড়াতে আসতেন, তখন আমাদের বিভিন্ন হাদীস শুনিয়ে যেতেন। আমার গাছ পছন্দ তুই জানিস। তাই একটি হাদীস আমি নোট করে রেখেছিলাম। “যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তবে তা উৎপাদনকারীর জন্য সদকা (দান) স্বরূপ গণ্য হবে।” -(সহীহ বুখারী)
আমি তো আগামীকালই চলে যাচ্ছি, তুই আমার গাছগুলি দেখে রাখিস, কেমন?
– ইতি
– নাভিদ
৩.
মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের সর্বশেষ নাসিহাহগুলোর একটি ছিল “উপস্থিত’রা অনুপস্থিত’দের” কাছে আমার বাণী পৌঁছে দিবেন। সূরা আসরে যে সৎকাজের কথা বলা হয়েছে সূরা ফুসসিলাতে নজর দিলে তার ব্যাখ্যা পাই, ‘তার কথার চেয়ে আর কার কথা সর্বোত্তম যে মানুষকে আল্লাহতালা’র পথে ডাকে আর নিজে ভাল কাজ করে’ (৪১:৩৩) সূরা আছরের বাকী অংশেও সত্যের উপদেশের নির্দেশনা এসেছে। দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ নাসিহাহ বা কল্যাণকামনা করা হিসেবে সহীহ মুসলিমে হাদীস গ্রহণ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম বলেছেনঃ “যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না।” -(সহীহ মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেনঃ ‘একটি আয়াত হলেও তা আমার পক্ষ থেকে প্রচার করো।’ তবে হাদীসের শেষাংশে সতর্কও করা হয়েছে, মিথ্যা প্রচারকারী বা জাল হাদীস বর্ণনাকারীদের জন্য জাহান্নাম। -(সহীহ বুখারী, জামে আত তিরমিজী)
৪.
যেদিন সিংগায় ফুঁ দেয়া হবে। আপন আত্মীয়স্বজন দূরে চলে যাবে। মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে। হাত, পা আমাদের গুনাহের সাক্ষ্য দিবে। মাটি তার ভিতরের সকল কিছু বের করে দিবে। আসমান ফেটে যাবে। সমুদ্র উত্তাল হবে। অর্ধহাত উপরে সুর্য থাকবে। মগজ গলে পায়ে গড়িয়ে পড়বে। ঘামে মানুষ সাতার কাটতে থাকবে। চিৎকার দিয়ে বিচারের ফয়সালা চাইবে। সেদিন- “খুব ছোট ভাল আমল মানুষ দেখতে পারবে, আবার খুব ছোট, সরিষা’র দানা পরিমাণ খারাপ কাজও দেখতে পারবে।” (সূরা যিলযাল ৭-৮)
জ্ঞানী লোকমান তাঁর ছেলেকে উপদেশ দিয়ে বললেন: “হে আমার প্রিয় বৎস, নিশ্চয় তা (পাপ-পুণ্য) যদি সরিষা দানার পরিমাণ হয়, অতঃপর তা থাকে পাথরের মধ্যে কিংবা আসমানসমূহে বা যমীনের মধ্যে, আল্লাহ তাও নিয়ে আসবেন; নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সর্বজ্ঞ’।” -( সূরা লোকমান ১৬)।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাসিহাহটিই বাকী রয়ে গেল, সব ভুলে গেলেও এটা ভুলা যাবেনা। কারণ কিয়ামাহ অব্ধি এর ফলাফল বৃদ্ধি হতে থাকবে। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না- ১. সদকায়ে জারিয়া (কাউকে ইসলামের জ্ঞান দেয়া, ইসলামী আমল শিখানো, প্রতিষ্ঠান বা মসজিদ বানানো, পাঠাগার বানানো ইত্যাদি) ২. এমন জ্ঞান (ইলম)- যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দোয়া করে। –(সহিহ মুসলিম : ৪৩১০)
আসুন সুন্দরকে পৌঁছে দেই, না হয় অসুন্দর মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। পৃথিবীতে যত অকল্যাণ সব কিছুর মূলে ভাল মানুষদের নিরবতা দায়ী।