তিনি সাঈদ আহমাদ পালনপুরী নামে পরিচিত। দারুল উলূম দেওবন্দের শায়খুল হাদিস ও অন্যান্য পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পড়ালেখাই তাঁর একমাত্র অধ্যবসায় ছিল। প্রচুর পরিশ্রম করতেন। পাশাপাশি যোগ্য উস্তাদদের সংশ্রব পেয়েছেন। তাঁদের হাত ধরে বীজ হতে অঙ্কুরিত হয়ে সূর্য্যমূখী হয়ে ফুটে উঠেন। মাত্র বাইশ বছর বয়সে জ্ঞানের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় পাণ্ডিত্ব অর্জন করেন।
শায়খ পালনপুরি ভারতের গুজরাট প্রদেশের অন্তর্গত পালনপুর জেলার কালিড়াহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সঠিক জন্ম তারিখ তো জানা যায় না। অবশ্য পিতার ভাষ্যমতে ১৩৬০ হিজরী মুতাবেক ১৯৪০ ঈসায়ী, ১৯৯৭ বারকমি সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা নাম রেখেছিলেন, আহমদ; পরবর্তীতে ১৩৭৭ হিজরীতে মাজাহিরুল উলূম ভর্তির সময় তিনি ‘সাঈদ আহমদ’ হিসাবে নাম রেজিস্ট্রি করেন। তাঁর পিতার নাম, জনাব ইঊসুফ রহিমাহুল্লাহ। যিনি ১৩৯৯ হিজরির ১০ মুহাররম ইন্তেকাল করেন। দাদার নাম, আলি; সম্মানের সাথে তাঁকে ‘আলিজি’ বলা হতো। তাঁর বংশবৃত্তান্ত নিয়ে, “ইতিহাসের আয়নায় মুমিন গোত্র” নামে একটি বই তিনি রচনা করেন।
শিক্ষাদীক্ষা:
পাঁচ-ছয় বছর বয়সে পিতার নিকটেই তাঁর শিক্ষাদান শুরু হয়। কিন্তু পারিবারিক কাজের চাপে তিনি তেমন সময় দিতে পারছিলেন না। এজন্য কালিড়া গ্রামের মক্তবে তাঁকে পাঠিয়ে দেন। তিনি প্রাথমিক পাঠগ্রহণ করেন মাওলানা দাউদ চৌধুরী, মাওলানা হাবীবুল্লাহ চৌধুরী ও মাওলানা ইবরাহীম জংকি রহি. এর নিকট। যিনি এক সময় দারুল উলূম আনন্দ(গুজরাট) এ শায়খুল হাদিস ছিলেন।
মক্তব তথা প্রাথমিক পাঠ চুকানো পর তাঁকে মামা মাওলানা আবদুর রহমান রহি. এর নিকট নিয়ে আসা হয়। যিনি ‘ছাপ্পি’ নামক স্থানে বসবাস করতেন। তিনি ‘দারুল উলূম ছাপ্পি’ মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন। তিনি তাঁর মামা ও অন্যান্য উস্তাদগণের নিকট ফার্সি ভাষার প্রাথমিক জ্ঞানার্জন করেন। ছয় মাস ছাপ্পি মাদরাসায় ছিলেন। এরপর তাঁর মামা ওখানকার চাকরী ছেড়ে চলে আসেন। তিনিও মামারবাড়ি ‘জুনী সিন্ধি’তে চলে আসেন। এবং এখানেই ফার্সি ভাষার অবশিষ্ট শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
এরপর তিনি মাওলানা নজীর মিয়া পালনপুরী রহি. এর মাদরাসায় ভর্তি হন। যা পালনপুরেই অবস্থিত। দীর্ঘ চার বছর তিনি এখানে পাঠগ্রহণ করেন। আরবিভাষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক কিতাবাদি তিনি মুফতি আকবর মিয়া পালনপুরী ও মাওলানা হাশিম বুখারী রহি. এর নিকট পড়েন। মাওলানা মুহাম্মাদ হাশিম বুখারি রহি. বুখারা শহর থেকে দারুল উলূম দেওবন্দে পড়ালেখা করার জন্য এসেছিলেন। এরপর পড়ালেখার পাট চুকিয়ে হিন্দুস্তানেই থেকে যান। প্রথমে কিছুকাল পালনপুরে শিক্ষকতা করেন। এরপর ইমদাদুল উলূম ওদালি গুজরাট, জামিয়া হুসাইনিয়া রানদির ও সর্বশেষ দারুল উলূম দেওবন্দে শিক্ষকতা করেন। শেষ বয়সে তিনি মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন এবং সেখানেই ইন্তেকাল করেন। মদিনার জান্নাতুল বাকিতে তাঁর দাফন হয়।
মাজাহিরুল উলূম সাহারানপুর মাদরাসায় ভর্তি:
সময় তখন ১৩৭৭ হিজরী মুতাবেক ১৯৫৭ ঈসায়ী। শরহেজামি ক্লাস পর্যন্ত তিনি পালনপুরে পড়ালেখা করেন। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর আসেন। মাজাহিরুল উলূম সাহারানপুরে ভর্তি হয়ে তিন বছর পড়ালেখা করেন। এই সময়ে তিনি মাওলানা সিদ্দিক আহমদ রহি. এর নিকট আরবি ব্যাকরণ শাস্ত্র ও ফালসাফার অধিকাংশ পাঠগ্রহণ করেন।
যিনি আরবি ব্যাকরণ শাস্ত্র ও ফালসাফার ইমাম ছিলেন। এছাড়াও মুফতি ইয়াহইয়া সাহারানপুরী, মাওলানা আবদুল আজীজ রায়পুরী ও মাওলানা ওয়াকার বিজনূরি রহিমাহুমুল্লাহের ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন। এবং তাঁদের নিকটও এই সকল বিষয়ে কিতাবাদি পাঠ করেন।
দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি:
১৩৮০ হিজরি মুতাবেক ১৯৬০ ঈসায়িতে তিনি দেওবন্দে আসেন। হাদিস ও তাফসীর ও ফিকহ তথা ইসলামি আইনের উচ্চতর জ্ঞানার্জনের জন্য। এবং ভর্তি পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়ে ভর্তি হন। প্রথম বছর মাওলানা নাসির আহমাদ খান বুলন্দশহরি রহি. এর নিকট তাফসির বিষয়ক পাঠগ্রহণ করেন। এবং ‘তাফসীরে জালালাইন’ ও তাফসীরের মূলনীতি বিষয়ক ‘ফাওযুল কাবীর’ নামক গ্রন্থপাঠ করেন।
মাওলানা আখতার হুসাইন দেওবন্দি রহি. এর নিকট ইসলামি আইনের উচ্চতর কিতাব ‘হেদায়া’ এর প্রথম দুই খণ্ড ও অন্যান্য কিতাব পড়েন। আর তৃতীয় বছর; ১৩৮২ হিজরি মুতাবেক ১৯৬২ ঈসায়িতে দাওরায়ে হাদিস পড়েন। আর এই বছরই দারুল উলূম দেওবন্দ হিজরি তারিখ হিসাবে প্রতিষ্ঠার একশত বছর পূর্ণ করে।
দারুল উলূম দেওবন্দে তিনি যাঁদের নিকট হাদিসের পাঠগ্রহণ করেন:
ফখরুল মুহাদ্দিসিন মাওলানা ফখরুদ্দিন মুরাদাবাদি রহি. এর নিটক ‘সহীহ বুখারি’ পড়েন। আল্লামা মুহাম্মাদ ইবরাহীম বালিয়াভি রহি. এর নিকট ‘সহীহ মুসলিম’ এর মুকাদ্দিমা, কিতাবুল ইমান ও ‘সুনানে তিরমিযি’ এর প্রথম খণ্ড পড়েন। মাওলানা বশীর আহমাদ খান বুলন্দশহরি রহি. এর নিকট ‘সহীহ মুসলিম’ এর দ্বিতীয় খণ্ড পড়েন। মাওলানা ফখরুল হাসান মুরাদাবাদি রহি. এর নিকট ‘সুনানে তিরমিযি’ এর দ্বিতীয় খণ্ড, কিতাবুল ইলাল, ‘শামায়েলে তিরমিযি’ ও ‘সুনানে আবু দাউদ’ পড়েন।
মাওলানা মুহাম্মাদ জহুর দেওবন্দি রহি. এর নিকট ‘সুনানে নাসাঈ’ পড়েন। মুফতিয়ে আজম সাইয়্যেদ মাহদি হাসান শাহজাহানপুরি রহি. এর নিকট ‘শরহে মাআনিল আসার’ পড়েন। হাকিমুল ইসলাম ক্বারি মুহাম্মাদ তয়্যিব দেওবন্দি রহি. এর নিকট ‘মুয়াত্তা মালেক’ পড়েন। মাওলানা আবদুল আহাদ দেওবন্দি রহি. এর নিকট ‘মুয়াত্তা মুহাম্মাদ’ পড়েন। মাওলানা সাইয়্যিদ হাসান দেওবন্দি রহি. এর নিকট তাঁর মৃত্যুর পূর্বে ‘মিশকাত’ এর কিছু অংশ পড়েন। মাওলানা আবদুল জলীল কিরানুভি রহি. এর নিকট ‘মিশকাত’ এর প্রথম খণ্ড পড়েন। মাওলানা আসলামুল হক আজমি রহি. এর নিকট ‘মিশকাত’ এর দ্বিতীয় খণ্ড পড়েন।
ইফতা বিভাগে ভর্তি ও সহকারি মুফতি নিয়োগ:
১৩৮২ হিজরির শাওয়াল মাসে তিনি ইফতা বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদন করেন। যিলকদ মাসের প্রথম তারিখে তাঁর ভর্তির কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর মুফতি মাহদি হাসান শাহজাহানপুরি রহি. এর তত্ববধানে ফাতাওয়ার কাজ শুরু করেন। ১৩৮২ থেকে ১৩৮৩ হিজরি পর্যন্ত তিনি একাধারে ফাতাওয়ার কিতাবাদি অধ্যায়ন, অনুশীলন করতেন। আপন ছোট ভাইকে হিফজ পড়াতেন। পাশাপাশি শায়খ মাহমুদ আবদুল ওয়াহহাব মিশরি রহি. এর নিকট হিফজ ও কেরাত পড়তেন। যিনি আল আজহার ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে দারুল উলূমে উস্তাদ হিসাবে এসেছিলেন।
তিনি এসব কাজে এতটা ব্যস্ত ছিলেন; ওই রমযানে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাননি। এদিকে দারুল উলূম দেওবন্দের ইফতা বিভাগের জিম্মাদারগণ তাঁর যোগ্যতার প্রমাণ পান এবং তাঁকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে দেখেন। তাঁরা তাঁর উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য আরোও এক বছর ইফতা বিভাগের ছাত্র হিসাবে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। এবং মাত্র ছয় মাস পর তাঁকে মঈনে মুফতি তথা ফাতাওয়া বিভাগের সহকারি মুফতি হিসাবে নিয়োগ দেন। অথচ তখনও দারুল উলূম দেওবন্দে এমন কোনো পদের অস্তিত্ব ছিল না।
প্রথম শিক্ষকতা:
দারুল ইফতার পড়ালেখা শেষ করার পর তাঁকে ‘রান্দির’ নামক শহরে পাঠানো হয়। সেখানকার ‘দারুল উলূম আশরাফিয়া রান্দির’ মাদরাসায় আল্লামা ইবরাহীম বালিয়াভি রহি. খিদমতের ব্যবস্থা করে দেন। ২১ শাওয়াল ১৩৮৪ হিজরি মুতাবেক ১৯৬৫ সালে তিনি দারুল উলূম দেওবন্দ ছেড়ে পালনপুর যান। এরপর তাঁর ছোট ভাইদের সাথে নিয়ে দারুল উলূম আশরাফিয়ায় যান। ১৩৯৩ হিজরি মুতাবেক ১৯৭৪ ঈসায়ি পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।
এই দীর্ঘ নয় বছরে সেখানে কোরআন তরজমা, তাফসীরে জালালাইন, সুনানে তিরমিযি, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, মুয়াত্তাইন ছাড়াও ফিকহ-ফালসাফার কিতাবাদি পাঠদান করেন। একজন যোগ্য উস্তাদ হিসাবে পরিচিতি লাভের পাশাপাশি বিস্তর বিষয়ে লেখালেখি করেন। বিশেষত মাওলানা কাসেম নানুতবি রহি. এর রচনাবলির উপর ‘ইফাদাতে নানুতবি’ নামে একটি কিতাব লেখেন। যা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিতাব হিসাবে সর্বমহলে সমাদৃত হয়। এবং মাওলানা মুহাম্মাদ বিন তাহির বুসনি রহি. এর ‘আল মুগনি’ কিতাবের আরবি ব্যাখ্যাগ্রন্থের কাজ করেন। যার নামকরণ করেন, তাহযিবুল মুগনি হিসাবে।
দারুল উলূম দেওবন্দে শিক্ষকতা ও অন্যান্য দায়িত্ব গ্রহণ:
এই সময়ে তাঁর উস্তাদ মাওলানা মুহাম্মাদ হাশিম বুখারি রহি. একটি চিঠি পাঠান। মাওলানা হাশিম বুখারি রহি. তখন জামিয়া হুসাইনিয়া ছেড়ে দারুল উলূম দেওবন্দে চলে এসেছেন। এবং এখানেই শিক্ষকতা করতেন। চিঠিতে তিনি জানান, দারুল উলূম দেওবন্দে একজন শিক্ষকের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তিনিও যেনো নিয়োগের জন্য আবেদন করেন; এমন পরামর্শ চিঠিতে উল্লেখ করেন। তিনি মাওলানা সা’দ রশীদ আজমিরি রহি. এর নিকট এই বিষয়ে পরামর্শ করেন। তাঁর সম্মতিতে দেওবন্দে শিক্ষকতার জন্য আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেন।
কিছুদিন পর দেওবন্দের মোহতামিম ক্বারি মুহাম্মাদ তয়্যিব রহি. এর একটি চিঠি এসে পৌঁছে। ক্বারি মুহাম্মাদ তয়্যিব রহি. হলেন কাসিম নানুতবি রহি. এর নাতি। এজন্য কাসিম নানুতবি রহি. এর রচনার উপর ‘ইফাদাতে নানুতবি’ নামে যে কাজ করেছেন; এর উচ্ছাসিত প্রসংশা করেন। এবং কাসিম নানুতবি রহি. এর রচনার উপর আরো কাজ করার প্রস্তাব দেন।
১৩৯৩ হিজরি শাবান মাস মুতাবেক ১৯৭৫ ঈসায়ীতে যখন দেওবন্দের ‘মজলিশে শূরার’ বৈঠক বসে তখন আরবি বিষয় পাঠদানের জন্য একজন শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তার বিষয় উঠে আসে। মাওলানা মনজুর নোমানি রাহি. (মৃ. ১৪১৭ হি.) তাঁর নাম বৈঠকে পেশ করেন। আর এই বৈঠকেই তাঁর নিয়োগের বিষয়টা নিশ্চিত হয়। শাবান মাসেই তাঁকে বিষয়টা জানানো হয়। এবং সুনানে তিরমিযি ও শরহে মাআনিল আসার পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। রমযানে তিনি দেওবন্দের মাটিতে পা রাখেন। নতুন করে, একজন শিক্ষক হিসাবে।
১৪০২ হিজরি। দেওবন্দের প্রধান মুফতি নিজামুদ্দিন রহি. দীর্ঘ ছুটিতে চলে যান। মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহি রহি. তখন সাহারানপুর মাদরাসায় চলে গিয়েছিলেন। এছাড়াও ইফতা বিভাগের অন্যান্য মুফতিগণ দারুল উলূম ছেড়ে ভিন্নভাবে কাজ শুরু করেছিলেন। এজন্য ইফতা বিভাগের একজন দায়িত্বশীলের প্রয়োজন দেখা দেয়। তাঁর প্রথম মঈনে মুফতি হওয়া এবং ফাতাওয়ার বিষয়ে তাঁর অসাধারণ যোগ্যতা সবাই বিবেচনা করেন। এবং ইফতা বিভাগের দায়িত্ব তাঁর নিকট অর্পণ করা হয়।
১৪১৯ হিজরিতে তিনি আবেদন করেন, ‘মজলিশে তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়াত’ বিভাগের দায়িত্ব ছেড়ে দিবেন। কিন্তু তাঁর আবেদন ‘মজলিশে শূরা’ গ্রহণ করেনি। এই বিভাগের শুরু থেকে তিনি পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাঁরা তাকে প্রতি মাসে এক হাজার রুপী করে বিশেষ বেতন দিবেন বলে প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি বেতন নাকচ করে দায়িত্ব অব্যাহতভাবে পালন করে যান।
২০০৮ ঈসায়িতে তিনি দারুল উলূমের শায়খুল হাদিস ও সদরুল মুদাররিস পদ গ্রহণ করেন। এবং দীর্ঘ বারো বছর সহীহ বুখারির দরস প্রদান করেন। ১৩৮৪ হিজরি মুতাবেক ১৯৬৫ ঈসায়ি থেকে ১৪৪১ হিজরি মুতাবেক ২০২০ ঈসায়ি পর্যন্ত তিনি হাদিস পড়ান। এই ৫৫ বছরে লক্ষাধিক ছাত্র তাঁর নিকট হাদিস পাঠ করে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কাশ্মীর এশিয়া উপমহাদেশ ছাড়াও ইউরোপ থেকে ছাত্ররা দেওবন্দ আসতো। তাঁর নিকট হাদিস পাঠ করে আবারো স্বদেশে ফিরে যেতো। এসকল ছাত্রদের হিসাব কে জানে! তিনি আমাদের ‘সহীহ বুখারির’ উস্তাদ ছিলেন। ঘন্টার পর ঘন্টা একটানা হাদিস পড়াতেন। তিনি আমাদের উস্তাদেরও উস্তাদ ছিলেন।
প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ড অর্জন:
২০১০ ঈসায়িতে দিল্লিতে ৬৪তম জাতিয় স্বাধীনতা দিবসে আরবি ভাষার উপর কাজের জন্য Ministry of Human Resource Development এর পক্ষ থেকে তাঁকে প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
তাঁর রচনাবলী:
আরবি ও উর্দূভাষায় তাঁর ছোটবড় অসংখ্য রচনাবলি রয়েছে। যা বিভিন্ন দেশবিদেশে সমাদৃত ও অনুদিত। অনেকগুলো কিতাব বাংলা ও অন্যান্য ভাষায় অনুদিত হয়েছে।
তাঁর বিশেষ কয়েকটি কিতাবের নাম:
তাফসীরে হেদায়াতুল কোরআন, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, হাদিয়া শরহে কাফিয়া, রহমাতুল্লাহিল ওয়াসিয়া, তাহযিবুল মুগনি, তুহফাতুল আল মায়ি শরহে সুনানে তিরমিযি, তুহফাতুল কারি শরহে সহীহ বুখারি, ফয়যুল মুনইম ( সহীহ মুসলিম এর মুকাদ্দিমার ব্যাখ্যাগ্রন্থ), মাবাদিয়ে ফালসাফা, মঈনে ফালসাফা, মাফাতিহু তাহযিব, আসান মানতিক, আসান নাহু, আব ফাতাওয়া ক্যাইসে দে?, কিয়া মুকতাদি পর ফাতিহা ওয়াজিব হ্যায়?, হায়াতে ইমাম আবু দাউদ, মাশাহিরে মুহাদ্দিসীন ওয়া ফুকাহায়ে কেরাম, হায়াতে ইমাম তহাবি, নবুওয়াত ইনসানিয়াত কো কিয়া দিয়া?, হুরমাতে মুসাহারাত ইত্যাদি।
২৫ ই রমযান ১৪৪১ হিজরি মুতাবেক ১৯ই মে ২০২০ ঈসায়িতে ইলমের এই মহীরুহ ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে, তাঁর পিতামাতা, উস্তাদদের ক্ষমা করুন। জান্নাতুল ফিরদাউসে তাঁদের একত্রিত করুন। এবং লক্ষাধিক শোকগ্রস্ত ছাত্রদের তাঁর রেখে যাওয়া ইলমের সমুদ্র হতে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন। এবং আমাদেরকে তাঁর ছাত্র হিসাবে ইলমের হক আদায়ের তাওফিক দিন। আমিন।