সূরা কাহাফ নাযিল হয় মক্কার মুশরিকরা যখন নাযার ইবনে হারিস ও উকবা ইবনে মুঈতকে মদীনার ইহুদী আলেমদের নিকট প্রেরণ করে রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সত্যতা জানার জন্যে। মদীনার ইহুদী আলেমদের করা প্রশ্নগুলার মাঝে একটি প্রশ্ন ছিল- “পূর্ব যুগে যেসব যুবকেরা বেরিয়ে গিয়েছিল তাদের ঘটনা বর্ণনা করুন।”
মহান আল্লাহ ইহুদীদের জ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করে ঘটনাটি এমন ভাবে বর্ণনা করেন, যতটা না মদীনার ইহুদী আলেমরা জানতো। ঘটনাটি একই সাথে বিস্ময়কর ও ইন্টারেস্টিং। গুহাবাসী যুবকেরা গুহায় কিভাবে ঘুমিয়ে ছিল তা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, “তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদের পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান ও বাম দিকে।” (সূরা কাহাফ: ১৮:১৮)
নিদ্রিত যুবকদের মহান আল্লাহর পার্শ্ব পরিবর্তন করানোর প্রয়োজন কী? তাফসীর ইবনে কাসির- এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছে, “মাটি যেনো খেয়ে না ফেলে এ জন্য আল্লাহ তা’য়ালা তাদের পার্শ্ব পরিবর্তন করাতে থাকে।” (তবারী ১৭/৬২০)
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আয়াতটির ব্যাখ্যা কিভাবে করে আজ আমি সেটাই তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ। আপনি যখন অনেকক্ষণ ধরে, একইভাবে বসে থাকবেন অথবা শুয়ে থাকবেন, তা আপনার পায়ের ডীপ ভেইন থ্রোম্বোসিস (রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাধার) সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে। এই ব্লাড ক্লট ( জমাট বাঁধা রক্ত) রক্তনালির মাধ্যমে ফুসফুসে গিয়ে পালমোনারি এম্বোলিজম করে, কখনো কখনো বা মস্তিষ্কে গিয়ে রক্তনালি বন্ধ করে দিয়ে ইসকেমিক স্ট্রোক (স্ট্রোকের একটি প্রকার) করে দেয়। যা আপনাকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিবে।
এমন সাধারণত হয় কোন সার্জারীর পর রোগীকে যখন দীর্ঘ বিশ্রাম দেওয়া হয়, দীর্ঘক্ষণ বিমান ভ্রমণ করা, প্যারালাইসিস কিংবা গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারদের পরামর্শ হল, কিছুক্ষণ পর পর পার্শ্ব পরিবর্তন করে শুতে হবে। আবার কাউকে বিশেষ বিবেচনায় ঘুমাতে বলে, তবে রাতে ঘুমানোর সময় ‘পা’ কয়েক ইঞ্চি উপরের দিকে রেখে ঘুমাতে পরামর্শ দেয়। যাতে করে তাদের ডীপ ভেইন থ্রোম্বোসিস হয়ে কোন সমস্যা না হয়।
গুহাবাসী যুবকেরা গুহায় কত বছর ঘুমিয়েছিল? কুরআন হতে আমরা জানি, “তারা তাদের গুহায় ছিল তিনশো বছর আরো নয় বছর।” (সূরা কাহাফ: ১৮:২৫) একবার চিন্তা করুন তো, মহান আল্লাহ যদি তাদের পার্শ্ব পরিবর্তন করে না দিতেন? তাহলে যুবকেরা কি পালমোনারি এম্বোলিজম, স্ট্রোক হয়ে মৃত্যু বরণ করতো না?
পূর্বের আলেমরা এই আয়াতটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হয়তো কিছুটা হিমশিম খেতেন। কারণ আয়াতের পিছনের মজার চিকিৎসা বিজ্ঞানটি তাদের জানা ছিল না। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে কিছুদিন পূর্বেও মানুষ যে সমস্ত তথ্য সম্পর্কে বিভ্রান্তিতে ছিল, জ্ঞান সাধনার ফলে তার অনেকটাই সত্যের আলোতে উদ্ভাসিত হচ্ছে। সুবহানাল্লাহ, অতঃপর আমরা আল্লাহর কোন কোন নিয়ামত কে অস্বীকার করবো? “তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে দয়ার বিস্তার করবেন।” (সূরা কাহাফ: ১৮: ১৬)
হে প্রভু আমাদের সেই দয়ায় আচ্ছন্ন করে রাখুন, যেমনটা করেছেন গুহাবাসী যুবকদের।