সাহাবীগণ রামাদ্বান মাসের পূর্বে রামাদ্বান মাস নিয়ে বেশ উৎফুল্ল থাকতেন। আমরা যেমন কোথাও ভ্রমণে যাবার পূর্বে সব পরিকল্পনা শেষ করে, টিকিট বুকিং দিয়ে আগেরদিন রাতে ঘুমাতে পারি না, মনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা কাজ করে, তেমনি সাহাবীরা রামাদ্বান মাসের আগমন উপলক্ষ্যে এমনটা করতেন। রামাদ্বান মাসের পূর্বে তারা আল্লাহর কাছে দু’আ করতেন: “হে আল্লাহ! আমাকে রামাদ্বান পর্যন্ত নিরাপদে পৌঁছে দিন, রামাদ্বান আমার পর্যন্ত পৌঁছে দিন এবং আমার কাছ থেকে তা কবুল করুন।” [১]
সালাফগণ তো ৬ মাস আগ থেকেই রামাদ্বানের প্রতীক্ষার প্রহর গুনতেন। রামাদ্বানের ৬ মাস আগ থেকে দু’আ করতেন, তারা যেনো রামাদ্বান পান, রামাদ্বান পরবর্তী ৫ মাস দু’আ করতেন, রামাদ্বানের আমলগুলো যেনো কবুল করে নেয়া হয়। [২] রামাদ্বানের আগের মাস হলো শাবান মাস (এখন যে মাস চলছে)। রামাদ্বান ছাড়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন শাবান মাসে [৩]।
পবিত্র কুরআনে ১২ মাসের মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা মাত্র একটি মাসের কথা উল্লেখ করেন। আর সেই মাসটি হলো- রামাদ্বান মাস। কেউ যদি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করে, রামাদ্বান মাস কিসের মাস? রামাদ্বান মাসের বিশেষত্ব কী? আমরা তখন কী জবাব দিই? আমরা সাধারণত বলি, “এই মাস এমন এক মাস, যে মাসে দিনের বেলা আমরা না খেয়ে থাকি।”
রামাদ্বান মাস কি শুধুমাত্র না খেয়ে থাকার মাস? এই মাসের বিশেষত্ব সম্পর্কে আল্লাহ কী বলেছেন? আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন: “রামাদ্বান মাস হলো সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন; যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।” [সূরা বাকারা ২:১৮৫]
আল্লাহ রামাদ্বান মাসকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন কুরআনের সাথে, এই মাসের বিশেষত্ব তুলে ধরলেন কুরআন নাযিলের মাস হিশেবে। অতঃপর পরবর্তী আয়াতে বললেন এই মাসে রোজা রাখার জন্য। তারমানে, রামাদ্বান মাস যে কারণে মহিমান্বিত, সেই কারণটা আমরা হয়তোবা অনুধাবন করতে পারি না। আমরা শুধুমাত্র ‘না খেয়ে থাকা’ -কেই রামাদ্বানের বিশেষত্ব হিশেবে ধরে নিয়েছি। যেহেতু এই মাসটি একটি বিশেষ মাস, এই মাস আসার পূর্বেই চাইলে আমরা কিছু পরিকল্পনা করে নিতে পারি। ‘পরিকল্পনা’ যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হবে, তখন সেটা ‘নিয়্যত’ হয়ে যাবে। আর হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পাই, প্রত্যেক কাজ (ফল) তার নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল। [৪]
রামাদ্বান আসার পূর্বেই যদি আমরা রামাদ্বান নিয়ে কোনো নিয়্যত করি, সেই নিয়্যতের জন্যও আমরা সওয়াব পাবো, ইন শা আল্লাহ। আর আগে থেকেই নিয়্যত করা থাকলে, পরবর্তীতে ‘সময় ব্যবস্থাপনা’ সহজ হবে, কাজের শিডিউলগুলো সেই অনুযায়ী সাজাতে পারবো।
তাহলে রামাদ্বান মাসে আমরা কী কী কাজের নিয়্যত করতে পারি?
১) পুরো মাস রোজা রাখার নিয়্যত:
আমরা রামাদ্বানের যেনো পুরো মাস সুস্থতার সাথে কাটাতে পারি, সেজন্য আগে থেকেই দু’আ করতে পারি। শরীয়ত সুযোগ দিয়েছে এমন কোনো অসুবিধা না থাকলে ‘পুরো মাস’ আমরা রোজা রাখার জন্য আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি। পুরো মাস রোজা রাখলে কী লাভ? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রামাদ্বান মাসের রোজাগুলো রাখে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।” [৫]
২) রাতে তারাবীহ পড়া:
অন্যান্য বছর আমরা তারাবীহ পড়ি বা ফাঁকি দেই, যাই করি না কেনো, এবার অন্তত আমরা নিয়্যত করতে পারি যে, এবার আর তারাবীহর নামাজে ফাঁকি দেবো না। বাসায় তারাবীহর নামাজ পড়া যায়, মসজিদেও পড়া যায়। সত্যিকারার্থে, বাসায় এতো লম্বা নামাজ পড়ার মতো মানসিক ধৈর্য সবার থাকে না, আলসেমী চলে আসে। দেখা যায় তখন আর নামাজ পড়াই হয় না! এজন্য, মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামাজ পড়লে আলসেমীর সুযোগ আর থাকে না। তারাবীহর পাশাপাশি রাতে আমরা কুরআন তেলাওয়াত, যিকিরের মাধ্যমে কাটাতে পারি। এতে লাভ কী? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে রাত জেগে ইবাদাত করে, তার পেছনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” [৬]
৩) অন্তত একবার কুরআন খতম করা:
রামাদ্বান মাস হলো কুরআন নাযিলের মাস এবং আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এই মাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন কুরআনের সাথে লিংক করে। সুতরাং, এই মাসে কুরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারে অধিক যত্নশীল হওয়া কাম্য। ইমাম ইবনে শিহাব আয-যুহরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলতেন: “নিশ্চয়ই রামাদ্বান মাসটি কুরআন তেলাওয়াত এবং খাবার খাওয়ানোর মাস।” [৭]
সালাফগণ অন্যান্য মাসের চেয়ে এই মাসে অধিক কুরআন তেলাওয়াত করতেন, অন্য মাসের চেয়ে এই মাসে অধিক কুরআন খতম করতেন। ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ), ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ), ইমাম আশ-শাফে’ঈ (রাহিমাহুল্লাহ), ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ),
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) সবাই অন্যান্য মাসের চেয়ে রামাদ্বান মাসে দ্বিগুণ কুরআন খতম দিতেন। আমরা যদি প্রতিদিন অন্তত এক পারা করে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারি, তাহলে এক মাসে পুরো কুরআন এক খতম হয়ে যায়। এক পারা তেলাওয়াত করতে কতোক্ষণ লাগে? ১ ঘন্টা থেকে সর্বোচ্চ দেড় ঘন্টা।
৪) কুরআন তেলাওয়াত শুনা:
রামাদ্বান মাসে কুরআন তেলাওয়াত করার পাশাপাশি কুরআন তেলাওয়াত শুনাও সুন্নাত। রামাদ্বান মাসের প্রতি রাতে জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআন তেলাওয়াত করে শুনাতেন, রাসূলুল্লাহও (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআন তেলাওয়াত করে জিবরাঈল (আ.) –কে শুনাতেন। [৮]
রামাদ্বান মাসের অনেক সময় আমরা অযথা কাটাই। বিশেষ করে আসর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত। এই সময় আমরা চাইলে দুটোর যেকোনো একটি কাজ করতে পারি:
- প্রতিদিন আমাদের প্রিয় যেকোনো একজন ক্বারীর এক পারা করে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পারি।
- অথবা একেকদিন একেকজন ক্বারীর তেলাওয়াত শুনতে পারি।
ধরুন, একদিন শুনলাম মিসরী রশীদ আফাসীর তেলাওয়াত, একদিন শুনলাম আব্দুর রহমান আল ওসসীর তেলাওয়াত, আরেকদিন শুনলাম আব্দুর রহমান আস-সুদাইসীর তেলাওয়াত। উনারা ছাড়াও আপনারা আপনাদের পছন্দমতো কারীদের তেলাওয়াত শুনতে পারেন। পাশাপাশি আমাদের নিকটস্থ কোনো মসজিদে যদি ‘খতম তারাবীহ’ হয়, তাহলে নিয়মিত সেখানে গিয়ে নামাজ পড়ে পুরো রামাদ্বান মাসে অন্তত একবার সম্পূর্ণ কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পারি।
৫) অন্তত একবার পুরো কুরআন বাংলায় পড়া:
পুরো কুরআন বাংলায় পড়টা কেনো গুরুত্বপূর্ণ সেটা নিয়ে অনেকদিন থেকেই আমরা ক্যাম্পেইন চালিয়ে আসছি, আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের দেশে ৫% এরও কম মানুষ আরবি বুঝে কুরআন পড়তে পারেন না। তাই বলে কি তারা সারাজীবন এভাবেই কাটিয়ে দিবেন? আল্লাহ কুরআনে কী বলতে চেয়েছেন তারা একবারও পড়ে দেখবেন না? হাতের কাছে কতো সুযোগ।
আরবি না পারলে বাংলায় অনূদিত কুরআন পড়ে অন্তত দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো যেতো! বাংলায় অনূদিত অনেকগুলো কুরআনের অনুবাদ আছে, ইংরেজিতে তো আরো সমৃদ্ধ। তবে এটা মাথায় নিয়ে পড়তে হবে, অনুবাদ কখনো মূলের স্বাদ দেনে দিবে না এবং অনুবাদ কখনো ‘পার্ফেক্ট’ হবে না।
বাংলায় কেউ যদি পড়তে চান, তাহলে আমার সাজেশন হলো আল-কুরআন একাডেমি লন্ডন থেকে প্রকাশিত হাফেজ মুনীর উদ্দিন আহমেদের অনুবাদটি। বাংলা ভাষায় আমার কাছে সবচেয়ে সাবলীল অনুবাদ মনে হয়েছে এই অনুবাদটি। ঝরঝরে অনুবাদ, থামতে হয় না, একটানা পড়া যায়। এছাড়াও পড়তে পারেন ‘বায়ান ফাউন্ডেশন’ -এর অনুবাদ। ইংরেজিতে পড়তে চাইলে ‘Shahih International’ অথবা ‘Abdel Haleem’ -এর অনুবাদ পড়া যেতে পারে।
যারা জীবনে অন্তত একবার কুরআনের অনুবাদ পড়েছেন, তারা নিয়্যত করুন- এবার আরেকবার পড়বো। যারা এখনো পড়েননি, তারা অবশ্যই নিজের সাথে ওয়াদা করতে পারেন, “এবার আমি পড়বোই, ইন শা আল্লাহ।”
৬) আমপারার তাফসীর:
যারা জীবনভর মাদ্রাসায় কাটান, তাদের প্রত্যেকেও কিন্তু পুরো কুরআনের তাফসীর পড়েন না, পড়তে হয় না। কুরআন নিয়েই যারা উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন, শুধুমাত্র তারাই পুরো কুরআনের একাধিক তাফসীর পড়েন। সেখানে সাধারণ মানুষকে পুরো কুরআনের তাফসীর পড়ার জন্য সাজেস্ট করাটা আমার কাছে বেশি-বেশি মনে হয় এবং সেটা শুধু সাজেশন পর্যন্তই থাকে। নন-অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে পুরো কুরআনের তাফসীর পড়েছেন এরকম মানুষ খুব কম। খুবই ডেডিকেটেড না হলে কেউ এটা পারে না।
এজন্য আমি মনে করি আম-পাবলিকের জন্য আমপারার তাফসীরটা অন্তত পড়ে নেয়া ভালো। এতে ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’ নীতিটা ফলো করা হয়। শুধুমাত্র আমপারার (কুরআনের ৩০ নাম্বার পারা) তাফসীর বাজারে কমপক্ষে ৮-১০ টি আছে। এক্ষেত্রে দুটো পন্থা অনুসরণ করা যেতে পারে:
- বিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিয়ে যেকোনো একটি আমপারার তাফসীর পড়া শুরু করা।
- অথবা, কম্পারেটিভ তাফসীর পড়া। কম্পারেটিভ তাফসীর হলো একাধিক তাফসীরের কিতাব কিনে পড়া। একটি সূরার একবার তাফসীর ইবনে কাসির, আরেকবার তাফহীমুল কুরআন, আরেকবার তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া, আরেকবার তাফসীরে ফী যিলালিল কুরআন পড়া যেতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করি।
আর কেউ যদি একটি সিঙ্গেল তাফসীর দিয়ে শুরু করতে চান, বিগিনারদের জন্য আমি সাজেস্ট করবো সমকালীন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ওমর আল জাবির ভাইয়ের ‘পড়ো-২’ বইটি।
৭) ‘The Message of the Quran’ লেকচার সিরিজটি শুনা:
পুরো কুরআন সম্পর্কে ‘বার্ড আই ভিউ’ বা খুবই সংক্ষেপে মোটামুটি ধারণা পাবার জন্য এই সিরিজটিকে আমি বলবো- মাস্ট ওয়াচ সিরিজ। হাইলি রেকমেন্ডেড। ডক্টর ইয়াসির ক্বাদি (হাফিজাহুল্লাহ) গতো রামাদ্বানে সিরিজটি করেন। ১ ঘন্টা করে ৩০টি এপিসোডে সংক্ষেপে কুরআনের ৩০ পারা নিয়ে আলোচনা। প্রথম ১০ মিনিট একজন প্রসিদ্ধ ক্বারী কুরআনের ঐ পারার কিছু অংশ তেলাওয়াত করেন, তারপর বাকি ৫০ মিনিট তিনি সেই পারার হাইলাইটেড অংশগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেন। আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট, সেই আয়াতের তাফসীর এবং বর্তমানে আমরা সেটা থেকে কী শিখতে পারি এই নিয়ে আলোচনা।
রামাদ্বান মাসে সিরিজটি শুনতে পারিনি। রামাদ্বান পরবর্তী সময়ে পুরো লেকচারটি নোট করে করে শুনেছিলাম। সিরিজটি শুনে কুরআনের প্রতি নতুন করে আমার ভালোবাসা জন্মেছে। পুরো কুরআন বুঝে পড়ার মজা উপলব্ধি করেছি। এবার প্ল্যান করেছি, এই রামাদ্বানে সিরিজটি আবার শুনবো ইন শা আল্লাহ। এক ছোটো ভাই সিরিজটির অনুবাদ করছে। (সিরিজের লিংকটি রেফারেন্স সেকশনে দেয়া হবে)
৮) দান-সাদকা বাড়িয়ে দেয়া:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যান্য সময় দান করতেন, রামাদ্বান মাস আসলে দানের পরিমাণ বেড়ে যেতো। রামাদ্বান মাসে তাঁর দান করার উদাহরণ দিতে গিয়ে সাহাবীরা বলতেন ‘রহমতের বায়ু অপেক্ষা অধিক দানশীল’। [৯] রামাদ্বান মাসে রাস্তায় বের হবার সময় মানিব্যাগে দান করার মানসিকতা নিয়ে কিছু টাকা রাখতে পারি। রামাদ্বান মাসে দিনমজুর, গরীবরা যেনো নির্বিঘ্নে রোজা রাখতে পারে, ইফতার-সাহরী করতে পারে, সেজন্য খুঁজে খুঁজে তাদের জন্য রামাদ্বান প্যাকেজ পাঠাতে পারি।
৯) ইসলামের যুদ্ধ ইতিহাস পড়া:
রামাদ্বান মাসকে বলা হয়- ‘ইসলামের বিজয়ের মাস’। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলো এই মাসে সংঘটিত হয় এবং মুসলিমরা এই মাসে ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যুদ্ধগুলোতে বিজয়লাভ করে। রামাদ্বান মাস যেমন রহমতের মাস, তেমনি এই মাস বিজয়ের মাস।
এই মাসে মুসলিমরা যেসব যুদ্ধে জয়ী হয়:
- দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধ
- অষ্টম হিজরীতে মক্কা বিজয়
- ৯৩ হিজরীতে আন্দালুস জয়
- ৯৪ হিজরীতে সিন্ধু জয়
- ৫৮৩ হিজরীতে হিত্তিনের যুদ্ধ
- ৬৫৮ হিজরীতে আইনে জালুতের যুদ্ধ
- ৮৮৯ হিজরীতে ক্রিমিয়া জয়।
মুসলমানদের বিজয়ের ঐতিহাসিক মাসে মুসলমানরা আরো বেশি ইতিহাস সচেতন হওয়া দরকার। যে মাস ইসলামের বিজয়ের মাস, সেই মাসে মুসলিমরা তাদের বিজয়ের কাহিনীগুলো পড়লে অনুপ্রাণিত হবে। মুসলমান তার আত্ম-পরিচয় নিয়ে সংশয়ে ভুগবে না, হীনমন্য হবে না।
ইসলামের যুদ্ধ ইতিহাস নিয়ে কয়েকটি বই বাজারে পাওয়া যায়। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো মনে হয়েছে মাকতাবাতুল আসলাফ থেকে প্রকাশিত সাদিক ফারহান ভাইয়ের ‘ইসলামের যুদ্ধ ইতিহাস’ বইটি। ইসলামের ৪৫ টি যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে সাজানো বইটি পাঠককে তার আত্ম-পরিচয় সম্পর্কে সচেতন করবে বলে আমার বিশ্বাস।
১০) এতেক্বাফের নিয়্যত করা:
রামাদ্বানের শেষ দশদিন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এতেক্বাফ করার মধ্যে কী যে আনন্দ আছে, সেটা তারাই বুঝতে পারবেন, যারা এই স্বাদ পেয়েছেন। পুরো একটি বছর আমরা দুনিয়ার পেছনে ছুটলাম। রামাদ্বানের শেষ ১০ দিন অন্তত সক্ষম ছেলে/পুরুষরা মসজিদে গিয়ে, মেয়েরা ঘরের মধ্যে এতেক্বাফে থাকতে পারেন। এতেক্বাফে থাকার জন্য সাধারণত হুট করে চাইলেই যাওয়া যায় না। রামাদ্বানের শুরু থেকে দুনিয়াবী কাজের একজনকে রিপ্লেইস করে, কাজ বুঝিয়ে দিয়ে প্ল্যান করতে হবে।
এতেক্বাফের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “সে নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেককারদের সকল নেকী তার জন্য লেখা হয়।” [১০] রামাদ্বানের পূর্বে আমরা এই কাজগুলোর নিয়্যত অন্তত করতে পারি, ইন শা আল্লাহ। রামাদ্বান আমাদের গুনাহ মাফের জন্য সুবর্ণ সুযোগ।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি হাদীসে তিন ধরণের লোকের ভাগ্যকে দূর্ভাগ্য বলেছেন। তারমধ্যে একধরণের লোক হলো তারা, যারা রামাদ্বান মাস পেয়েও নিজেদের গুনাহ মাফ করাতে পারলো না। [১১] আল্লাহ আমাদেরকে যেনো সেই দলে অন্তর্ভুক্ত না করেন। আপকামিং রামাদ্বান মাস হোক আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ রামাদ্বান।
রেফারেন্স:
১। কানজুল উম্মাল: ২৪২৭৭।
২। লাতায়েফুল মাআরেফ: ৩৭৬।
৩। সহীহ বুখারী: ১৯৬৯।
৪। সহীহ বুখারী: ১।
৫। সহীহ বুখারী: ৩৮।
৬। সহীহ বুখারী: ৩৭।
৭। লাতায়েফুল মাআরেফ: ৩১৮।
৮। সহীহ বুখারী: ৬।
৯। সহীহ বুখারী: ৬।
১০। সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৮১।
১১। ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ: ৬৪৮।
- ইয়াসির ক্বাদী-এর The Message of The Quran কোরআন সিরিজটির লিংক: youtube.com/watch?v=1gdi1W_HSRk&list=PLYZxc42QNctUnn09Of4rBuakQhu-Q2qpc