তৃষ্ণার্ত পথিককে কিংবা কোনো অবহেলিত বৃক্ষকে এক ফোঁটা পানির স্পর্শ যেমন প্রশান্তি এনে দেয় তেমনি তার নাম শুনলে প্রতিটি বিশ্বাসীদের মন নড়েচড়ে বসে, হৃদয়ে জমে থাকা মেঘগুলো যেন বর্ষণ শুরু করে, চোখের কোণ দ্বারা লবণাক্ত পানির সাথে মুখবিবর প্রতিধ্বনিত হয়, “আহ! আমাদের ফেরদাউস!”
খলিফাদের আমল থেকেই মুসলিমরা একের পর এক নগরী বিজয় করতে থাকে। পৃথিবী অর্ধেক তখন মুসলিমদের রাজত্বে। আফ্রিকা থেকে এশিয়া সবই শান্তির ছায়াতলে। গড়ে উঠেছে সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু। জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তারা সর্বত্র। আমর ইবনে আল-আসের (রা) হাত ধরেই আফ্রিকা বিজয় শুরু। একের পর এক বৃহৎ অঞ্চল বিজয় থামলো মরক্কো গিয়ে। থমথমে পরিবেশ ততদিনে জেনে গেছে খলিফাদের শাসনামল শেষ।
খলিফাদের পরেই মুসলিমদের শাসনের আসনে বসে “উমাইয়্যা” বংশধরের লোকেরা। তারা কোরাইশ বংশের একটি উপধারা।
মুয়াবিয়া (রা) যখন খলিফা তখন তিনি আফ্রিকা অঞ্চলে থাকা কাছের এক সেনাপতিকে ডাকলেন। তিনি ছিলেন একজন যোদ্ধা, যে কোনো যুদ্ধে আজ অব্দি হারেনি। সেই সেনাপতির নাম মুসা বিন নুসাইর (র)। তার হাত ধরেই আফ্রিকা অঞ্চলে মুসলিমদের ঘাঁটি পাকাপোক্ত রাখা হয়েছিল এবং তিনি ছিলেন মুসলিম উম্মাহর প্রথম নৌ-কমান্ডার। খলিফার হাতে এই পদ অর্জনের পর যোগ দেন গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ, বিজয় এনে দেন মুসলিমদের। খলিফা ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালেকের শাসনামলে তিনি আফ্রিকার মাগরেব অঞ্চলের গভর্নর পদে নিযুক্ত করেন।
আফ্রিকা একটি বহু সংস্কৃতির অঞ্চল, অনেক জাতির বসবাস। তাই দায়িত্ব পেয়ে আগে তিনি সবাইকে একত্রে রাখার দিকে মনোযোগ দেন, সবাইকে ইসলাম শিক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। ব্যক্তিজীবন তিনি ছিলেন আল্লাহ ভীরু, দ্বীন-দুনিয়া দুটোকেই ব্যলেন্স করে চলতেন। মাগরেব অঞ্চলের লোকেরা বারবার ধর্মত্যাগ করতো। তিনি তার কারণ খুঁজে বের করে সেদিকে নজর দিতে লাগলেন। এতে তিনি ভালোই সাফল্য লাভ করলেন কারণ আফ্রিকায় বসবাসরত আমাগিজ গোত্রের অনেক লোক ছিল, যারা দিনশেষে তারই সৈন্যের যোগান ছিল। একজন যোদ্ধার মস্তিষ্ক স্থিতিশীল থাকে না। তিনি চাইতেন মানুষকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসতে, নতুন অভিযানে যেতে দ্বীনের জন্য কিন্তু মনস্থির করলেই যে যাওয়া যাবে এমন তো আর হলে সহজই ছিল।
পরিকল্পনামাফিক তিনি আগে তার এলাকার লোকেদের ঠিক করলেন। গড়ে তুললেন এক দুর্দান্ত সেনাবাহিনী যাদের সামনে প্রতিপক্ষ কিছুই ছিল না। তার প্রিয় কমান্ডার ছিলেন সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ (র)। যিনি ছিলেন বার্বার বংশের একজন বীর জাত যোদ্ধা। যেমন ছিল তার শক্তি, তেমন ছিল তার মনোবল, নেতা হিসেবে ছিলেন অতুলনীয়। সাহাবী থেকে দুনিয়াব্যাপী ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেয়ার মিশনে সবাই নেমেছিলেন। কেউ থামার চিন্তাও করেননি। মরক্কোর ওপারে নাকি একটা দেশ আছে, কেউ যায়নি সেখানে, ভাননার কারো শেষ নেই, ইশশশ! কেউ যদি খবরটা এনে দিতে পারতো! সমুদ্রের ঢেউয়ের তালে কিংবা সমুদ্র সৈকতে কত সেনাপতির আকাঙ্ক্ষা বিলিন হয়ে গেছে কে জানে! ওপারে যাওয়াটাই ইচ্ছে, ইসলামের বাণী পৌঁছাতে হবে, আমাদের তো দুনিয়াবি লোভ নেই। মুসা বিন নুসাইর (র) ভাবছেন ওপারের কথা। পথ খুঁজছেন সেখানে যাওয়ার কিন্তু পথ সমুদ্র, সমুদ্র তো খুবই বিপদজনক!
ওপারে আসলে কী? মাত্র ১৩ কিঃমি একটা প্রণালী, পাড়ি দিলেই নাকি নতুন এক মহাদেশ। সেই মহাদেশের একটি দেশ, শাসন করতো এক রাজা। সেই দেশের ইতিহাস অনেক বিশাল। একেকবার একেক মানুষ দ্বারা শাসিত হয়েছে কিন্তু কোনোদিন শান্তি, ন্যায়পরায়ণতা এসে নামেনি। ফ্রান্সের মিডি পিগনি নামক পর্বতের এপাশে সেই দেশ, পাহাড়, সবুজ-শ্যামল এবং মেঘে আচ্ছন্ন থাকা এই দেশটা কেউ না দেখলে আসলে তৃপ্তি পাবে না। এই অঞ্চলকে শাসন করেছে বেশ কিছু জাতি। কেউ বলেছেন জার্মান লোকেরা এখানে এসে রাজত্ব কায়েম করেছিল, যাদেরকে বলা হতো “ভান্ডালুসিয়া” তারা তাদের নৃশংসহের জন্য বিখ্যাত ছিল। তাদেরকে উৎখাত করে শাসনে বসে খৃষ্টান রাজা, যাদের নাম ভিসিগথ। তারাই শাসন করে চলছিল সেই দেশকে যার নাম আন্দালুস। রাজা রডরিকের অত্যাচারে অসহ্য হয়ে পড়েছিল তার দেশের জনগণ। মানুষ না খেয়ে মরছে আর সে বিলাসী জীবনযাপনে। অন্যদিকে রডরিকের বিরুদ্ধে কিছু করার মনস্থির করলেও জুলিয়ান না পারছেন কিছু করতে না পারছেন তার বন্ধু গিতশার হত্যার বদলা নিতে। এদিকে রডরিক আবার তার কন্যাকেও অপহরণ করে বসে। চোখের সামনে রাস্তা না পেয়ে সিউটার শাসক জুলিয়ান ছুটেন মুসা বিন নুসাইরের (র) কাছে।
এদিকে সিউটা নিয়ে ভাবছেন মুসা বিন নুসাইর (র)। এই দ্বীপ হাতে আসলেই সামনে এগিয়ে যাওয়া যাবে। এই দ্বীপ বিজয়ের পরিকল্পনা করতে লাগলেন কিন্তু কোনো কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না। এমন অবস্থায় সিউটার শাসক এসে হাজির। এ যে আকাশের চাঁদ হাতে আসা। জুলিয়ান তাকে সব খুলে বললেন। তিনি তাদেরকে আন্দালুসের সেফ প্যাসাজের ব্যবস্থা করে দিবেন এবং যুদ্ধে সাহায্য করবেন আন্দালুসের তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে, বিনিময়ে তাকে ও তার বন্ধুর পরিবারের ধনসম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। মুসলিমরা এমন সুযোগ হাতছাড়া করার প্রশ্নই উঠে না।
শুরু হলো আন্দালুস অভিযানের আনজাম। মুসা বিন নুসাইর (র) ও তারিক বিন যিয়াদ (র) তৈরি করতে লাগলেন দুর্দান্ত এক সৈন্যবাহিনী। প্রায় এক বছর তারা প্রস্তুতি নিলেন। সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করলেন, দলে তাদেরকে নিলেন যারা ছিলেন জাত যুদ্ধে, সেনা কমান্ডার তারিক বিন যিয়াদ। এবার খলিফার অনুমিতর পালা। খলিফার মসনদের তখন ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক। তার কাছ থেকে অনুমিত নিয়ে আল্লাহর নামে ছুটে গেলেন সমুদ্রের ধারে।
আন্দালুসে পা দেয়ার পূর্বে সমুদ্রের থাকা কিছু অঞ্চল তরীফ বিন মালিক (র) বিজয় লাভ করেন। এতে সমুদ্রতে আক্রমণের আর কোনো শংখা দেখা দেয়নি। এর পর যাত্রা শুরু হলো আন্দালুসের দিকে। সাত হাজার সৈন্যকে অস্ত্রসজ্জিত করে নৌবহর দ্বারা আন্দালুসে পাঠিয়ে দিলেন। আন্দালুসে প্রবেশের ক্ষেত্রে জুলিয়ান তাদেরকে তার নিজ জানাশোনা নৌকা দ্বারা পার করিয়ে দিয়েছিল যাতে আন্দালুসবাসী টের না পায় তাদেরকে কেউ আক্রমণ করতে আসছে।
এভাবে ৭ হাজার সৈন্য পদার্পণ করলো আন্দালুসের মাটিতে। পা রাখলেন সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ (র), সেই থেকে প্রণালীর নাম হয়ে গেলো “জাবালে তারিক” ইংরেজিতে “Gibraltar”
সেখান থেকে সৈন্য নিয়ে তিনি আলজেসিরাস নামক শহরের দিকে গেলেন। মুখোমুখি খৃষ্টান বাহিনী। প্রথমে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হলো, মানলো না, দেয়া হলো জিযিয়ার অপশন, তাও খারিজ করলো। এবার তাহলে একটাই পথ যুদ্ধ। ঝাপিয়ে পড়লেন যুদ্ধে। বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে গুড়িয়ে দিলেন খৃষ্টান বাহিনীকে। পরাজিত হওয়ার পূর্বেই দলের নেতা রডরিককে চিঠি পাঠিয়ে সাহায্য পাঠাতে বলে। সে এতো মাথা না ঘামিয়ে হালকাভাবে নেয়। কিন্তু আত্মা তখনি কেঁপে উঠলো যখন সে দেখলো মুসলিমরা কর্ডোভার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এবার সে তার দলবল পাঠাল। কিন্তু এই যুদ্ধেও খৃষ্টানরা হেরে গেলো। মুসলিমরা তাদেরকে মাটির সাথে একদম মিশিয়ে দেয়। কিছু সৈন্য পালিয়ে রডরিককে খবর দিলে এবার সে তার দলবলসহ নিজেই যুদ্ধের ময়দানে নেমে আসে। এক লক্ষ সৈন্য নিয়ে সে হাজির হয় বারবাত প্রান্তরে। বেচারা ছিল খুব অহংকারী, সে ভাবলো এ বাহিনী আর এমন কি, মাত্র ৭ হাজার, এগুলো তো নিমিষেই উড়ে যাবে এক লাখের সামনে।
এদিকে তারিক (র) মুসার (র) সাহায্য চাইলে তিনি তরীফকে (র) পাঠান। এতে যুদ্ধা উঠে দাঁড়ায় বারো হাজারে। এবার যুদ্ধ শুরু ১২০০০ বনাম ১০০০০০। তারিক (র) ছিলেন দুর্দান্ত ট্যাক্টিক্সধারী, তিনি রডরিককে এমন জায়গায় টেনে নিয়ে আসলেন যেখানে সে এক রাস্তায় আসতে পারবে তবে পালানোর রাস্তা পাবে না। এখানে এই সেনাবাহিনীকে টেনে নিয়ে এসে এবার মুসলিমরা তাদের কচুকাটা করে। রডরিক ধরে নিয়েছিল সে জিতবে কিন্তু ভয় ঢুকলো এবার সে পালাবে কী করে! এ কাদের সাথে সে লড়াই করছে যাদের জীবনের কোনো মায়াই নেই।
হ্যাঁ! রডরিক হয়তো জানতো না আমরা কোন জাতি।আমি সেই জাতি যারা স্ত্রীর উষ্ণতার ঘুমানোর চেয়ে যুদ্ধের ময়দানে দাপিয়ে বেড়াতে পছন্দ করতো। আমরা সেই জাতি যারা জীবনের চেয়ে যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যুলে আলিঙ্গন করতে বেশি পছন্দ করতো। আট দিনের টানা যুদ্ধ শেষে মুসলিমরা বিজয় অর্জন করলো। রডরিক এবং তার বাহিনী বিলীন হয়ে গেলো। আন্দালুসের আকাশে উড়লো ইসলামের পতাকা। আকেশে তাকিয়ে হাসছেন সবাই, শুকরিয়া আদায় করছেন। কাল ঈদ, এ তো আনন্দের মধ্যে বড় আনন্দ!
এদিকে খবর তাড়াতাড়ি মুসা বিন নুসাইরকে (র) দেয়া হলো। খুশিতে সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন। খলিফাকে চিঠি লিখে পাঠালেন। এবার তিনি নিজেই আন্দালুস যাবেন বলে মনস্থির করলেন।
আন্দালুসের ভূমিতে সবে মাত্র শান্তির বর্ষণ পড়া শুরু হলো। তারিক বিন যিয়াদ (র) ছুটলেন সামনের দিকে। ছোটোবড়ো দলকে পাঠালেন বিভিন্ন শহরে বিজয় করার জন্য। কয়েক মাসের মধ্যেই সেভিলি, মালাগা, গ্রানাদা, কোর্ডভা, মুরসিয়া নগরী বিজয় করলেন। আন্দালুসের রাজধানী টলেডো তখনও ঘেরাও, শেষ অব্দি তারা হার মেনে নেয়। আহ! এমন একটি শহর যার তিনদিকেই টাজু নদী। মুসলিমরা আস্তে আস্তে বাদবাকি সব এলাকা বিজয় করে। পর্তুগালের লিসবন থেকে শুরু করে ফ্রান্সে নাখবন, তুলুজ, তুখ, কার্কাসোন ইত্যাদি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
আন্দালুসের এই অবস্থার মধ্যেই মুসা ও তারিক মিলিত হোন। তারা সুন্দরভাবে সামমে এগিয়ে যেতে থাকেন। আন্দালুসের দরজা খুলে যাওয়ার পর মুসা (র) প্রচুর আলেম উলামাকে এখানে পাঠান। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আন্দালুসবাসী মুসলিমদের মেনে নেয়। তারা বিদ্রোহ করে না। তারা এমন শাসকের অপেক্ষায় ছিল যারা তাদের শান্তি এনে দিবে এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে।
মুসলিমদের মেহনতে লোকেরা ইসলামের ছায়াতলে আসা শুরু করলো। তারা মুসলিমদের ঔঁন করতে লাগলো। আরবি ভাষা হয়ে উঠছিল তাদের প্রধান ভাষা। ইসলামী কালচার ছিল তাদের প্রধান কালচার। সভ্যতার বিকাশের বীজটা বপন হয়েছিল তখন।
মুসা বিন নুসাইর (র) চিন্তা করছিলেন তিনি এখন ফ্রান্স হয়ে ইটালি হয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন এবং মূল টার্গেট কন্সটেন্টিনোপল। যেই না ভাবলেন সামনে যাবেন এরই মধ্যে খলিফার চিঠি আসলো। তিনি তাদেরকে ডাকলেন এবং জানিয়ে দিলেন তারা যেন আর সামনে না যায়। দামেষ্কে এসে দেখেন খলিফা মৃত্যুশয্যায়। খলিফা তাদেরকে বুঝালেন এবং না যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।
এদিকে আন্দালুসের মানুষরা মুসলিমদের দেখে অনেক কিছু শিখতে পায়। তারা দেখলো এরা অন্যরকম। তারা এসে মুগ্ধ হলো, ইসলামের ছায়াতলে আসলো। তারা দেখলো ইসলামে শ্রেণী ভেদাবেদ নেই, ন্যায় আছে, জীবন বিধান আছে ইত্যাদি। তারা এসব দেখে ইসলামে আসলো। মুসলিম ছেলেদের/মেয়েদের বিয়ে করলো। এতে করে জীবনযাপন সহজ হয়ে গেলো। সবাই দেখলো মুসলিমদের আন্ডারে ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে। তারা যে আইন প্রণয়ন করে তা সমাজে শান্তি এনে দিচ্ছে ইত্যাদি। শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলো। সবাই সেখানে পড়াশোনা করতো। আন্দালুস তার স্বভাবেই বেড়ে উঠে, মুসলিমদের মধ্যে আন্দালুসের সবাই ছিল বেশ ভিন্ন, বোধহয় মাল্টি কালচারের কারণে।
মুসলিমরা টোলেডোকে রাজধানী না রেখে কর্ডোভাকে রাজধানী করে যাতে কোন্য আক্রমণ আসলে মুসলিমদের তাৎক্ষণিক সাহায্য পাওয়া যায়।
মুসলিমরা আবারও চিন্তা করে পশ্চিমায় যেতে। এদিকে তারা আক্রমণ করে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসতে চেয়েছিল। আন্দালুসিয়ার গভর্নর আব্দুর রহমান আলগাফিকি আন্দালুসের শান্তি ফিরিয়ে এনেছিলেন একবার সমস্যা হওয়ার পর। তার নেতৃত্বে আন্দালুস বেশ এগিয়ে চললো। ফ্রান্সের দিকে অগ্রসর হয়ে টুর শহরে এসে তারা থামেন। গণিমতের লোভে পড়ে শত্রুদের দ্বিতীয় আক্রমণে তারা পরাজিত হয়ে যান এর পর আর আন্দালুস থেকে সামনে যুদ্ধ বাড়েনি। এই গভর্নরের মৃত্যুর পর আবারও আন্দালুসের সমস্যা দেখা দেয়। এবার দেখার আর কেউ নেই।
এদিকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে লিপ্ত উমাইয়্যারা। কে ক্ষমতায় আসবে! কে বিরোধিতা করবে! এসব নিয়ে তারা পড়েছিল। এদিকে উমাইয়্যাদের বিরুদ্ধেই আবার অনান্য অঞ্চল বিদ্রোহ করছিল।
ঐদিকে চুপিচুপি আব্বাসীরা জেগে উঠছিল। উমাইয়্যাদের ভেতরে যখন ঝামেলা একদম তুঙ্গে ঠিক তখনই তারা হানা দেয় প্রকাশ্য যুদ্ধে। উমাইয়হা আব্বাসীদের দেখা মিলে যাব নদীর তীরে। ১১ দিনব্যাপী টানা যুদ্ধ চলে। এতে উমাইয়্যারা হেরে যায়। আব্বাসীরা উমাইয়্যাদের কাউকে রেহাই দেয়নি। যাকে পেয়েছে কচুকাটা করেছে। গুপ্তচররা বের করে দিতো আর আব্বাসীরা তাদের রক্ত মাটিতে ভাসিয়ে দিতো, এ যেন এক রক্তমাখা খেলা।
এদিকে উমাইয়্যাদের পতনে আন্দালুসে দেখা দেয় বিরাট সমস্যা, একে তো তারা খিলাফা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আবার তাদের ভেতরেই অন্তঃকোন্দলের ফলে যে যার যার এলাকা শাসন করতে তাকে। এদিকে তাদের মধ্যে ভ্রান্ত মতবাদও ঢুকে যায়।
উমাইয়্যাদের যে যেখানে ছিল তারা পালিয়ে আশ্রয় খুঁজতে থাকলো কিন্তু কেউ রেহায় পাচ্ছিলো না। যেখানেই পাওয়া হতো হত্যা করা হতো, আব্বাসীরা জানতো যদি এদের একজনও বেঁচে থাকে তাহলে আবার খিলাফত দাবি করবে এবং লোকেদের মধ্যে তাদের ভালোবাসা বেশি থাকায় তারাও সমর্থন দিবে। কিছু কিছু উমাইয়্যাকে আব্বাসীরা হত্যা করতে পারেনি কারণ তারা নাগালের বাহিরে চলে গিয়েছিল।
উমাইয়্যা যুবরাজ আব্দুর রহমান শামের এক গ্রামে আশ্রয় নেন।কিছুদিন পর টের পেলেন শত্রুরা তাদের ঘিরে ফেলেছে। নগদ অর্থ নিয়ে কোনোক্রমে জান নিয়ে পালিয়ে গেলেন। প্রথমে গেলেন ইরাকের দিকে, তারপর সিরিয়া, মিশর, লিবিয়া আসলেন। এখনে ৫ বছর আত্মগোপন করে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে কায়রোয়ান চলে যান এবং সেখানে আশ্রয় চান। ঐ এলাকায় আবার আরেকজন স্বায়ত্তশাসন করছিলেন। তিনি আশ্রয় দিলেও উমাইয়্যার কেউ তার সিংহাসনে জায়গা নিয়ে নিবে এমং ভয় থেকেও তিনি মুক্তি পাননি। এদিকে আব্দুর রহমান বিন হাবীব আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়াকে হত্যার জন্য খুঁজতে লাগলেন। খবর পেয়ে তিনি চলে যান। এক উপকূলে আশ্রয় নেন।
তিনি কোথায় যাবেন পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। একটাই জায়গা পেলেন আর সেটা হলো আন্দালুস। তিনি সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে লাগলেন। আন্দালুসে তার লয়াল যারা ছিল তাদের সাথে দাস বদরের মাধ্যে সংযুক্ত হলেন। তার সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ করলেন। আন্দালুসে বসবাসরত আত্মীয়দের এক করে তার স্বপ্নের কথা জানালেন এবং তাকে সাহায্য করার জন্য বললেন। সিস্টেমে তিনি আগে তার চারিপাশ অনুকূলের নিয়ে আসলেন, এ জন্য তাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছিল। একজন যুবরাজ যাকে আব্বাসীরা হন্য হয়ে খুঁজছে, খারেজিরা শিয়ারা পাগলের মতন খুঁজছে তার জীবন কেমন যাচ্ছিলো একবার ভাবুন।
দাস বদর আন্দালুসে বসে সবকিছু তার জন্য তৈরি করে যাচ্ছিলেন। রাস্তা ক্লিয়ার করে চিঠি পাঠালেন আব্দুর রহমান ইবনে মুয়াবিয়ার কাছে যে, আপনি এবার আন্দালুসে আসতে পারেন, আপনার সব পথ পরিষ্কার।
তাড়াতাড়ি নৌজান রেডি করে আন্দালুসে পাড়ি জমালেন। আন্দালুসে পা রাখলেন, দাস এসে তাকে নিয়ে গেলেন। এদিকে আন্দালুসের শাসনকর্তা ইউসুফ আল ফিহরী বিদ্রোহ ঠেকাতে ব্যস্ত। আব্দুর রহমান ইবনে মুয়াবিয়ার পদার্পণে সবাই সমবেত হওয়া শুরু করলো। উমাইয়্যারা তো আসলই, সাথে যারা চুক্তি করেছিল তারাও আসলো এবং সমর্থন দিল।
সবাই তার আনুগত্য স্বীকার করলেও আল ফিহরী করলেন না। এতে যুদ্ধ বেঁধে যায়। এবার আন্দালুসের শাসক কে হবে তা দেখার পালা। এক দিকে ইউসুফ আরেকদিকে আব্দুর রহমান। যুদ্ধে তিনি ও তার দল জিতে যায়। আন্দালুসের শাসক এখন তিনি। তিনিই সেই নেতা, উমাইয়্যাদের প্রাণ আব্দুর রহমান আদদাখিল (র)।
যুদ্ধে জিতে তিনি পরাজিত দলকে ধ্বংস করেননি বরং বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি সবার সামনে বলেন, “এমন শত্রুকে শিকড়ে উপড়ে ফেলো না।, ভবিষ্যতে যার হৃদ্যতা প্রত্যাশা কর। তুলনামূলক কঠিন শত্রুর জন্য তাকে টিকিয়ে রাখো।”
মাত্র ২৫ বছর বয়সি এই ছেলেটির মেধা, প্রজ্ঞা, চিন্তাধারা, ন্যায় দেখে সবাই অবাক হয়ে যান। তারপর ইউসুফকে তার দলবল নিয়ে কর্ডোভা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বেঁধে দেন। এরই মধ্যে ইয়েমেনিদের নেতা আব্দুস সবাহ চেয়েছিল ইউসুফকে আক্রমণ করে ক্ষতি করতে কিন্তু আব্দুর রহমান ইবনে মুয়াবিয়া তা হতে দেননি। এ কারণে সে তার সাথে যুদ্ধ করতে চায় কিন্তু তার গোত্রে কাউ তাকে সাহায্য করেনি। আব্দুর রহমান খবর পেলেও তিনি কোনো একশনে যাননি কারণ তিনি চাচ্ছিলেন মুসলিমদের আগে এক করতে, এটাই একজন নেতার মূল লক্ষ্য।
সব দিক শান্ত করে এবার তিনি প্রবেশ করলেন কোর্ডোভার সিংহাসনে। আদদাখিল অর্থ প্রবেশকারী, তিনিই হলেন প্রথম উমাইয়্যাদের কেউ যিনি শাসক হিসেবে কর্ডোভার প্রবেশ করেছিলেন। ৭৫৫ খৃষ্টাব্দে তিনি সিংহাসনে বসেন এবং উমাইয়্যাদের রাজত্ব আবারও নতুন করে শুরু হয়।
ক্ষমতায় এসে তিনি আগে বিদ্রোহগুলো দমন করে শান্তি নিয়ে আসলেন। যারা আপন হতে চেয়েছে তাদেরকে কাছে টেনেছেন আর যারা আসতে চায়নি তাদেরকে যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিহত করেছেন। ক্ষমতায় থাকার বেশিরভাগ সময় তাকে বিদ্রোহ দমনে লড়তে হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে জীবনে ২৫টিরও বেশি অভ্যুত্থান তিনি দমন করেছিলেন যার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল ৭৬৩ খৃষ্টাব্দে আব্বাসীদের প্ররোচনায় অভ্যুত্থানটি। আব্বাসী দ্বিতীয় খলিফা আবু জাফর আল মানসুর আলা বিন মুগীসকে আন্দালুসে পাঠান যাতে তিনি আন্দালুসকে আব্বাসিদের ছায়াতলে নিয়ে আসেন আব্দুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে।
সৈন্যদল নিয়ে সেখানে পৌঁছালে বেচারা গোহারা হারে উমাইয়্যাদের কাছে। আব্বাসীরা অবাক হয়ে যায়।খলিফা তার দরবারে আব্দুর রহমান ইবনে মুয়াবিয়া আদদাখিললে “কুরাইশি বাজপাখি” হিসেবে ঘোষণা দেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “তিনি একাকী পাড়ি দিয়েছেন উত্তাল সমুদ্র, অতিক্রম করেছেন বিজন মরুভূমি, একাকী প্রবেশ করেছেন এক অনারব্য ভূমিতে, এরপর আবাদ করেছেন শহর-নগর, প্রস্তুত করেছেন সুদক্ষ সেনাবাহিনী, দফতর-বিভাগ, কেন্দ্রবিচ্ছিন হয়েও আপন সহজাত নেতৃত্বগুণ, সপরিকল্পনায় গড়ে তুলেছেন এক সুবিশাল রাষ্ট্র।”
এবার আব্দুর রহমান দৃষ্টিপাত দেন তার রাষ্ট্রের দিকে। প্রথমেই তিনি তার সৈন্যবাহিনী মজবুত করে গড়ে তোলেন। অন্যের দারস্থ না হয়ে নিজেই অস্ত্রের কারখানা বানান। গড়ে তোলেন পৃথিবীর দুর্দান্ত নৌবাহিনী। সেভিল, বার্সেলোনা, আলমারিয়া, তোরতোশা ইত্যাদিতে নৌবন্দর স্থাপন করেন।
তারপর তিনি শিক্ষাখাতে উন্নত করতে লেগে পড়েন। জ্ঞানচর্চাকে সহজ করে দেয়ার প্রচেষ্টা করেন এবং সবার জন্য সেই সুযোগ করে দেন কোর্ডোভার স্থাপনা করা হয় একটি বিশাল মসজিদ, প্রত্যেক খলিফাই এটায় আয়তন প্রতিবার বাড়িয়েছেন। তার শাসন থেকেই ইলমের বিকাশ শুরু হয়। আন্দালুসে জন্ম নেয়ার অপেক্ষায় তখন শতশত বিখ্যাত আলেমগণ।
নাগরিকদের সুবিধার্থ তিমি বাড়িঘর, রাস্তা, ব্রিজ নির্মাণ করে দেন। সবার সময় কাটানোর জন্য উদ্যান বানিয়ে দেন। সবাই পরিবার নিয়ে সময় কাটাতেন, অনেক সময় এখানে বসেই দারস হতো।
রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য প্রহরী ব্যবস্থা থেকে শুরু করে তাদের খোঁজখবর নেয়া। মাঝেমধ্যে তাদেরকে দেখতে যাওয়া, সিজনের শুরুতে বা শেষে সামরিক অভিযান করা যাতে শত্রুরা ভয়ে থাকে।
ঐতিহাসিকগণ বলেন, “আব্দুর রহমান না থাকলে আন্দালুস থেকে হয়তো ইসলাম সম্পূর্ণ মুছে যেত।”
আব্দুর রহমান ছিলেন দুর্দান্ত ব্যক্তিসম্পন্ন মানুষ, যেমন ছিল তার কথা তেমন তার কাজ। তিনি আরাম আয়েশে বা ভোগ বিলাসে ডুবে থাকতেন না। নিজের কাজ নিচে করতেন, অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেন না। পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি একাধারে রণাঙ্গনে দুঃসাহসী,, তেজোদীপ্ত; বাগ্মী, কবি, রসিক, সাবলীল বক্তাও। বন্ধু-শত্রু সবাইকে তিনি শ্রদ্ধা করতেন। প্রজাদের খবর নিতেন, তাদের খেয়াল রাখতেন। জুম্মাহর দিনে মিম্বারে খুতবা দিতেন।
মানুষজন ক্ষমতা পেলে তার শেকড় ভুলে যায়, সে অদম্য হয়ে উঠে। এদিক থেকে আব্দুর রহমান ছিলেন ভিন্ন। ক্ষমতা তাকে আল্লাহর ইবাদত থেকে দ্যুরে সরিয়ে নেয়নি। তাকে অহংকারী করে তুলেনি। মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়নি।
দীর্ঘকাল শাসন করার পরও নিজ থেকে কারো সাথে লাগতে যাননি, কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি, তার থেকে নিন্দিত কিংবা সমালোচনার অভিযোগ কেউ করেনি। তার নেতৃত্বের গুণাবলী উৎকৃষ্টতম ছিল। ছোট থেকে মানুষ আদর যত্ন কিংবা স্বপ্নের রাজ্যে বেড়ে উঠে কিন্তু আব্দুর রহমানের জীবন ভিন্ন, তাদের ছোটো থেকেই সংগ্রাম করে বেড়ে উঠতে হয়েছিল। হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিতে হয়েছিল, লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল, নেতৃত্বে গিয়েও শান্তি নাই বিদ্রোহ দমনেই জীবন পার হয়ে যাচ্ছিল। এসবেই মধ্যেও তিনি আন্দালুসকে পৃথিবীর বুকে আলোকিত করে গিয়েছিলেন। ইউরোপে তখনও রাত্রিতে আলোর মুখ দেখেনি যখন আন্দালুসের হাম্মামখানায় বাতি জ্বলছিল।
আরবরা কবিতায় বেশ পারদর্শী ছিলেন। আব্দুর রহমানও ব্যতিক্রমী নয়, জীবনে কবিতা লিখতেন, আবৃতি করতেন এবং শুনতেও ভালোবাসতেন। তার আমলে বিখ্যাত আলেম ছিলেন মুয়াবিয়া বিন সালেহ বিন হুদাইর বিন সাঈদ আল-হাযরামী (র)।তিনি বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিস ছিলেন। সুফিয়ান সাওরী, ইবনে উয়াইনা ও লাইস বিন সা’দ (র) এর মতন জগদ্বিখ্যাত অনেক ইমাম ও মুহাদ্দিস তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। আন্দালুস ছিল মালিকি মাযহাবের ভাণ্ডার, এই অঞ্চলে মালিলী মাযহাব প্রতিষ্ঠিত ছিল।
ব্যক্তি হিসেবে তিনি সত্যিই এক অনন্য মানুষ! কোথা থেকে কোথায় এসেছেন। নিজেকে ঠিক রেখেছেন, পরিবারকে একত্রিত করে একই ছায়ার তলে এনেছেন।যুদ্ধ করে টিকে থেকেছেন যা তার নেতা হিসেবে স্বীকৃত হতে যথেষ্ট।
কুরাইশী বাজপাখি খ্যাত এই মহান নেতা সংগ্রাম করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের ভিত্তিমূল দৃঢ়করণ, দেশের শান্তির জন্য তার জীবন ওয়াকফ ছিল। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলেন কতদিন কে জানে, হয়তো খুব বেশিদিন না। তিনি হলেন সেই বটগাছ যার শেকড় মজুবত থাকার কারণে ৫০০ বছর নির্বিঘ্নে রাজত্ব করেছিলেন উমাইয়্যারা।
আকাশে কত পাখি উড়ে বেড়ায় কিন্তু কুরাইশী সেই বাজপাখিকে এই পৃথিবী আর দেখলো না। অনবদ্য এই মানুষটির ১৯ বছর কেটেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দামেস্ক ও ইরাকে ও ৬ বছর কেটেছে আব্বাসীদের হতে জীবন রক্ষায় পালিয়ে থেকে, এবং ৩৪ বছর আন্দালুস শাসন করে সেখানে ভিত্তিস্থাপন করতে এবং আন্দালুস নামক নতুন এক দুনিয়াকে পৃথিবীতে পরিচয় করিয়ে দিতে। ৭৭৮ খৃষ্টাব্দে মাত্র ৫৯ বছর বয়সে কুরাইশী এই বাজপাখি তথা আব্দুর রহমান ইবনে মুয়াবিয়া আদদাখিল (রাহিমাহুল্লাহ) পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নেন।
এই আন্দালুসই ধিরেস্থিরে সবার জ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ইউরোপের সবাই আসতে থাকে, জ্ঞানার্জন করতে থাকে। বড়বড় আলেমরা এখান থেকেই বেরিয়ে আসেন। আলোকিত এক দুনিয়া ছিল আন্দালুসিয়া। আন্দালুসের সাথে মিশে আছে আব্দুর রহমাম ইবনে মুয়াবিয়ার (র) নাম। আন্দালুস আজ নেই, তবে তার ঐতিহ্য এখনো রয়ে গেছে আর থেকেও যাবে চিরকাল।