‘খোলাফায়ে রাশেদীন’ এর চার খলিফার পরে ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ খলিফা-শাসক ‘উমর ইবনু আব্দুল আযিয’। যাকে বলা হয় পঞ্চম খলিফা তথা দ্বিতীয় ওমর। ইলম, তাকওয়া, তাওয়াক্কুল ও ইনসাফের মূর্ত প্রতিক।
রাসূল (সা.) এর মৃত্যুর ৫০ বছর পর, ৬১ হিজরিতে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ডাকনাম- আবু হাফস, পিতা- আব্দূুল আযিয ইবনু মারওয়ান। তিনি খলিফা মারওয়ান ও আব্দুল মালিক ইবনু মারওয়ান উভয়ের শাসনামলে মিসরে ওয়ালী ছিলেন। মাতা-উম্মু আসিম লায়লা। দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবের পুত্র আসেমের কন্যা।
আমিরুল মুমিনীন উমর (রাদি.) একবার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘কেউ যেন দুধে পানি না মেশায়’। একদিন ওমর (রাদি.) প্রজাদের খোজ খবর নিতে বেরিয়ে পড়লেন, সাথে নিলেন তার গোলাম আসলামকে। চলতে চলতে কিছুদূর গিয়ে একসময় তিনি ক্লান্ত হয়ে গেলেন। তারপর রাস্তার পাশের এক ঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়লেন। অমনি একটি মেয়েলি কন্ঠ তার কানে এসে পৌঁছালো।
একজন মা তার মেয়েকে বলছিলেন, ‘হে মেয়ে! তুমি দুধের সাথে একটু পানি মিশিয়ে দাও।’
মেয়ে বললো, ‘আপনি কি বর্তমান আমিরুল মুমিনীনের নির্দেশ শোনেননি? তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, দুধের সাথে যেন কেউ পানি না মেশায়।”
মা বললো, ‘তুমি দুধের সাথে পানি মিশিয়ে দাও।কেননা তুমি এমন জায়গায় আছো, যেখানে ওমর দেখছে না,ওমরের লোক ও দেখছে না।’
মেয়ে বললো, ‘মা! ওমর আমাদের দেখছে না ঠিকই, কিন্তু ওমরের রব তো আমাদের দেখছেন। আল্লাহর শপথ! আমি তো এমন নই যে, প্রকাশ্যে তার আনুগত্য করবো আর গোপনে তার অবাধ্য হবো।’
সত্য ও ন্যায়ের মানদণ্ড ওমর (রাদি.) এতক্ষণ মা-মেয়ের কথোপকথন শুনছিলেন। অতঃপর তার গোলাম আসলাম কে বললেন, ‘আসলাম! এ বাড়ি ও জায়গাটা ভালোভাবে চিনে রেখো।’ তারপর তিনি ফিরে গেলেন।
পরদিন হযরত ওমর (রাদি.) তার সন্তান আসিম (রাদি.) কে ডেকে বললেন, “তুমি এই মেয়েকে পয়গাম পাঠাও। আমি আশা করছি যে এর পেটে এমন সন্তানের জন্ম হবে যে গোটা আরবের শাসক হবে। আসিম (রাদি.) মেয়েটিকে বিয়ে করে নেন। এই দম্পতির ঘরে উম্মে আসেম নামে এক মেয়ে জন্মগ্রহণ করেন, যিনি উমর ইবনু আব্দুল আযিযের মা।
‘উমর’ ছিলেন সততায় আবু বকর (রাদি.), ন্যায়পরায়ণতায় উমর (রাদি.), লাজুকতা-আখলাকে উসমান (রাদি.), তাকওয়া ও দুনিয়া বিমুখতায় আলী (রাদি.)। উমাইয়া খলিফাগণ যেভাবে মুসলিম উম্মার ঐতিহ্য ও প্রাণসত্তাকে হত্যা করেছিলেন ঠিক তেমনি তিনি সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তা পুনর্জীবিত করেন।
তার পিতা আব্দুল আযিয মিসরের ওয়ালী হওয়ার পরে তার স্ত্রী উম্মু আসিমকে মদিনায় রেখে যান, তখন ‘উমর’ জন্মগ্রহণ করেন। উমরের জন্মের খবর যখন পিতার কাছে পৌঁছে, তখন তার মাকে চিঠি লিখেন পুত্রসহ মিসরে যাওয়ার জন্য। স্বামীর চিঠি পেয়ে উম্মু আসিম তার চাচা আব্দুুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.)র কাছে গিয়ে সবকিছু খুলে বললেন আর পরামর্শ চান। তখন আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) বললেন যে, ‘তুমি মিসরে চলে যাও। তবে উমরকে আমাদের কাছে রেখে যাও। কারণ তোমাদের সবার চেয়ে এই ছেলের সাথে আমাদের মিল বেশি’। চাচার পরামর্শ অনুযায়ী উম্মু আসিম ‘উমর’কে রেখে মদিনায় চলে যান।
তার মা যখন মিসরে পৌঁছেন তখন বাবা আব্দুল আযিয জিজ্ঞেস করেন-‘উমর’ কোথায়?। স্ত্রীর কাছে সবকিছু শোনার পর তিনি ভীষণ আনন্দিত হন। সাথে সাথেই তিনি দামিশকে বড় ভাই খলিফা আব্দুল মালিককে জানিয়ে দেন ‘উমর’ এর ব্যাপারে। খলিফা শিশু ‘উমর’ এর জন্য এক হাজার দীনার মাসিক ভাতা নির্ধারণ করে দেন।
মায়ের সাথে মদিনায় থাকাবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন মা ও নানা আব্দুুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.)র কাছে।যেমন এক বর্ণনায় রয়েছে যে, শিশু উমর তার নানার কাছে যেতেন, ফিরে এসে বলতেন- মা আমি আমার মামার মতো হবো। তিনি মামা বলতে বুঝাতেন আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.)কে।মা আদর করতেন আর বলতেন, ‘চিন্তা করো না।তুমি তার মতই হবে।’
এভাবেই তিনি ইলম-আমলে ভরপুর উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.)র পরিবারে বেড়ে উঠতে লাগলেন। তখন মদিনায় অনেক সাহাবী জীবিত ছিলেন। তারা মসিজদে নববীতে দারস দিতেন। বালক ‘উমর’ ছিলের প্রচণ্ড জ্ঞানপিপাসু। তাই তিনি দু অঞ্জলি ভরে তৃপ্তি সহকারে ইলমের সুধা পান করেন।
কিছুদিন পর ‘উমর’ তার পিতার কাছে মিসরে চলে যান।সেখানে পিতার তত্ত্ববধানে অবস্থান করতে থাকেন। এরই মধ্যে একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেলো! একদিন বালক ‘উমর’ সকলের অগোচরে একাই গাধার পিঠে চড়ে যান এবং এতেই ঘটলো বিপত্তিটা। তিনি গাধার পিঠ থেকে ছিটকে পড়ে গিয়ে আহত হন। এমতাবস্থায় তাকে মায়ের কাছে নিয়ে গেলে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে রক্ত মুছতে থাকেন এবং সাথে কোন প্রহরী না দেয়ার জন্য তিরস্কারও করেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পিতা-মাতা মনে করলেন তার শিক্ষা-দীক্ষা মদিনায় হওয়াই সঙ্গত, তাই তাকে আবার মদিনায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
‘উমর’ পুনরায় মদিনায় চলে আসেন এবং প্রখ্যাত তাবেয়ী সালিহ ইবনু কায়সান (রাহি.)এর সার্বিক তত্ত্ববধানে তার শিক্ষা-দীক্ষা চলতে থাকে। তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করেন ও গড়ে তুলেন। তার প্রমাণ আমরা একটি ঘটনা থেকে উপলব্ধি করতে পারি। একদিন ‘উমর’এর সালাতের জামাতে শরিক হতে একটু বিলম্ব হয়েছিলো। উস্তায সালিহ ইবনু কায়সান (রাহি.) এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দেন যে,-“মাথার চুল ঠিক করতে করতে একটু বিলম্ব হয়েছে”।তখন উস্তাদ বললেন-“চুল ঠিক করার প্রতি যদি এতই আসক্ত হয়ে পড়েছো যে, সালাতের উপর তাকে প্রাধান্য দিচ্ছো?”।
এই বিষয়টা তিনি পিতা আব্দুল আযিযের নিকট চিঠি লিখে জানিয়ে দেন। চিঠি পাওয়া মাত্রই বিলম্ব না করে মদিনায় একটি লোক পাঠিয়ে দেন। লোকটি মদিনায় পৌঁছে প্রথমেই উমরের মাথা নাড়া করে দেয়। তারপর মদিনার অন্যান্য লোকদের সাথে কথাবার্তা বলেন।
তার শৈশবের এ ঘটনা তাকে এতই প্রভাবিত করে যে,পরবর্তীতে সালিহ ইবনু কায়সানকে তার নিজের সন্তানদের জন্য গৃহশিক্ষক নিয়োগ দেন।
‘উমর’ শিক্ষা-দীক্ষার জগতে বেশি মানানসই ছিলেন। কিন্তু রাজপরিবারের সন্তান হওয়াতে খুব দ্রুত ক্ষমতার দন্ডে পরিণত হন। সর্বপ্রথম খলিফা আব্দুল মালিক তাকে খুনাসিরা প্রদেশের ওয়ালী নিযুক্ত করেন। হিজরী ৮৬ সনে খলিফা আব্দুল মালিকের মৃত্যুর পর তার পুত্র ওয়ালীদ ইবনু আব্দিল মালিক খেলাফতের আসন অলংকৃত করেন। তিনি ‘উমর’ এর সততা-বিনয় ও যোগ্যতা সম্পর্ক ওয়াকিফহাল ছিলেন আগে থেকেই। তাই তিনি হিজরী ৮৭ সনে ২৩ রবিউল আওয়াল হিশাম ইবনু ইসমাইলকে অপসারণ করে মদিনার ওয়ালীর পদে ‘উমর ইবনু আব্দিল আযিয’কে নিয়োগ দেন।কিন্তু এই নিয়োগ গ্রহনে তিনি ইতস্ততবোধ করতে থাকেন।তখন খলিফা ওয়ালীদ তাকে ডেকে কারণ জিজ্ঞেস করেন, “উমর! তুমি মদিনায় যাচ্ছ না কেন?”। তিনি উত্তর দেন, “আমার কিছু শর্ত আছে।সে শর্তগুলো গ্রহণ করলে তবেই যাবো”।
খলিফা সেই শর্তগুলো জানতে চান।তিনি বলেন, “আমাকে আগেকার ওয়ালীগণের মতো জুলুম-নির্যাতনের জন্য বাধ্য করতে পারবেন না।” খলিফা ওয়ালীদ তার শর্ত মেনে নিয়ে বলেন যে, “তুমি সততা ও সঠিকভাবে কাজ করবে। যদি বায়তুল মালে একটি দিরহামও জমা না থাকে, কোন পরোয়া করবে না”। অতঃপর এ শর্তের ভিত্তিতে তিনি মদিনায় রওয়ানা হন। সেই সময়ের ‘উমর’ পরবর্তীকালের দুনিয়াবিমুখ দরবেশ ছিলেন না। তিনি তখন রাজপরিবারের সদস্য ও আড়ম্বরপূর্ণ ক্ষমতা-প্রাচুর্য ও বিলাসিতায় পরিপূর্ণ উমর ইবনু আব্দিল আযিয।
তার ব্যবহার্য জিনিসপত্রের বোঝা ত্রিশটি উঠের উপর চাপিয়ে মদিনায় উপস্থিত হন। মদিনার শাহী দালান মারওয়ান ভবনে উঠলেন। যুহরের সালাত শেষে তখনকার দশজন বিখ্যাত আলিম ও ফকিহদের ডেকে পাঠান। তাদের সামনে তিনি একটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বক্তৃতা প্রদান করেন।তার বক্তৃতা শুনে সকলে আনন্দিত হন। শেষে তার জন্য দোয়া করতে করতে সকলে বিদায় নেন। তাবেয়ী কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবু বকর (রাহি.) তার বক্তৃতা শেষে এভাবে মন্তব্য করেন যে, “মদিনায় যারা কথা বলতে পারতো না, তারা কথা বলতে পারবে আজ থেকে। সেই দশজন হলেন-
- উরওয়া ইবনু যুবাইর,
- আবু বকর ইবনু সুলাইমান,
- উবায়দুল্লাহ ইবনু আব্দিল্লাহ,
- আবু বকর ইবনু আব্দির রহমান,
- উতবা ইবনু মাসউদ,
- সুলাইমান ইবনু ইয়াসার,
- মুহাম্মদ ইবনু কাসিম ইবনু আবি বকর,
- সালিম ইবনু আব্দিল্লাহ ইবনু উমর,
- আব্দুুল্লাহ ইবনু উবায়দিল্লাহ,
- খারিজা ইবনু যায়দ
- আব্দুুল্লাহ ইবনু আমির
খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ থেকে এ রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিলো যে খলিফা নিজে আমিরুল হজ্জ হতেন এবং তার সাথে জনগনকে হজ্জপালনে নেতৃত্ব দিবেন। ‘উমর’ মদিনায় থাকাকালে বেশ কয়েকবার এ দায়িত্ব আদায় করেন। হিজরী ৮৭, ৮৯, ৯০, ৯২, ৯৩ সনে তার নেতৃত্বে হজ্জ অনুষ্ঠিত হয়।
মদিনার ওয়ালী থাকাকালে তিনি যে অক্ষয় কীর্তি সম্পাদন করেন তন্মধ্যে সবচেয়ে সেরা কাজটি হলো, ‘মসজিদে নববীর নির্মাণ ও সম্প্রসারণ’। যদিও উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) র খিলাফতকাল থেকে মসজিদে নববীর সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিলো। বিশেষভাবে উসমান (রাদি.)র খিলাফতকালে খুবই জাঁকজমকপূর্ণ করা হয়।তারপর আলী (রাদি.) র খিলাফতকাল থেকে আব্দুল মালিকের সময় পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয় নি। অবশ্য খলিফা আব্দুল মালিক একবার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন কিন্তু মদিনাবাসীর অস্বীকৃতির কারণে তার বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নি।খলিফা ওয়ালীদ এ ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং এ মসজিদকে সম্পূর্ণ নতুন কাঠামো ও শৈলীতে নির্মাণ করার ইচ্ছাপোষণ করেন। দামিশকের জামে মসজিদ নির্মাণ শেষ করে ৮৮ হিজরীতে তিনি উমর ইবনু আব্দিল আযিযকে চিঠি লিখেন যে, “মসজিদে নববী নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।আশেপাশে উম্মুহাতুল মুমিনীনদের যে সকল কামরা ও অন্যান্য বাড়িঘর রয়েছে, তা অর্থের বিনিময়ে অধিগ্রহণ করে মসজিদের সীমানায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে”। উমর ইবনু আব্দিল আযিয (রাহি.) অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনিপুণভাবে খলিফার এ আদেশ বাস্তবে রূপ দান করেন।
মসজিদে নববীর নির্মাণ কাজ ৮৮ হিজরীতে আরম্ভ হয় এবং শেষ হতে সময় লাগে ৯০ হিজরী পর্যন্ত। তার মানে টানা তিন বছর। ৯১ হিজরীতে খলিফা ওয়ালীদ হজ্জ আদায় এবং সাথে নবনির্মিত মসজিদে নববী পরিদর্শনের পরিকল্পনা করেন। তিনি মদিনার নিকটবর্তী হলে ‘উমর’ মদিনার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে অত্যন্ত শানশওকতের সাথে তাকে স্বাগত জানান। খলিফা ওয়ালীদ মসজিদে প্রবেশ করে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন। মূল মসজিদের ছাদের দিকে দৃষ্টি পড়তেই তিনি ‘উমর’কে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, “পুরো মসজিদের ছাদকে এমন করলেন না কেন?”
বললেন-“এতে খরচ অনেক বেশি পড়তো। কেবল দেয়াল ও দুই ছাদের মধ্যবর্তী স্থানের জন্য ব্যয় হয়েছে পঁয়তাল্লিশ হাজার দীনার”।
খলিফা ওয়ালীদের নির্দেশে তিনি মসজিদের লাগোয়া একটি ফোয়ারা ও তৈরী করলেন।হজ্জের সময়ে তিনি এই ফোয়ারা ও পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা দেখে অত্যন্ত খুশি হন। এর জন্যে অনেক কর্মচারী নিয়োগ দেন ও মুসল্লিদের এখান থেকে পানি পান করানোর ও নির্দেশ দেন।
‘উমর’ ওয়ালীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে মসজিদে নববী ছাড়া ও এর আশেপাশে অনেক মসজিদ নির্মাণ করেন। রাসূল (সা.) মদিনায় যেখানে যেখানে সালাত আদায় করেছিলেন সেখানে সেখানে মুসলিমগণ স্মৃতি হিসেবে মামুলিভাবে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তিনি এসে এসকল মসজিদকে সুন্দর কারোকাজ করা মূল্যবান পাথর দ্বারা পুনঃনির্মাণ করেন।
এ ছাড়া ও তিনি আরে অনেক জনকল্যাণমুলক কাজ করেন। বিশেষ করে অনেক কূপ খনন করেন। অনেক দূর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে চলাচলের রাস্তা তৈরী করেন। ‘উমর’এর কর্মদক্ষতায় সন্তুষ্ট হয়ে খলিফা তাকে মদিনার সাথে তায়িফের ওয়ালীর দায়িত্ব ও প্রদান করেন। এরপর ৯০ হিজরীতে গোটা হিজায অঞ্চলের শাসনভার তার হস্তে অর্পণ করেন।
হিজরী ৮৭ সন থেকে ৯৩ সন পর্যন্ত দীর্ঘ সাত বছর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মদিনা, তায়িফ তথা গোটা হিজায অঞ্চলে ওয়ালীর দায়িত্ব পালন করেন। অবশেষে হিজরী ৯৩ সনে উক্ত পদ থেকে সরে দাড়াতে তিনি বাধ্য হন। কারণ শাসনভার গ্রহণ করার সময় খলিফা ওয়ালিদের নিকট তিনি যে শর্তারোপ করেছিলেন, উমাইয়াগণ পরবর্তীতে তার সেই শর্ত রক্ষা করতে পারেনি। আগের মতোই তাকে জুলুম-নির্যাতনের প্রতি বাধ্য করার প্রয়াস চালানো হয়।
তিনি মদিনার ওয়ালী হিসেবে সাত বছর অতিবাহিত করেন।এসময় তিনি সততা, ইখলাস, তাকওয়ার অনন্য দৃষ্টান্তে পরিণত হন। যেমন প্রখ্যাত সাহাবী খাদিমুর রাসূল (সা.) আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) তার সম্পর্কে বলেন, “এই যুবক তথা উমর ইবনু আব্দিল আযিযের চেয়ে রাসূল (সা.) এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সালাত আমি কোন ইমামের পিছনে আদায় করি নি”।
‘উমর’ এর বিদায়ক্ষণে মদিনার যুবক-বৃদ্ধ, আবাল-বনিতা সকলের চোখ অশ্রুতে পূর্ণ ছিলো। এমনকি প্রখ্যাত তাবেয়ী সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব (রাহি.) পর্যন্ত অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি।
মদিনা থেকে দামিশকে তার চাচাতো ভাইদের নিকট চলে আসেন এবং চারবছর সেখানে অবস্থান করেন। সে সময়ে তিনি নির্দিষ্ট কোন কাজ করতেন না। রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে তার কোন কিছুর চিন্তা ছিল না। তবে খলিফা ওয়ালীদ ইবনু আব্দিল মালিক ও খলিফা সুলাইমান ইবনু আব্দিল মালিক শাসনপরিচালনার সময় গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি ও শাসনকার্যের বিষয়ে তার সাথে পরামর্শ করতেন। তিনি ছিলেন স্পষ্টবাদী। ন্যায়সঙ্গত কথা বলতে কাউকে পরোয়া করতেন না।
একবার খলিফা সুলাইমান উমরের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হন।এক পর্যাায়ে উমরকে বললেন, “আপনি মিথ্যা বলছেন”।জবাবে ‘উমর’ বললেন, “আপনি বলছেন আমি মিথ্যা বলছি।অথচ আমি যেদিন থেকে কাপড় পরা শুরু করেছি, সেদিন থেকে কখনো মিথ্যা বলিনি। জেনে রাখুন! আপনার এই মজলিসের তুলনায় দুনিয়া অনেক বিস্তৃত ও প্রশস্ত”। এই বলে তিনি প্রসাদ থেকে চলে যান এবং মিসর যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন।
এ খবর পেয়ে খলিফা সুলাইমান অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে তার কাছে ছুটে এলেন এবং বলেন, “আপনার মিসর যাওয়ার সংকল্প আমাকে যতটা কাতর করে ফেলেছে, জীবনে কখনো অতটা কাতর হইনি”। কেবল খলিফারাই না।উমাইয়া বংশের প্রায় সকল লোকই সর্ব প্রকার সমস্যা ও জটিলতা সমাধানের জন্য তার স্মরনাপন্ন হতো। তার সমাধানুযায়ী কাজ করা হত।
‘উমর’ স্বীয় গুণ ও সৎ স্বভাবের কারণে উমাইয়া বংশের সকল লোকের প্রীতিভাজন ছিলেন। বিশেষভাবে খলিফা সুলাইমানের তার উপর এত আস্থা ছিল যে তাকে উপদেষ্টা ও মন্ত্রীর সম্মান দিতেন। এমনকি ৯৬ হিজরীতে সুলাইমানের খিলাফাত গ্রহণের সময় দামিশকবাসী তার পক্ষে ‘উমর’ এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন। খলিফা আব্দুল মালিক যখন তার পুত্র সুলাইমানকে খিলাফাতের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চান তখন তিনি নির্ভীক চিত্তে এর প্রতিবাদ করেন। তাই সবকিছু মিলিয়ে সুলাইমানের ছিলো তার প্রতি অগাধ আস্থা ও ভরসা।
৯৯ হিজরীর সফর মাসে প্রথম জুমার দিন খলিফা সুলাইমান দাবিক নামক স্থানে ছিলেন। দাবিক হলো হালবের নিকটবর্তী একটি সেনা ছাউনি। রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় বনু উমাইয়া সেখানে অবস্থান করতো। এ সময় খলিফা তার ভাই মাসলামা ইবনু আব্দিল মালিকের নেতৃত্বে কনস্টিন্টেপলে অভিযানে পাঠান। তো এখানে অবস্থানকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তার জীবন নিয়ে যখন হতাশ হয়ে যান তখন পরবর্তী খলিফা মনোনয়ন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।কিন্তু কাকে করবেন? এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত তাবেয়ী রা’জা ইবনু হায়য়ান (রাহি.)র সাথে পরামর্শ করেন। তিনি ছিলেন খলিফার একজন ঘনিষ্ঠজন এবং উপদেষ্টা। সুলাইমান তাকে বললেন, “এই খিলাফাত মনোনয়নের ব্যাপারে আপনার মত কি? কাকে দিলে ভালো হয়?”।
রা’জা বললেন, “প্রকৃত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক তো আপনি।আপনি কারো নাম বলুন।আমি ভেবেচিন্তে বলবো।”
সুলাইমান বললেন, “উমর ইবনু আব্দিল আযিয” এর ব্যপারে কি বলেন?”
রা’জা বললেন, “আমি মনে করি উমর একজন জ্ঞানী ও তাকওয়াবান মুসলমান।”
অতঃপর সুলাইমান বললেন, “আল্লাহর কসম! সে এমনই।কিন্তু আমি যদি আব্দুল মালিকের সন্তানদের উপেক্ষা করে ‘উমর’কে মনোনয়ন করতে যাই, তাইলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।যদি তারপরে আব্দুল মালিকের কোন পুত্রে নাম প্রস্তাব না করে যাই, তবে তাকে খিলাফাতের মসনদে আসীন হতেই দিবে না। তাই তার পরে ইয়াযিদ ইবনু আব্দিল মালিককে মনোনিত করে যাচ্ছি।”
রা’জা তখন একমত পোষণ করেন। এরপর খলিফা একটি অঙ্গীকারনামা লিখলেন। এতে তিনি ‘উমর’কে খলিফা মনোনিত করার ঘোষণা লিখেন আর এর পরবর্তী খলিফা ইয়াযিদের নাম ও উল্লেখ করেন। অঙ্গীকার পত্র লিখার পর এতে সীলমোহর করে দেন। তারপর উমাইয়া গোত্রের সকলকে একত্রিত করেন এবং ভাষণ দেন। এতে তিনি তাদেরকে বললেন-“সীলমোহরকৃত চিঠির উপর যাকে খিলাফাতের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাকে যেন সবাই মেনে নয়।”
সমস্বরে সবাই সামি’না ওয়া আতা’না তথা-শুনলাম ও মেনে নিলাম বলে জবাব দেন। আবার সুলাইমান প্রত্যেকের নিকট থেকে পৃথক পৃথক বায়আত গ্রহণ করেন।
খলিফা মনোনয়নের পর্ব শেষ হওয়ার পরেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রা’জা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সুলাইমানের মৃত্যুর খবর ও খলিফা মনোনয়নের বিষয়টি গোপন রাখলেন।তিনি দ্বিতীয়বার দাবিক জামে মসজিদে রাজপরিবারের সবাইকে সমবেত করেন। অতঃপর সবাইকে তিনি বলেন-“আমিরুল মুমিনীনের এই মনোনয়ন পত্রে যার নাম আছে,তার প্রতি আপনারা দ্বিতীয়বার বায়আত করুন। এটা খলিফার নির্দেশ।”
এরপর একে একে সকলে বায়আত করেন তার হাতে। এভাবে বায়আত নিশ্চিত করে খলিফা সুলাইমান ইবনু আব্দিল মালিকের মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করেন। তারপর মনোনয়ন পত্রটির সীল মোহর খুলে সবাইকে পাঠ করে শোনান।’উমর ইবনু আব্দিল আযিয’ তার নাম শ্রবণমাত্র এই অপ্রত্যাশিত বিশাল বোঝা তার কাধে অর্পিত হওয়ার দরুণ ইন্না লিল্লাহ.. পড়তে লাগলেন। রা’জা ‘উমর’কে মিম্বারে বসিয়ে দেন। এরপর একে একে সকলে তার কাছে বায়আত গ্রহণ করেন। সবশেষে সুলাইমানের কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করেন। নতুন খলিফা ‘উমর’ তার জানাজা পড়ান।
‘উমর ইবনু আব্দিল আযিয’ ৯৯ হিজরী সনের সফর মাসের ১১ তারিখ শুক্রবার খিলাফাতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি একটি ভাষণ দেন সবার উদ্দেশ্যে। ভাষণ শেষ হওয়া মাত্র সকল জনতা সমস্বরে চিৎকার করে বলতে থাকেন-“আমরা আপনাকে খলিফা নির্বাচন করেছি। আপনার খিলাফাতেই আমরা সন্তুষ্ট। আল্লাহর নাম নিয়ে আপনি কাজ শুরু করুন।”
খিলাফাতের মসনদে আসীন হওয়ার পর তিনি সম্পূর্ণ বদলে গেলেন। রাজপরিবারের সেই সৌখিন ‘উমর’ এখন দুনিয়াবিমুখ আবু যার গিফারী (রাদি.) ও আবু হুরায়রা (রাদি.) রূপধারণ করেন। তার নিজের জায়গীরসহ অন্যদের যে সব জায়গীর রাজবংশের দখলে ছিল; তার সবগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগার বায়তুল মালে জমা দেন। এ পরিবর্তনের ফলে যা ঘটে তাঁর মূল্যয়ন হলো- ‘তাঁর বার্ষিক আয় ৫০ হাজার আশরাফি থেকে নেমে তা ২ হাজার আশরাফিতে পৌছে। বায়তুল মালের অর্থ তিনি তাঁর নিজের ও নিজ খান্দানের জন্য হারাম করে দেন। এমনকি খলিফা হিসেবে তিনি রাজ ভাণ্ডার থেকে বেতনও গ্রহণ করেননি।
রাজত্ব লাভ করার পর তিনি তার নিজের জীবনাচারই পরিবর্তন করে ফেলেন। যেখানে রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার আগে তিনি শান-শওকতপূর্ণ জীবন-যান করতেন; সেখানে খলিফা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি গরিবি হালতে চলে যান। খলিফা হওয়ার আগে যেখানে তিনি হাজার দিরহাম মূল্যের পোশাকও তাঁর পছন্দ হতো না সেখানে খলিফা হওয়ার পর তিনি ৪/৫ দিরহাম মূল্যের পোশাককেও তিনি নিজের জন্য অনেক দামি মনে করতেন।
তিনি রাষ্ট্রীয় সংস্কার কাজে হাত দেওয়ার পর প্রথমেই তিনি জাকজমকপূর্ণ রাজকীয় ফেরাউন, কিসরা ও কাইসার সরকারদের রাষ্ট্রীয় নিয়ম-রীতি বন্ধ করে দেন। প্রথম দিনেই তিনি রাজযোগ্য সবকিছুই পরিত্যাগ করে মুসলমানদের মধ্যে তাদের খলিফা পরিচালিত শাসন পদ্ধতি চালু করেন।
রাষ্ট্র ক্ষমতায় আরোহন করে তিনি যে সব কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করেন। সেগুলো হল:-
- তৈরি করেন দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
- অত্যাচারী গভর্ণরদেরকে বরখাস্ত করেন।
- গভর্ণরের দায়িত্ব পালনের জন্য সৎলোকদেরকে অনুসন্ধান করে বের করে আনেন।
- যে সব প্রশাসনিক কর্মচারীবৃন্দ নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রজা সাধারণের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুর ওপর অনধিকার হস্তক্ষেপ করেছিল; তাদেরকে তিনি আইনের আওতায় নিয়ে আসেন এবং আইনের শাসন বাস্তবায়ন করেন।
- রাষ্ট্রীয় কোষাগার বাইতুল মালে কর নির্ধারণ ও জমার সব নিয়ম-নীতি পরিবর্তন করেন।
- আবগারী করসহ বনি উমাইয়া প্রশাসকগণ যে সব অবৈধ ও অন্যায় কর নির্ধারণ করেছিলেন; তিনি তা ক্ষমতারোহনের সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করে দেন।
- জাকাত আদায়ের যে ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, তা নতুনভাবে সংশোধণ করেছিলেন।
- বায়তুল মালের অর্থকে সাধারণ মুসলমানের কল্যাণের জন্য ওয়াক্ফ করে দেন।
- রাষ্ট্রের অমুসলিম প্রজাদের সঙ্গে সঙ্গে যে সব অন্যায় আচরণ করা হয়েছিল, তার প্রতিকার করেন।
- অমুসলিমদের যে উপাসনালয় অন্যায়ভাবে দখল করা হয়েছিল, সেগুলো তাদেরকে ফিরিয়ে দেন।
- অমুসলিমদের যে সব জমি ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল, তাও তিনি তাদেরকে ফেরত দেন।
- ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে তাদের প্রাপ্য যাবতীয় সুবিধা প্রদান করেন।
- রাষ্ট্রের বিচার বিভাগকে সরকারের শাসন বিভাগের অধীনতা থেকে মুক্ত করেন।
.
তাঁর অল্প দিনের শাসন ব্যবস্থা অর্ধ শতাব্দীর জাহেলি রীতি-নীতি অপসারিত হয়। বন্ধ হয়ে যায় বিকৃত আকিদা-বিশ্বাসের প্রচার ও প্রসার। ব্যাপকভাবে জনগণের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। কুরআন হাদিস ও ইলমে ফিকহার শিক্ষা ব্যবস্থা বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে আকৃষ্ট করে।
.
যার ফলে হজরত ইমাম আবু হানিফা, মালিক, শাফেয়ী ও আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতো জগৎ বিখ্যাত বিদ্যান ব্যক্তিদের আবির্ভাব হয়। ‘উমর’ এর শাসনামলে অবস্থা এতটাই উন্নত হয় যে, ৪ জন লোক একত্রিত হলেই সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ও কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কিত আলোচনা শুরু হয়ে যেত।
.
তার সময়ে পাশ্ববর্তী অনেক রাষ্ট্র ইসলাম গ্রহণ করে। ইসলামের প্রভাবে মুসলমান হয় অসংখ্য মানুষ। যার প্রভাব পড়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। দীর্ঘ দিন ধরে সংঘাত লেগে থাকা রোম সম্রাজ্যের ওপর বিরাট নৈতিক প্রভাব পড়েছিল।
.
এভাবে দক্ষতার সাথে ন্যায় ও ইনসাাফের সাথে দীর্ঘ আড়াই বছর গোটা মুসলিম সম্রাজ্যশাসন করেন।এই সংক্ষিপ্ত রাষ্ট্র ক্ষমতা তাঁর সম্রাজ্যে বিশাল পরিবর্তন সাধিত হয়। এই পরিবর্তনের শুরু থেকেই উমাইয়ারা তার বিরুদ্ধতা করে আসছিলো। তারা ষড়যন্ত্র করে উমর ইবনে আব্দুল আযিযকে বিষ পান করিয়ে ১০১ হিজরিতে হত্যা করে। ৩৯ বছর বয়সে মুসলিম উম্মাহর এই মহান কাণ্ডারি আলিম তাবেয়ী ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ উমর ইবনু আব্দিল আযিয তার মহান রব্বের কাছে ফিরে যান।
(রাহিমাহুল্লাহ)