তুরস্কে পড়াশোনার জন্য পূর্ণ বৃত্তি পাওয়া কি সম্ভব? বিমান খরচ, টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া, স্বাস্থ্যবীমা, মাসিক পকেটমানিসহ সবকিছু বহন করে এমন কোনো বৃত্তি কিভাবে পেতে পারি? ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পাওয়া কি খুব কঠিন? এমন স্কলারশিপ পেতে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে? Statement of Purpose কীভাবে লিখবো? Reference Letter কীভাবে লিখবো? কার থেকে নিবো? এগুলোর কোনো স্যাম্পল দিবেন! এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস কি? এগুলোর সার্টিফিকেট কতটি লাগবে? সার্টিফিকেট না থাকলে কী করবো? এমন হাজারও প্রশ্ন আসে প্রতিদিন। তাই এই বিষয়ের খুটিনাটি নিয়ে আজকের এই লেখা। আপনি যদি তুরস্কে সরকারি বৃত্তি নিয়ে পড়তে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে এই লেখাটি পড়া উচিত।
তুরস্ক সরকার প্রতি বছর সারা বিশ্বের পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। আজ আমি তুর্কি সরকারের এই স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলাপ করবো। এই স্কলারশিপকে তুর্কি ভাষায় ‘তুর্কিয়ে বুরসলারি’ (TÜRKİYE BURSLARI) বলে। যাক, আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মূল কথায় চলে যাওয়া যাক।
১. কাদের জন্য এই স্কলারশিপ:
বাংলাদেশী শিক্ষার্থীসহ বিশ্বের সকল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত এই স্কলারশিপ।
২. যা যা থাকছে স্কলারশিপে:
-সম্পূর্ণ টিউশন ফি।
-মাসিক বৃত্তি- অনার্সের জন্য ৩৫০০ লিরা, মাস্টার্সের জন্য ৫০০০ লিরা এবং পিএইচডির জন্য ৬৫০০ লিরা এবং পোস্ট-ডক রিসার্চ এর জন্য ১২০০০ লিরা।
-মূল কোর্স শুরু হওয়ার আগে এক বছরের ফ্রি তুর্কি ভাষা শিক্ষা কোর্স।
-সরকারি/বেসরকারি ডর্মিটরিতে বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা (সকাল ও রাতের খাবারসহ)
-প্রথমবার আসা ও কোর্স শেষে নিজদেশে যাওয়ার বিমান টিকেট (তার্কিশ এয়ারলাইন্সে)।
-স্বাস্থ্যবীমা।
-মাস্টার্স ও পিএইচডি এর জন্য বাসা ভাড়া বাবদ মাসিক ৪০০০ লিরা।
৩. আবেদনকারীর যোগ্যতা:
-আপনি তুরস্কের নাগরিক নন।
-তুরস্কের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ভর্তি হন নাই।
-আপনি স্নাতক, স্নাতকোত্তর, পিএইচডি কিংবা রিসার্চ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে ইচ্ছুক।
-আপনার এসএসসি/দাখিল, এইএইচসি/আলিম পরীক্ষায় ৭০% মার্ক থাকে তাহলে অনার্সের জন্য, আর উল্লেখিত পরীক্ষাগুলো এবং অনার্সে ৭৫% মার্ক থাকে তাহলে মাস্টার্সের জন্য, আর মাস্টার্সসহ সকল পরীক্ষায় ৭৫% মার্ক থাকে তাহলে পিএইচডির জন্য আবেদন করতে পারবেন, তবে মেডিকেল ছাত্রদের বেলায় ৯০% মার্ক থাকা লাগবে*।
বি:দ্র:- অনার্সের জন্য: এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ৭০% মার্ক সমান বাংলাদেশের জিপিএ- ৩.৪০।
মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য: এসএসসি ও এইচএসসিতে ৭৫% মার্ক সমান বাংলাদেশের জিপিএ-৩.৬৭ এবং অনার্সে সিজিপিএ-২.৯৩ (মাস্টার্সের জন্যেও প্রযোজ্য)। মেডিকেলের জন্য ৯০% মার্ক সমান জিপিএ-৪.৪৫।
*বয়স-
-স্নাতকের জন্য আবেদন করতে বয়স হতে হবে ২১ বছরের নিচে।
-স্নাতকোত্তর জন্য আবেদন করতে বয়স হতে হবে ৩০ বছরের নিচে।
-পিএইচডির জন্য আবেদন করতে বয়স হতে হবে ৩৫ বছরের নিচে।
-রিসার্চ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে বয়স হতে হবে ৪৫ বছরের নিচে।
বি: দ্র:- সাধারণত তার্কিশ স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য IELTS/TOFEL এর দরকার হয় না, তবে আপনি যে সকল ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করবে, যদি ঐ সকল ইউনিভার্সিটির রিকোয়ারমেন্টে IELTS/TOFEL চেয়ে থাকে তাহলে IELTS/TOFEL স্কোর লাগবে। তবে আপনার যদি ইতিমধ্যে IELTS/TOFEL, GRE, GMAT ইত্যাদি করা থাকে তাহলে তা অবশ্যই আবেদনের সময় তার স্কোর ও সার্টিফিকেট সাবমিট করবেন।
৪. আবেদনের সময়কাল:
প্রতি বছর ১০ জানুয়ারিতে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ২০ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়। ২০২৩ সালে ১০ জানুয়ারিতে এপ্লিকেশন নেয়া শুরু হয়েছে, চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে পরামর্শ থাকবে শুরুর দিকে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। কারণ শেষের দিকে এপ্লিকেশন সার্ভার ডাউন হয়ে যায়।
৫. আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
-জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট বা জন্ম সনদের ইংরেজি কপি। (আমি পাসপোর্টকে প্রাধান্য দিবো)
– প্রাতিষ্ঠানিক সকল পরীক্ষার সনদপত্র।
-প্রাতিষ্ঠানিক সকল পরীক্ষার ট্রান্সক্রিপ্ট।
-সদ্যতোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
-IELTS/TOFEL, GRE, GMAT ইত্যাদির সার্টিফিকেট। (যদি আপনার আবেদনকৃত বিশ্ববিদ্যালয় সেগুলো চেয়ে থাকে)
-দুইটি রেফারেন্স লেটার।
উপরোক্ত সকল ডকুমেন্ট স্ক্যান করে পিডিএফ ফাইল বানিয়ে আপলোড করতে হবে।
– এবং Statement of Purpose (SOP) এবং কিছু প্রশ্নের উত্তরের উপর ভিত্তি করে Letter of Intent. (এগুলো আবেদনের সময় সরাসরি লিখতে হবে, আলাদা কাগজে লিখে আপলোড করতে হবে না)
৬. আবেদন পদ্ধতি:
আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে। এই প্রক্রিয়া খুবই সহজ, তবে একটু দীর্ঘ সময়ের কাজ। তুর্কিয়ে বুরসলারির ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার সচল একটি ইমেইল দিয়ে একাউন্ট খুলে একে একে সকল তথ্যাবলি দিয়ে পূরণ করতে থাকুন। একাউন্ট ওপেন করার জন্য আবেদনের লিংককে গিয়ে Register এ ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী দিবেন। একজায়গায় Secret Question দেখবেন, সেখানে আপনার নিজের মতো করে একটি প্রশ্ন করবেন, এবং নিজেই উত্তর দিবেন, যেন পরবর্তীতে এইগুলো দিয়ে আইডি রিকভার করতে পারেন। আপনার রেজিস্ট্রার করার পর আপনার ইমেইলে একটি ভেরিফিকেশন লিংক পাঠানো হবে, তাতে ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন কনফার্ম করবেন। তারপর আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করবেন।
এই তো, লগিন করে বাম পাশের অপশনের তথ্যগুলো একে একে পূরণ করবেন। এক স্টেপ শেষ করে সেভ দিয়ে আরেক স্টেপে চলে যাবেন। খুবই সহজ পদ্ধতি। আর হ্যাঁ, আপনাকে কিন্তু একবারেই সমস্তটা পূরণ করতে হবে না। যখনই সময় হবে, ঠান্ডা মাথায় একাউন্টে লগ ইন করে একে একে সমস্ত তথ্য পূরণ করতে পারেন। যত খুশি ততবার লগ ইন করতে পারবেন। সুতরাং খুব জলদি করতে হবে, একদিনেই করতে হবে এমন কিন্তু না। সকল সার্টিফিকেট, মার্কশীট, রেফারেন্স লেটার, অন্যান্য সার্টিফিকেট পিডিএফ করে আপলোড করবেন। (এপ্লিকেশন সাইটে যেখানে Diploma লেখা দেখবেন, সেখানে সার্টিফিকেট আপ করবেন)।
বামপাশের অপশনগুলোর কোনোটা যদি রেড বা লাল স্টার চিহ্ন থাকে, তাহলে আপনি সামনে আগাতে পারবেন না। এগুলো Mandatory Option. সব ফিলাপ করে Home অপশনে ক্লিক করলে আপনাকে স্কলারশিপের নোটিশ দেখাবে। সেখান থেকে এপ্লাইতে ক্লিক করে বাকি কার্যক্রম শেষ করবেন। অর্থাৎ, সাবজেক্ট, ইউনিভার্সিটি সিলেক্ট করা, SOP, Letter Intent লেখা ইত্যাদি।
হাতে সময় নিয়ে করুন, আবেদনের শেষ সময়ে করবেন না। এপ্লিকেশন লিংকে Statement of Purpose এবং Letter Intent লেখার অপশন থাকবে, ধীরে ধীরে এগুলো পূরণ করবেন। আপনার Extra-Curricular Activities, Social Works, Award কিংবা Volunteering কার্যক্রমের সার্টিফিকেট থাকলে তা আপলোড করার অপশন থাকবে এবং সেগুলোর ছোট বর্ণনাও লিখতে হবে।
সকল ডকুমেন্ট আপলোড করার পর আপনার আপলোডকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আপনাকে সাবজেক্ট ও ইউনিভার্সিটির লিস্ট দেয়া হবে। আপনি সেখান থেকে সর্বোচ্চ ১২টি ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করতে পারবেন। অবশ্যই আপনি গুগল করে সরবাহকৃত ইউনিভার্সিটিগুলোর র্যাঙ্কিংসহ বিস্তারিত জেনে নিবেন। মনে রাখবেন আপনি প্রথম পছন্দ যে ইউনিভার্সিটি দিবেন, সেটাকেই অথোরিটি বেশি প্রায়োরিটি দিবে। তবে ব্যতিক্রমও হয়। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রমটিই হয়েছে।
সম্পূর্ণ পূরণ করার পর আপনি ফাইনাল চেক করার সুযোগ পাবেন এবং প্রয়োজনীয় এডিট করে সাবমিট করবেন।
৭. স্কলারশিপ প্রাপ্তির জন্য সহায়ক কার্যক্রম:
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কারভাবে জেনে রাখুন, তার্কিশ স্কলারশিপ কেবলমাত্র রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে দেয়া হয় না। রেজাল্ট অবশ্যই একটা বিবেচ্য বিষয়, তবে স্কলারশিপ কমিটি আপনার রেজাল্টের পাশাপাশি আপনার এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস, ভলেন্টিয়ারিং কার্যক্রমের উপর বেশ নজর দিবে। এখানে Extra-Curricular Activities বলতে কনফারেন্স, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সোশ্যাল ওয়ার্ক, সামার ক্যাম্প, ভলেন্টিয়ারিং কার্যক্রম ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের কথা বলতেছি। এছাড়াও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তব্য, কবিতা আবৃতি, রচনা লিখন, ড্রয়িং, গনিত অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণও সহায়ক কার্যক্রম।
অনেকে জানতে চান এমন সহায়ক কতটি সার্টিফিকেট লাগবে? আমি এর উত্তরে বলি এর কোনো লিমিটেশন নাই। বাঁধাধরা নিয়মও নাই। আপনি যতগুলোতে অংশগ্রহণ করেছেন সকল সার্টিফিকেট আপলোড করবেন। তবে এখানে বলে রাখা ভালো আপনি যে সাবজেক্টের জন্য আবেদন করেছেন সেই সাবজেক্ট রিলেটেড প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সার্টিফিকেট দিতে পারলেই বেশি ভালো। তবে আপনার যদি কোনো সার্টিফিকেটই না থাকে তাহলে কি আপনি এপ্লাই করবেন না? আমি বলবো তবুও এপ্লাই করুন। কারণ ভলেন্টিয়ারিং এর সার্টিফিকেট না থাকলে আপনি এপ্লিকেশন পোর্টালের Description এ কি নিয়ে কাজ করছেন, তার বর্ণনা লিখে দিলেই হবে। তবে অবশ্যই এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস আপনাকে স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে।
৮. Letter of Intent কি?
তুর্কি সরকারি স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই লেটার অফ ইন্টেন্ট। এবার আসুন জেনে নিই আসলে লেটার অফ ইন্টেন্ট কি জিনিস। লেটার অফ ইন্টেন্ট চাকরির ক্ষেত্রে এক রকম আর স্কলারশিপের ক্ষেত্রে আরেক রকম। তবে তার্কিশ স্কলারশিপের ক্ষেত্রে LoI বলতে বুঝায়, এই অপশনে ৫/৬টি প্রশ্ন থাকবে। যেগুলো আপনি কি নিয়ে থিসিস করতে চান এই সম্পর্কিত। প্রতিটি প্রশ্নে আপনার বিষয় সম্পর্কিত কিংবা আপনার পছন্দের টপিকে থিসিসের বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। এই যেমন আপনার থিসিসের নাম, অবজেক্টিভ, রিসার্স মেথড, লিটারেচার রিভিউ, কন্ট্রিবিউশন ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। অবশ্যই প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরের জন্য শব্দের সীমাবদ্ধতা (Word Limit) থাকবে। আমি আপনাদেরকে প্রশ্নগুলোর স্যাম্পল দিচ্ছি, তা দেখে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিবেন।
- Subject of Study
এই প্রশ্নের উত্তরে মূলত আপনি যে বিষয়ে থিসিস করতে চান, সে বিষয়ের নাম লিখবেন।
- Working Title(Up to 15 words) (Please writes in short f and concise terms the title of your work as a thesis or an article title).
এখানে আপনি যে বিষয়ে থিসিস করবেন বা আর্টিকেল লিখবেন, সে বিষয়ের টাইটেল বা শিরোনাম লিখবেন। তবে এটা বাধ্যতামূলক না আপনি এখানে যে টাইটেল লিখবেন, সে বিষয়ে আপনাকে থিসিস করতে হবে। এটা কেবল আপনার রিসার্স অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা বুঝার জন্য নিচ্ছে। সুতরাং আপনি একটি বিষয় ঠিক করে টাইটেল লিখুন এখানে।
- The Analysis of the issue/problem(Please state the subject which you will deal with in your study and your theory.) (Minimum 75, maximum 300 words)
আপনি উপরে থিসিস করার জন্য যে টাইটেল লিখেছে, সেটার অবজেক্টিভ বা লক্ষ্য কি তা লিখবেন। প্রকৃতপক্ষে কোন বিষয়ে নিয়ে আপনি কাজটা করতে চাচ্ছেন, তা নিয়ে লিখবেন। Kind of Abstract লেখার মতো।
- Research Method(Please provide details concerning the Methods of research you are planning to use in this study. For example, in depth interviews, observations, surveys, trials, etc.) (Minimum 75, maximum 300 words)
আপনি রিসার্সটি কোন মেথডে করবেন তা লিখতে হবে এই অপশনে। আপনি কি Qualitative Method এ করবেন নাকি Quantative Method এ করবেন নাকি উভয়ের সমন্বয়ে করবেন তা বলবেন। যদি ইন্টারভিউ বা সার্ভে করেন তাও উল্লেখ করবেন। মূলত আপনার Research Methodology লিখবেন।
- The general structure of the study(please state the main headings of the study)(min75, max 300 words)
এখানে আপনার থিসিসের টেবিল অব কন্টেন্ট লিখবেন। আপনার থিসিসে কয়টি চ্যাপ্টার থাকবে, কি কি বিষয় মূল হেডিং থাকবে। কোনো অধ্যায়ে কি নিয়ে আলোচনা করবেন, এসব বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।
- The academic contribution of the study(please explain what type of contribution this study will make to the field in the academic sense(min 75, max 300 words)
এই অপশনে আপনার থিসিস একাডেমিক ফিল্ডে কি ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে, কি অবদান রাখবে, কি রেজাল্ট হবে এগুলো লিখবেন। এককথায় এই থিসিসের আউটপুট কি তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
- Literature review(please state the principal academic resources which have been written in the field of this study and which you will utilize)(min 75, max 300 words)
এই অপশনে লিটারেচার রিভিউ লিখতে হবে। আপনি এই থিসিস করতে গিয়ে কোন কোন বই বা আর্টিকেল থেকে পড়াশোনা করেছেন বা করবেন, আপনার এই টপিকে আগে কি কি কাজ হয়েছে তাও উল্লেখ করতে পারেন।
Additional Item:
If you have a subject in your application documents that you think is not clear enough and you want to explain, or if you want to draw the attention of the evaluation committee, please briefly explain in this section. You can write the description in the language you can express yourself. (3000 Characters)
আপনি পুরো এপ্লিকেশনের সব পূরণ করার পর মনে করেন যে আরো কিছু বলার দরকার, তাহলে এই অপশনে বলে দিতে পারেন। যেমন, আপনার ফিনান্সিয়াল নিড, আপনার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন, আপনি যে টপিকে রিসার্চ করতে চান তার প্রয়োজনীয়তা, ইত্যাদি।
৯. Statement of Purpose (SOP) -এ কি লিখবেন?
তুর্কি স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে SOP। কি কি বিষয় লিখবেন এই লেটার লিখবে তা স্কলারশিপ অথোরিটি আপনাকে হিন্টস দিয়ে দিবে। নিচে আমি সরাসরি যে হিন্টস দিবে তা উল্লেখ করবো।
আপনি যে বিষয়ের জন্য আবেদন করছেন সে বিষয় সম্পর্কিত আপনার একাডেমিক এবং সামাজিক অভিজ্ঞতা, কেন তারা আপনাকে বাছাই করবে, আপনি কেন উচ্চ শিক্ষার জন্য তুরস্ককে পছন্দ করেছেন, আপনার ডিগ্রি বা শিক্ষা এবং তুরস্কের বৃত্তির জন্য আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে একটি রচনা লিখবেন।
আপনাকে নির্দিষ্ট কোনো ফরম্যাট ফলো করে লিখতে হবে না। নিজের মতো করে লিখবেন, তবে তা যেন আবার আপনার সমগ্র জীবনের বৃত্তান্ত না হয়ে যায়। তাহলে লেখা খুব বেশি বড় হয়ে যাবে। আবার একেবারে ছোটও লিখবেন না। মোটামুটি ৫০০ শব্দ ৩০০০ ক্যারেক্টারের মধ্যে লিখে ফেলবেন।
এখানে একটা কথা ভালোভাবে মাথায় রাখুন, কখনোই এটা আপনি আপনার কোনো বন্ধু, বড় ভাই, শিক্ষক বা অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নিবেন না। খুব শক্ত, কঠিন ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করবেন না। আপনার নিজের ভাষায় সহজ করে লিখুন। এটাই সেরা অপশন। মনে রাখবেন আপনি স্কলারশিপ অথোরিটিকে ফাঁকি দিতে পারবেন না।
এবার দেখে নেয়া যাক SOP অপশনে স্কলারশিপের পোর্টালে কি ধরনের হিন্টস দেয়:
“In this section, it is expected to explain following details: your academic and social experiences relating the field you want to take an education, your reasons for choosing Turkey for study and the importance of your future plans for your education and scholarship in Turkey. You can write a letter of intent in the language you can express yourself.”
আমি উপরে যা বলেছি, মোটামুটি সেগুলোই তারা আপনার কাছে Expect করছে। স্যাম্পলের জন্য আপনি নিচের লিংক ফলো করতে পারেন।
Statement of Purpose (SOP) সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে: স্টেটমেন্ট অফ পারপাসের (SOP) খুটিনাটি (নমুনাসহ)
Motivation Letter সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে: মোটিভেশন (Motivation) লেটার লেখার নিয়ম (নমুনাসহ)
এই বিষয়ে উদাহরণসহ ভিডিও দেখে লিখুন: মোটিভেশন লেটার কীভাবে লিখবেন? How to write the best Motivation letter with example?
১০. Reference Letter কার থেকে নিবেন?
এই স্কলারশিপের জন্য দুইটি রেফারেন্স লেটার বা রিকমেন্ডেশন লেটার বাধ্যতামূলক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কাদের থেকে নিবেন এই রেফারেন্স লেটার? সবচেয়ে ভালো হচ্ছে আপনার শিক্ষক থেকে নিলে, যেখানে আপনার শিক্ষক আপনার সম্পর্কে লিখবে, আপনার আবেদনকৃত বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কোনো শিক্ষক থেকে নিবেন। অথবা যিনি আপনার থিসিসের এডভাইজার ছিলো কিংবা আপনার সম্পর্কে ভালো জানে। তাঁদের থেকেই নিন। মনে রাখবেন আপনি যাদের থেকে রেফারেন্স লেটার নিয়েছেন, তাদের নাম্বার ও ইমেইল আবেদনের সময় একটা অপশনে জমা দিতে হবে। স্কলারশিপ অথোরিটি তাদের সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগ করবে। সাধারণত তারা রেফারিকে মেইল দেয়।
Reference Letter বা Recommendation Letter সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে: রিকমেন্ডেশন (Recomendation) লেটার এর নিয়ম (নমুনাসহ)
এই বিষয়ে উদাহরণসহ ভিডিও দেখে লিখুন: রেফারেন্স লেটার কীভাবে লিখবেন? How to draft the Reference letter for scholarship with example?
১১. ইন্টারভিউ:
তুর্কি স্কলারশিপ প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ। আবেদন করার প্রায় ২ থেকে ৩ মাস পর ভাইভার জন্য ডাকে। অবশ্য এর কারণও আছে। প্রতি বছর প্রায় লক্ষাধিক এপ্লিকেশন জমা পড়ে, সেখান থেকে খুবই সতর্কতার সাথে স্কলারশিপ কমিটি বাছাইকৃতদের ভাইভাতে ডাকে। মনে রাখা দরকার ভাইভাতে ডাক পাওয়া মানেই চান্স পাওয়া নয়। ভাইভায় তার্কিশ প্রফেসররা আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবে এবং আবেদনের সময় আপনার সরবরাহকৃত সকল ডকুমেন্টসের মূলকপিগুলো দেখবে। ভাইভা স্বাভাবিকভাবে ইংরেজিতেই হবে, তবে আপনি চাইলে বাংলাতেও দিতে পারবেন, সেখানে দোভাষী থাকে।
ইন্টার্ভিউ দিতে যাওয়ার আগে আপনি যে সকল ইউনিভার্সিটিতে যে সকল সাবজেক্টের জন্য এপ্লাই করেছেন সেগুলো সম্পর্কে মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন। আপনাকে আপনার আবেদনকৃত সাবজেক্ট সম্পর্কে এবং তুরস্ক সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে। কেন তার্কিতে পড়তে চান? কেন এই সাবজেক্টে আপনার আগ্রহ? তুর্কি ভাষায় পড়তে চান কিনা? অন্য কোথাও আবেদন করেছেন কিনা? আপনার এই সাবজেক্ট আপনার দেশের কি উপকারে লাগেব? আপনার ফিউচার প্লান কি? দেশ ফিরে আসবেন কিনা? ইত্যাদি প্রশ্ন করবে। এক্সাক্ট আপনাকে কি জিজ্ঞেস করবে সেটা কেউ বলতে পারবে না। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। উনারা খুবই আন্তরিক ও হেল্পফুল। আপনার সাথে খুব মজা করে কথা বলবে, খুব সহজ ইংরেজিতে। আপনার কেবল কনফিডেন্স রাখলেই হবে।
১২. লিখিত পরীক্ষা কাদের জন্য এবং কেমন হবে?
প্রাথমিক বাছাইয়ের পর ইন্টার্ভিউয়ের পূর্বে ব্যাচেলরে আবেদনকারীদেরলে ম্যাথমেটিক্স এর উপর একটি MCQ পরীক্ষা দিতে হবে।
মোট ম্যাথ: ১২টি
সময়: ৩০ মিনিট
টপিকস: ত্রিকোণমিতি, পরিমিতি, ধারা, ফেক্টরিয়াল, দ্বিপদী বিস্তৃতি।
আর এই পরীক্ষায় ভয়ের কিছু নেই। প্রশ্নগুলো সাধারণত বেসিকের উপর হয়। এটা ২০১৯ এর পদ্ধতি। এ বছর কিছু পরিবর্তনও হতে পারে আবার নাও হতে পারে। মূলত এটা পুরোটাই স্কলারশিপ কমিটির উপর নির্ভর করছে।
১৩. আমার এখনো ফাইনাল রেজাল্ট হয়নি, সার্টিফিকেট পাবো কীভাবে?
এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য দিয়ে রাখি। বুরসলারি স্কলারশিপে আপনার ফাইনাল রেজাল্ট না হলেও এপ্লাই করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে আপনি কলেজ থেকে একটি Provisional Certificate নিবেন (নিম্নে স্যাম্পল দিয়ে দিচ্ছি)। ভার্সিটি থেকে ফাইনাল সেমিস্টারে রেজাল্ট ছাড়া Provisional Certificate দিবে না। এই ক্ষেত্রে To Whom It May Concern লিখে একটি প্রত্যয়ন পত্র বা Testimonial দিবে। তাতে আপনার বিস্তারিত তথ্য, লাস্ট ইয়ার/সেমিস্টার পর্যন্ত রেজাল্ট এবং সম্ভাব্য কবে আপনার ফাইনাল শেষ হবে বা রেজাল্ট হাতে পাবেন বা সার্টিফিকেট পাবেন তা লিখে দিবে। অতীতে এমন অনেকেই কলেজ থেকে Provisional Certificate নিয়ে অনার্সে কিংবা ভার্সিটি থেকে To Whom It May Concern/Testimonial নিয়ে মাস্টার্স/পিএইচডিতে স্কলারশিপ পেয়েছে।
২০২২ সালে চান্স পাওয়া এক ছোট ভাইয়ের Provisional Certificate.
১৪. তুর্কি ভাষা শেখা কি বাধ্যমূলক?
আপনি যে স্তরের জন্যই তুর্কি স্কলারশিপ পান, আপনাকে প্রথমে এক বছরের ভাষা কোর্স করতে হবে। এটা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। এমনকি আপনি যদি ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার জন্য স্কলারশিপ পান তবুও।
আপনি ফ্রিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে নতুন একটি ভাষা শিখবেন, নতুন এক অভিজ্ঞতা হবে, এটা মন্দ কিসের? বিশ্বাস করেন সত্যি উপভোগ করবেন, তার্কিশ ভাষা অনেক মজার। এবং খুব সহজেই শিখে যাবেন।
১৫. কোনো এজেন্টের সহয়তা নিবেন কি?
এখানে একবাক্যে বলবো ‘না’। আপনি কোনো এজেন্টে থেকে কোনো প্রকার সহায়তা নিবেন না। সব নিজে নিজে করবেন। এপ্লাই করার জন্য কোনো টাকা লাগে না। অনেকে অফার করবে এত টাকা দিলে এপ্লাই করে দিবো, নিশ্চিত স্কলারশিপ পাইয়ে দিবো, এমন কোনো ফাঁদে পা দিবেন না। তাহলে আপনি আবেদনের সময় কোনো সমস্যায় পড়লে হেল্প পাবেন কোথায়? নিম্নে আমি একটি গ্রুপ লিংক দিবো, সেখানেই সকল সহায়তা পাবেন।
১৬. বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর তার্কিশ স্কলারশিপ পাওয়ার হার কেমন?
২০১৯ সালে বিশ্বের ১৬৭টি দেশের ১৪৬৬০০ জন আবেদনকারীর মধ্যে ৫০০০ জন শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপ পেয়েছে। তারমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৬৩ জন চান্স পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬০০০ আবেদনকারীর মধ্যে ১৫৩ জন ভাইভা দিয়েছিলো। প্রতিবছরই ৫০+ শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে এই স্কলারশিপ পেয়ে আসছে। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে যেমন তীব্র প্রতিযোগিতা হয় তেমনই স্কলারশিপ পাওয়ার হারও খারাপ নয়।
১৭. স্কলারশিপ আবেদনের সংবাদ পাবেন কোথায়?
তার্কিশ স্কলারশিপ এপ্লিকেশনের খবরাখবর বিভিন্নভাবে পাওয়া যায়। প্রথমত তুর্কিয়ে বুরসলারির ওয়েবসাইটে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায়। আমি নিম্নে তিনটি লিংক দিচ্ছি। নিয়মিত নজর রাখলে সকল আপডেট পেয়ে যাবেন।
ক. তুর্কিয়ে বুরসলারির ওয়েবসাইট- www.turkiyeburslari.gov.tr/
খ. তুর্কিয়ে বুরসলারির ফেসবুক পেজ- www.facebook.com/turkiyeburslari/
গ. বাংলাদেশীদের সহযোগিতা করার জন্য ফেসবুক গ্রুপ- Turkey Burslari Scholarship for Bangladeshi Students
১৮. স্কলারশিপ সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্নের উত্তর পাবেন যেখানে:
তুর্কি স্কলারশিপ সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর পাবেন নিম্নের গ্রুপে। গ্রুপে জয়েন করে প্রথমে গ্রুপের ফাইল সেকশনের লেখাগুলো ভালোভাবে পড়বেন এবং আগের পোস্টগুলো দেখবেন। এবং আপনার কোনো কিছু জানার থাকলে পোস্ট করবেন।
সকল প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার লিংক- www.facebook.com/groups/331137687085930/
১৯. স্কলারশিপ আবেদনের লিংক:
https://tbbs.turkiyeburslari.gov.tr/
লেখাটি সংগ্রহে রাখা যেতে পারে, কারণ স্কলারশিপ অথোরিটি কোনো কিছু আপডেট করলে এই পোস্টে সংযুক্ত করা হবে।
২০. তুরস্কের শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি কেমন?
তুরস্কের অভিনব পরীক্ষা পদ্ধতি ও পাঠদান কৌশল জানতে এখানে ক্লিক করুন
২১. নিজ খরচে পড়তে পড়ার জন্য আমাকে কি করতে হবে? কেমন খরচ হবে?
তুরস্কে নিজ খরচে পড়ার বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
২২. তুরস্কের দিয়ানেত ফাউন্ডেশনের স্কলারশিপ সম্পর্কে জানতে চাই
দিয়ানেত ফাউন্ডেশনের স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
২৩. তুরস্কে ক্লাস নাইন থেকে স্কলারশিপ কীভাবে পাবো?
ক্লাস নাইন থেকে স্কলারশিপ পাওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
২৪. স্কলারশিপ নিয়ে ভিডিও গাইডলাইন পেতে চাই
স্কলারশিপ নিয়ে ভিডিও গাইডলাইন পেতে এখানে ক্লিক করুন
ডিসক্লেইমার: অনুরোধ থাকবে লেখাটি কপি করবেন না। তথ্য বিভ্রাট হয়ে যেতে পারে। অবশ্যই শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।
মু. সাইফুল ইসলাম
পিএইচডি গবেষক, সমুদ্র আইন বিভাগ, আংকারা ইউনিভার্সিটি, তুরস্ক