“এই কালো মহিলার বাচ্চা” বলে একদিন বেলাল (রা.) কে গালি দিলেন বিখ্যাত সাহাবী আবু যর গিফারী (রা.)। সত্যি? অবিশ্বাস্য লাগছে তাই না? যার সুরের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে মুসলিম উম্মাহ নামাজের জন্য একত্রিত হয়, এমন একজন সাহাবীকে গালি দেওয়া হলো? আবার এমন একজন সাহাবী গালিটা দিয়েছিলেন যার মর্যাদা ইসলামে অকল্পনীয়। ইসলাম গ্রহণের পর কোরায়েশরা তাকে মেরে রক্তাক্ত করেছিল মক্কার পাদদেশে!!
চলুন, তাহলে ঘটানাটি জানা যাক। একদিন সাহাবীদ্বয়ের মধ্যে ঝগড়া শুরু হলো, সেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন না, কয়েকজন সাহাবী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে হযরত আবু যর গিফারী (রা.) হযরত বেলাল (রা.) কে বলে বসলেন “ইয়া ইবনুস সাওদা” এই কালো মহিলার বাচ্চা বা কালির বাচ্চা। যেভাবে মাকে নিয়ে সচারচর গালি দেওয়া হয় আর কি।
হযরত বেলাল (রা.) কাঁদতে আরম্ভ করলেন। তিনি সোজা রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে বললেন যে আমাকে আবু যর গিফারী (রা.) এমন বলেছে। রাসুলুল্লাহ (স.) শুনে সাথে সাথে রেগে গেলেন আর একজনকে পাঠালেন, আবু যর (রা.) কে ডেকে আনতে। হযরত আবুযর (রা.) আসার সাথে সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখ ফিরিয়ে নিলেন। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এমন এক ব্যক্তি তিনি যদি হাশরের মাঠে মুখ ফিরিয়ে নেন তাহলে জান্নাতের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি বেলালকে এভাবে অপমান করেছো? তবে শুনে রাখো “ইন্নাকা ইমরুন ফিকা জাহিলিয়্যা” তুমি এমন একজন লোক যার ভিতর জাহেলিয়াত রয়ে গেছে। কারণ জাহেলি যুগে উচু-নিচু, সাদা-কালো, ধনি-গরিব, গোত্রের উৎকৃষ্টার ভিত্তিতে সম্মান দেওয়া হতো। হযরত আবু যর গিফারী সাথে সাথে বেরিয়ে আসলেন কান্না করতে করতে। তিনি সোজা চলে গেলেন বেলাল (রা.) এর সামনে। তারপর তার সামনে শুয়ে পড়লেন আর এক চোয়াল মাটির সাথে মিশিয়ে দিলেন।
সেই সময় সবচেয়ে অপমানজনক অবস্থা ছিল এরকম মাটিতে খড় দেওয়া। আর সাহাবি এটাই করলেন কারণ তিনি চেয়েছিলেন তার ভিতর থেকে সমস্ত জাহেলিয়াত বের হয়ে যাক। তিনি মনে এনেছিলেন সেই বানী, ” যার মধ্যে সামান্য অহংকার থাকবে সে জান্নাতে যেতে পারবে না।” আবু যর (রা.) এবার বললেন বেলাল আসো, তোমার ওই পা দিয়ে যতক্ষন না পর্যন্ত আমার অন্য চোয়ালের উপর দিয়ে না হেটেছো আমি উঠবো না।
হযরত বেলাল কান্না আরম্ভ করলেন সাথে সাথে গিয়ে তাকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরলেন আর কপালে চুম্বন করলেন। কতইনা উত্তমভাবে তিনি ক্ষমা করে দিলেন আর তেমনি আবু যর (রা.) কেমন অনুশোচনা করেছিলেন।
এতো গেল বুখারী মুসলিমের বর্ননা। বায়হাকিতে বর্ননা আছে এভাবে, যখন আবু যর (রা.) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকা দিয়েছিলেন তখন বলেছিলেন যে “আমার বা আমার সঙ্গী সাথিদের উপর কারো কোন মর্যাদা নেই, শ্রেষ্ঠত্ব নেই -ইল্লা বি আমালিন,অর্থাৎ আমল ছাড়া “
ধনী-গরিব, উচু-নিচু, সাদা-কালো, বংশ, দেশ, জাতীয়তা কোন কিছুর ভিত্তিতে ইসলাম কাউকে পরিমাপ করে না। তাহলে ইসলামে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি কি? সেটা হল আমল। মাপকাঠি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্বের ভাষণে বলে গিয়েছেন সেটা কি? “নেই কোন মর্যাদা অনারবের উপর আরবের, নেই কোন মর্যাদা কালোর উপর সাদার, শুধুমাত্র তাকওয়া ব্যতিত”
সুতরাং আমাদের মধ্যে যার তাকওয়া বেশি সে আল্লাহর কাছে প্রিয়। আমার গায়ের রঙ কালো, আমি দেখতে কুৎসিত, আমি আকারে খাটো, আমার বংশ ভালো না। এভাবে করে অভিযোগের শেষ থাকবে না।
একবার কয়েকজন সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ এর ছোট ছোট পা নিয়ে হাসা হাসি করছিলেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন – “তোমরা তার পা নিয়ে হাসতেছ, আল্লাহর কাছে তার পা উহুদ পাহারের চেয়ে ভারি হবে”।
বুদ্ধিমানের কাজ হবে তাকওয়া অর্জন করা, তাহলে আল্লাহর কাছে সম্মানিত হওয়া যাবে। আল্লাহ বলেছেন- “নিশ্চয়ই তোমাদের ভিতর সেই সম্মানিত যার অধিক তাকওয়া আছে।