মানুষের তৎপরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শয়তানের হস্তক্ষেপ ও তত ব্যাপকতা পায়। পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ও সমাজতন্ত্রের নাস্তিক্যবাদী হামলা আমাদের জাতির নৈতিক পতনকে চরমভাবে উপনীত করেছে। এই হামলার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে আমাদের ঈমান আমলের সংশয়। এর পিছনের কলকাটির নায়ক কিন্তু ‘শয়তান’। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জিং শত্রু। যার হামলা লক্ষ্য বস্তু হলো মানুষের চরিত্র, মৌলিক ঈমান ও আক্বিদাহ।
অনেকের মতামত এরকম যে, শয়তানের ভয়ংকর হামলা থেকে বাঁচার জন্য দুনিয়াবী ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে কেবল সংসার নিয়ে ব্যস্ত থেকে কেবল নিজের মুসলমানিত্ব বজায় রাখা। কিন্তু এ বিষয়ও একেবারে মামুলী নয়। দুনিয়াবী ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে মুসলমানিত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রেও শয়তান বাধা প্রদান করবে। কারণ সে বলেছে ‘আমি হামলা করার জন্য মানবজাতির সামন, পিছন, ডান, বাম সব দিক থেকেই আসবো’। [সুরা আ’রাফ: ১৭]
আর ঠিক একারণেই পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই প্রখর। দুনিয়ার ঝামেলা মুক্ত হয়ে মুসলমানিত্ব রক্ষা করার বিষয়টা অনেকখানি মহামারী দেখে কোনো রকম প্রতিকারের চেষ্টা না করে কাপুরুষের ন্যায় স্বদেশ ও স্বজাতিকে বিপদে ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়ার মতোই।
তাহলে কিভাবে শয়তানের হামলার প্রতিরোধ করা যায়?
চরিত্র ও ঈমানের পুঁজি নিয়ে এ ভয়ংকর ও বিশাল হামলার প্রতিহত করার চেষ্টা করা। এ উপায়ে শয়তানী হামলা থেকে বাঁচার জন্য সবচেয়ে গুরুত্ববহ বিষয় হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে যথাযথ সম্পর্ক তৈরি করা। আল্লাহর সাথে যথাযথ সম্পর্ক থাকলে শয়তানী হামলায় পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমই থাকে। দুনিয়ার রঙ্গে অনেকেই রঙ্গিন হয়ে যান। শয়তানের টেকনিক্যাল ধোঁকায় পথভ্রষ্ট হয়ে যান অনেকেই। তা থেকে বেঁচে থাকার প্রধান ও প্রথম আয়োজন হলো ‘আল্লাহর সাথে যথাযথ সম্পর্ক তৈরি করা’।
আল্লাহর সাথে যথাযথ সম্পর্ক বৃদ্ধি করার উপায়:
ক) মৌলিক তথা আবশ্যকীয় ঈবাদতসমূহ যথাযথ ভাবে পালন করা। প্রথমত, আল্লাহ তায়ালা যে আবশ্যকীয় ইবাদাত তথা নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদির বিধান আবশ্যক করেছেন তা সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান রাখা এবং যথাযথ উপায়ে, খালিছ নিয়তে সেগুলো পালন করা। ঈবাদতের সাথে সাথে আত্মবিচারে অভ্যস্ত না হলে ইবাদতের প্রান সঞ্চার হয়না। ঈবাদতের বাইরের কাঠামো যতই মুগ্ধকর হোক না কেন, ইবাদতের মৌলিক দিক অন্তঃসারশূন্যই থেকে যায়।
খ) কোরআন ও হাদিস থেকে সরাসরি জ্ঞান অর্জন করে বাস্তব জীবিনে আ’মলে কার্যকর করে জাহেলীয়াতকে প্রতিহত করা। ঈমান ও জ্ঞানের মূল উৎস কোরআন ও হাদিস। মু’মিন যদি এ দু’থেকে সঠিক জ্ঞান অর্জন না করে তাহলে যে কোন সময়ই বিপথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আধুনিক জাহেলীয়াতের প্রতিরোধের জন্য শিল্প, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানে যথেষ্ট ভুমিকা রাখার কোন বিকল্প নেই।
গ) গোপনীয়তা রক্ষার মাধ্যমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নফল ইবাদাত করা। নফল ইবাদাতের ক্ষেত্রে নফল নামাজ বিশেষ করে তাহাজ্জুদ আদায়ে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করা। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে অনন্য একটি মাধ্যম হচ্ছে নফল রোজা। মাসে তিনদিন রোজা রাখা সুন্নত এবং একযুগ রোজা রাখার সমান। এছাড়াও হাদিস দ্বারা বিশেষ বিশেষ দিবসে রোজা রাখার স্পেশাল সুফল রয়েছে, সেগুলোর উপর যথাসম্ভব আমল করা।
ঘ) সার্বক্ষণিক দো’য়া ও জিকির আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার অন্যতম একটি উপায়। ঘুমানোর সময়, ঘুম থেকে উঠার পর, ঘর থেকে বের হওয়ার সময়, শৌচাগারে প্রবেশ এবং বাহিরের সময়, রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়, যানবাহন ব্যবহারের আগে ইত্যাদি সময়ে হাদিসের আলোকে দো’য়া করার মাধ্যমে মহান রবের সাথে সহজে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা সম্ভব।
এছাড়া জিকির, আত্মার প্রশান্তির লক্ষ্যে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সর্বদা জিকিরে (প্রকাশ্য অথবা গোপন) মত্ত থাকার চেষ্টা করা। আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, মাশাআল্লাহ, ইনশাল্লাহ, জাযাকাল্লাহ ইত্যাদি কতিপয় জিকির বা শব্দব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া। উপরের চারটি উপায়ের মাধ্যমে মহান রবের সাথে যথাযথ সম্পর্ক তৈরি করা যায়। আর এ সম্পর্কের মাধ্যমে জাহেলীয়াত, পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ নামক ঘৃণিত বস্তু ও সমাজতান্ত্রিক, নাস্তিক্যবাদীসহ শয়তানের অতর্কিত হামলা থেকে বেঁচে থেকে ঈমান ও চরিত্র ঠিক রাখা সম্ভব।