১.
“যার মোহর আলীর মতো ছাত্র নাই তার ভাল শিক্ষক হবার সুযোগ নাই।” শিক্ষক জীবনের শুরুতেই তিনি এই মোহর আলীর ফাঁদে পড়েছিলেন। যত প্রস্তুতিই নিয়ে ক্লাসে যেতেন, মোহর আলীর প্রশ্নে এলোমেলো হয়ে পরতেন। তিনি ছাত্রকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘তোমাকে কি কেউ আমাকে হেনস্থা করার জন্য পাঠিয়েছে?’
স্যারের এমন প্রশ্নের উত্তরে নাকি মোহর আলী বলেছিলেন- জ্বি না স্যার। আপনার মত এত পড়াশুনা করে আর কেউ ক্লাসে আসে না। তাই আমি ভেবেছি এই কোর্সের জন্যে আপনি যে ক’টা বই পড়েন, তার চেয়ে প্রতিদিন আমি একটা হলেও বেশী বই পড়ে আসব- মোহর আলীর চ্যালেঞ্জ। তার ছাত্রের ভাষ্যমতে, ‘মোহর আলীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে করতেই উনি হয়ে উঠেন আবদুল করিম’।
তার ছাত্রদের মধ্যে এই মোহর আলীই নাকি সবচেয়ে মেধাবী ছিলেন এবং পরে ইতিহাসবিদ হিসাবে তার স্বাক্ষরও রেখেছিলেন। তার History of Muslim Bengal (৪খণ্ড) বাঙালি মুসলিম ঐতিহ্যের স্বাতন্ত্র্যিক আইডেন্টিটি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে সাঙ্গু নদীর উর্বর মাটির সন্তান ড. আব্দুল করিম ১ জুন ১৯২৮ সালে বাঁশখালী থানার বাহারছড়া ইউনিয়নের চাঁপাছড়ি গ্রামের সৈয়দ বংশে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মৌলভী ওয়াইজুদ্দিন বার্মায় (মিয়ানমার) একটি মসজিদের মুয়াজ্জিনের চাকরি করতেন এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় বাঁশখালীতে ফিরে আসেন। মা সৈয়দা রশিদা খাতুন এক কামেল পরিবারের পর্দানশীন মেয়ে ছিলেন। ড. করিম অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে কঠোর পরিশ্রমে বাল্য, কৈশোর ও যৌবন পার করেছেন। তার উঠে আসার দুঃখকাহিনী তিনি নিজে তাঁর আত্মজীবনী “সমাজ ও জীবন” গ্রন্থে নিপুণ হাতের কালিতে লিপিবদ্ধ করেছেন।
২.
এছাড়াও “সমাজ ও জীবন” তার শুধু আত্মজীবনী নয় বরং তৎকালীন সমাজের নানা ঘটনার প্রতিচ্ছবি। সমাজের নানা অসঙ্গতি, কুসংস্কার, অনিয়ম ও ধর্মের নামে ভণ্ডামি তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন। এ বইয়ে তিনি লিখেছেন, “নারী নির্যাতন গ্রামের একটি সাধারণ ব্যাপার। গ্রামে অবশ্যই নির্যাতন মানেই স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে কথায় কথায় মারধর করা, শাশুড়ি কর্তৃক বউকে লাঞ্চিত করা। ইসলামে স্ত্রীর যে মর্যাদা দিয়েছে, স্বামীর উপর স্ত্রীর যে অধিকার সাধারণ মুসলমান তা কখনো বিশ্বাস করতেন না।
মোল্লা-মৌলভীরাও এই বিষয়ে কোন কিছু বলত না। তারা মনে করে স্ত্রী হল স্বামীর দাসী। স্বামী স্ত্রীর ঝগড়ার অন্যতম কারণ আর্থিক অসচ্ছলতা। সামান্য কারণে ঝগড়াঝাটির পরে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অসংখ্য ঘটনা দেখেছি। আবার তালাক দিয়ে স্ত্রীকে ঘরে রাখার জন্য ফতোয়াবাজ মোল্লা-মৌলভীর কাছে ধর্না দেয়। মোল্লা-মৌলভীরাও অর্থের বিনিময়ে তালাক হয়নি মর্মে ফতোয়া দিতে কসুর করত না।” ড. আবদুল করিম নিজ চোখে এসব অবলোকনের মাধ্যমে বেড়ে উঠেন।
ভারতের বিখ্যাত সাহারানপুর মাদ্রাসা থেকে আরবি ও ইসলামি জ্ঞানবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা লাভ করে স্বীয় গ্রামে আগত মৌলবি মুহাম্মদ মুনিরুজ্জামান চৌধুরী (মৃ. ১৯৬৩ খ্রি.) নিকট তাঁর হাতেখড়ি হয়। তিনি তাকে মাদ্রাসার ছাত্র হিসেবে কোরআন হেফজ করতে দেন। পরবর্তীতে গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করে বৈলছড়ি জুনিয়র মাদ্রাসা থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করে মোহসিনিয়া মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (বর্তমান হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ) ভর্তি হন। এখানে ভর্তি হওয়াকে আবদুল করিম তাঁর জীবনে শুভদিন বলে অভিহিত করেছেন। কেননা এখানে ভর্তি হবার ফলে তাঁর জীবনে উচ্চশিক্ষা লাভের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। পরবর্তীতে, উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৪৯ সালে ইতিহাসে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩য় স্থান অধিকার করে বি. এ অনার্স এবং ১৯৫০ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম পেয়ে এম. এ পাস করেন।
৩.
শিক্ষাজীবনে আগাগোড়া কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জে ভিক্টোরিয়া হাই স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে ইতিহাস গবেষণার যাত্রা শুরু করেন। ঈশা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত সোনারগাঁ’তে ঘুরে ঘুরে ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহ করেছেন আবদুল করিম। স্বভাবটা একেবারে বিলেতী ইতিহাসবিদ ভিন্সেন্ট এ.স্মীথ.আই.সি.এস (১৮৪৮-১৯২০)-এর মতো। এই ইংরেজ রাজকর্মচারীর নাকি যেখানেই পোস্টিং হত সে অঞ্চলের পুরনো বাড়ী, স্থাপনা, এমনকি ইটের টুকরা পেলেও তার ভেতর ইতিহাসের উপাদান খুঁজতেন। সারা জীবন আবদুল করিমও একই কাজ করে গেছেন।
তিনি ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষক জীবন শুরু করেন। তিনি শিলালিপি, মুদ্রাবিদ্যা, সুফী সাধকের জীবন চরিত্র, জাতিসত্ত্বার বিকাশ, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ, নিরীক্ষণ, পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাঙালি মুসলমানদের ইতিহাসকে অনেক উঁচু আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এসব দুর্লভ গবেষণা ও ইতিহাস চর্চার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৫৮ সালে প্রথিতযশা প্রত্নতত্ত্ববিদ আহমদ হাসান দানীর তত্ত্বাবধানে ‘সোস্যাল হিস্ট্রি অব দি মুসলিমস ইন বেঙ্গল’ অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। যা পরবর্তীতে পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটি (বর্তমানে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি) থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
তাঁর শিক্ষকদের বিশেষ করে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ আবদুল হালিম এর অনুপ্রেরণা ও পরামর্শে তিনি বিশিষ্ট প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদ আহমদ হাসান দানীর তত্ত্বাবধানে গবেষণা কর্মে মনোনিবেশ করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Social History of the Muslims in Bengal Down to A. D. 1538 শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এটিও পরে পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
জ্ঞানের পরিসীমা আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে দিতে ১৯৬০ সালে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান। সেখানে ইতিহাসবিদ জে. বি. হ্যারিসনের গবেষণা তত্ত্বাবধানে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন School of Oriental and African Studies থেকে Murshid Quli Khan and His Times (১৯৬৩খৃষ্টাব্দ) শিরোনামে অভিসন্দর্ভ রচনা করে স্বল্প সময়ে দ্বিতীয় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। টানা পনের বছর শিক্ষকতার পর ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সদ্য যাত্রা করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের রীডার ও বিভাগীয় প্রধান হিসাবে যোগ দেন।
১৯৫১ সাল হতে তিনি ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালে বিভিন্ন সেমিনারে যোগদান করে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীতে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কর্মমুখর আবদুল করিম ১৯৭৫-১৯৮১ মেয়াদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সুদীর্ঘ সময় শিক্ষকতার মহান দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করে তিনি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ইতিহাস চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন বিশেষ করে, কিছুদিন পরেই তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজে সিনিয়র ফেলো হিসেবে যোগ দেন। এ সময়ে (১৯৮৯-১৯৯০) তিনি দুই খন্ডে ‘বাংলায় মোগলদের ইতিহাস’ রচনা করেন যা পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়।
১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি চট্টগ্রামস্থ বায়তুশ শরফ ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তাঁর গবেষণার কাজ অব্যাহত গতিতে পরিচালিত হয় এবং ব্যাপক উৎকর্ষ লাভ করে। তিনি এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মুখপত্র ‘ইসলামী ঐতিহ্য’ এর সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন।
৪.
বাংলার ইতিহাস চর্চার পাশাপাশি প্রফেসর ড. আবদুল করিম অসাধারণ সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক দক্ষতার অধিকারী ছিলেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মহান ব্রত পালনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে সহকারী হাউজ টিউটর ও হাউজ টিউটরের দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উৎকর্ষ সাধনে কঠোর পরিশ্রম করেন।
তিনি বিভাগীয় প্রধান/সভাপতি (১৯৬৬-১৯৭৫), আলাওল হলের প্রভোষ্ট (১৯৬৬-১৯৭০), কলা অনুষদের ডিন (১৯৭০-১৯৭৫), সিনেট সদস্য ও সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ও উন্নয়নমূলক কাজে এত বেশি জড়িয়ে পড়েন যে তখন তাঁর সম্পর্কে একটি মুখরোচক প্রবচন ছিল, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ১০০টি কমিটি থাকে, তবে প্রফেসর আবদুল করিম ১০১টি কমিটির চেয়ারম্যান/মেম্বার অর্থাৎ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত সকল কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।”
বিশেষ করে তিনি ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ মেয়াদকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গুরু দায়িত্ব পালন করেন। একজন প্রশাসক হিসেবে তিনি বিচক্ষণ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন। বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকালেও বাংলার ইতিহাস গবেষণার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছেদ পড়েনি। উনার এত ব্যস্ততার মাঝেও কিভাবে ইতিহাস চর্চা চালিয়ে যান তা নিয়ে উনার এক ছাত্রের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমি রাত জেগে পড়া-লেখা করি না। সাধারণত রাত ১০-১১টা পর্যন্ত লেখাপড়া করি, তবে নিয়মিত এবং গভীর মনোযোগ সহকারে লেখার চেষ্টা করি। যতাই কর্মব্যস্ততা থাকুক, লেখার সময় আমি ঠিকই বের করে নেই।”
[ইতিহাসের আবদুল করিম ও তাঁর কর্ম- কীর্তির কয়েকটি দিক/আহমদ মমতাজ/বাঁশখালী টাইমস]
বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনে যেমন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তেমনি সভাসমিতি ও গঠনমূলক কাজে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটি অব পাকিস্তান (বর্তমানে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একজন জুনিয়র সদস্য হিসেবে তিনি নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য।
তিনি সোসাইটির কাউন্সিলর এবং ১৯৬৪-১৯৬৬ মেয়াদকালে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একনিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করেন। সোসাইটির জার্নালে তাঁর অনেকগুলো প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এমনকি সোসাইটি থেকে তাঁর বেশ কয়েকটি মৌলিক ও গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
সোসাইটি কর্তৃক History of Bangladesh সিরিজের সম্পাদনা পরিষদের তিনি বরিষ্ট সদস্য ছিলেন। তাছাড়া বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাপিডিয়ায়’ তাঁর রচিত বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় দু’শতাধিক ভূক্তি রয়েছে।
৫.
চট্টগ্রাম দরদি এই কিংবদন্তি পুরুষ ১৯৬৬ সালে প্রাণের টানে চট্টগ্রামে জ্ঞানের মশাল জ্বালাতে নব প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভি. সি ড. মল্লিকের আহবানে সাড়া দিয়ে ইতিহাসের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তিনি কলা অনুষদের ডিন ছিলেন ১৯৭০-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভি. সি কবি ও সাহিত্যিক আবুল ফজল বঙ্গবন্ধুর উপদেষ্টা নিযুক্ত হলে তিনি প্রথমে অস্থায়ী এবং পরে স্থায়ী ভিসি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন ২৮ নভেম্বর ১৯৭৫ সাল থেকে ১৮ই এপ্রিল ১৯৮১ সাল পর্যন্ত।
১৯৮১ সালে পাকিস্তানি নোবেল বিজয়ী আব্দুস সালামকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেন। দীর্ঘ সময় ভি. সি’র দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বের পাশাপাশি হাটহাজারী কলেজ ও বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ নির্মাণে ভূমিকা রাখেন। অবসরের পর ১৯৯০ সালে পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা ও এর গভর্নিংবডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এই মহান শিক্ষাবিদ ব্যক্তিকে ১৯৯২ সালে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এবং তারই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ব্যারিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার জাতীয় অধ্যাপক করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি প্রাণপ্রিয় চট্টগ্রাম শহরকে ছেড়ে যেতে রাজি না হওয়ায় এই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০১ সালের নভেম্বরে তাকে এই পদে সম্মানিত করা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন।
ইতিহাসবিদ আবদুল করিম-এর বিরামহীন গবেষণার ফসল বাংলা-ইংরেজী মিলিয়ে প্রায় চল্লিশটির মতো বই আর দুইশতের কাছাকাছি মৌলিক গবেষনা প্রবন্ধ। এই বিশাল সৃষ্টিযজ্ঞই তাঁকে বাংলাদেশের সকল ইতিহাসবিদের গুরুর আসনে বসিয়েছিল। আজীবন ইতিহাস গবেষণার স্বীকৃতি হিসাবে ১৯৯৫ সালে তাঁকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। ইতিহাস-গবেষক হিসাবে আবদুল করিমের ধ্যান জ্ঞান ছিল বাংলার মধ্যযুগ।
মধ্যযুগের সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তিনি ফারসী ভাষায় রচিত গ্রন্থাবলী, শিলালিপি, মুদ্রা, সূফী সাধকদের জীবনচরিত এবং মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডার থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। মাদ্রাসার ছাত্র হিসাবে জীবনের গঠন পর্বে তিনি আরবী-ফারসীতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। প্রফেসর আবদুল করিমই প্রথম মধ্যযুগের বাংলার সামাজিক ইতিহাসের লৌহ কপাটটি খুলে দেন। পরে এই দরজা দিয়েই অন্দরে প্রবেশ করেন মমতাজুর রহমান তরফদার, মুহাম্মদ আব্দুর রহিম প্রমূখ নামী ইতিহাস- গবেষক।
৬.
বাংলার মধ্যযুগের সামাজিক ইতিহাসের গবেষণায় উৎসের অপ্রতুলতা নাছোড়বান্দা আবদুল করিমকে বেলাইন করতে পারেনি। মুসলমান শাসকদের অসংখ্য মুদ্রা বিশ্লষণ করতে করতে আবদুল করিম লিখে ফেলেন ‘করপাস অব দি মুসলিম কয়েনস অব বেঙ্গল’। বইটি তাঁকে ইন্ডিয়ান ন্যুমেজমেটিক সোসাইটি প্রদত্ত ‘আকবর সিলভার মেডেল’-এর মত স্বীকৃতি এনে দেয়। জানা মতে, তিনিই এই পদকপ্রাপ্ত একমাত্র বাংলাদেশী। শিলালিপি নিয়ে কাজ করতে করতে পয়দা হয় ‘করপাস অব দি এরাবিক এন্ড পার্সিয়ান ইনস্ক্রিপশন্স অব বেঙ্গল’-এর মত ছয় শতাধিক পৃষ্ঠার বই।
তাঁর মুদ্রা চর্চার আরেকটি ফসল হচ্ছে ‘ক্যাটালগ অব কয়েনস ইন দি ক্যাবিনেট অব দি চিটাগং ইউনিভার্সিটি মিউজিয়াম’। বইটি তিনি উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় লিখেছিলেন। ইতিহাসের উৎস হিসাবে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য খুঁড়তে খুঁড়তে তৈরী করলেন সাহিত্যের অসামান্য দলিল ‘বাংলা সাহিত্যের কালক্রম (মধ্যযুগ)’।
‘ঢাকা দি মুঘল ক্যাপিটাল’ তাঁর আরেকটি গুরুত্ত্বপূর্ণ রচনা। লন্ডনে এই বইটির উপাত্ত খুঁজতে গিয়ে তিনি ডাচ ভাষাও শিখেছিলেন। বিলেতে বসে মূল অভিসন্দর্ভের বাইরে মসলিন শিল্পের ইতিহাস নিয়ে মৌলিক রচনা প্রকাশ করলেন ‘ঢাকাই মসলিন’। তবে বাংলা ভাষায় লেখা ‘বাংলার ইতিহাস: সুলতানী আমল’- গবেষকদের বিচারে সম্ভবত আবদুল করিমের শ্রেষ্ঠ মৌলিক কর্ম। ইনস্টিটিউট ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর সিনিয়র ফেলো থাকাকালীন দুই খণ্ডে ‘হিস্ট্রি অব বেঙ্গল- মুঘল পিরিয়ড’ রচনা করেন। আবদুল করিম-তার এই সৃষ্টির পথ ধরে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়।
প্রায় সুদীর্ঘ ৫৫ বছরের বেশি সময় বাংলার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর গবেষণা মৌলিক তাঁর পূর্বে পর্যন্ত বাংলার ইতিহাস বলতে বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গবিজয় এবং আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ও আরও দু’চারজন সুলতান শাসকের নাম-পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। তাঁর অনেক আগে কয়েকজন অধ্যাপক ইতিহাস বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তবে তাঁরা প্রধানত ভারতের মুসলিম রাজত্বের ইতিহাসই রচনা করেন।
এঁদের মধ্যে ড. আবু মোহাম্মদ হবিবুল্লাহ লিখেন ‘ফাউন্ডেশন অব দি মুসলিম রুল ইন ইন্ডিয়া’ (১৯৩৬), ড. আগা মেহেদী হাসান লিখেন- ‘রাইজ এন্ড ফল অব মোহাম্মদ বিন তুঘলক’, কে এস লাল লিখেন-‘হিস্ট্রি অব খলজিস’, ড. আবদুল হালিম লিখেন ‘সৈয়দ এন্ড লোদি সুলতানস অব আগ্রা’ (১৯৩৮), ড. কালিকারঞ্জন কানুনগো লিখেন ‘শের শাহ’।
দিল্লির মুসলিম শাসক ও তাঁদের শাসনকাল নিয়েই এসব গবেষণা ও গ্রন্থ রচনা। আর এসব বিষয়ে রেফারেন্স বই-পুস্তকের তেমন অভাব ছিলো না। ইংরেজি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় লেখা বই-পুস্তক ছিলো। কিন্তু সুলতানী আমলের বাংলাদেশের সমসাময়িক ইতিহাসের উপাত্ত ও রেফারেন্স বই-পুস্তক ছিলো একেবারেই দুর্লভ। অধ্যাপক আবদুল করিম কয়েক বছরের একটানা পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সাথে সেই অসাধ্য কাজ সম্পন্ন করেন (১৯৫৮ সালে)। অধ্যয়ন করেন প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য, বাংলাসাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ থেকে বিভিন্ন পুঁথি-পাণ্ডুলিপি।
মূলত গবেষণা কর্ম না থাকায় মোগলদের বাংলাদেশ জয়ের পূর্বে এদেশের মুসলিম শাসনের কয়েক’শ বছরের ইতিহাস সম্পর্কে জানা সম্ভব ছিলো না। আবদুল করিমই সে কাজটি সম্পন্ন করেন। যদিও অবশ্য বাংলার ধারাবাহিক ইতিহাস রচনা শুরু হয় আরো বহু বছর আগে, এটি করেন রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৮৬-১৯৩০)। তিনি বাংলার ইতিহাস দুই খণ্ডে প্রকাশ করেন, ১ম ভাগ ১৯০৪ ও ২য় ভাগ ১৯১৭ সালের তবে সে ইতিহাসও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস ছিলো না।
৭.
একসময় ‘বাংলাদেশ’ শব্দের নামকরণ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে অধ্যাপক আবদুল করিমের অসামান্য যুক্তি প্রতিপক্ষের জবাবকে স্তিমিত করে দিয়েছিল। তাঁর মত ছিল, বাংলাদেশের ‘বঙ্গালাহ’ যে মধ্যযুগে মুসলিম শাসকদের দেওয়া নাম। যা থেকে মোগল আমলে সুবাহ বাঙ্গালাহ, ইংরেজ আমলের বেঙ্গল এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে রূপলাভ করেছে।
ঐতিহাসিক যুক্তি-প্রমাণ সাপেক্ষে তিনি খণ্ডন করেন পূর্বসূরী ঐতিহাসিক ডক্টর আর সি মজুমদার এক সময় লিখেছেন “ইতিহাসের দিক হইতে পূর্ববঙ্গের ‘বাংলাদেশ’ নাম গ্রহণের কোন যৌক্তিকতা নাই এবং বর্তমান পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রনায়কগণ ইতিহাস ও ভূগোলকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া আবেগের দ্বারা পরিচালিত হইয়া তাহাদের দেশের ‘বাংলাদেশ’ নাম গ্রহণ করিয়াছেন।”
অধ্যাপক আবদুল করিম এর উত্তরে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করে লিখেন “ড. মজুমদারের এই উক্তি তথ্যভিত্তিক নয়; যেই বঙ্গ, বঙ্গ এর অধিবাসী বঙ্গাল হইতে মুসলামনদের বঙ্গালাহ, বাঙ্গালাহ নামের উৎপত্তি, সেই বঙ্গ-এর প্রায় সম্পূর্ণ অংশই বর্তমান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। সুতরাং বাংলাদেশ নামকরণ মোটেই অযৌক্তিক নয়।”
এছাড়াও, তিনি তার মেধা ও পাণ্ডিত্য দিয়ে মুদ্রা ও শিলালিপি বিশ্লেষণে অনেক বিতর্কের অবসান করার চেষ্টা করেছেন। যেমন- স্বাধীন সুলতানি বাংলা সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে ১৩০১ থেকে ১৩২২ সাল পর্যন্ত সিংহাসনে আসীন ছিলেন সুলতান শামসউদ্দিন ফিরোজ শাহ। এ সুলতানের পরিচয় নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছে ইতিহাসে। বিতর্কের সূত্রপাত করেছেন ইবনে বতুতা তার ভ্রমণ কাহিনীতে। তিনি ফিরোজ শাহকে বলবনী বংশের লোক বলে শনাক্ত করেন।
তার মতে, ফিরোজ শাহ বোগরা খানের ছেলে এবং কায়কাউসের ভাই। কিন্তু এ মত প্রতিষ্ঠা পায়নি। আধুনিক পণ্ডিতদের মধ্যে পরবর্তী গবেষণার সূত্র ধরে প্রতিবাদ এসেছে। অবশেষে পক্ষ-বিপক্ষের সূত্রাবলি পরীক্ষা করে ড. করিম বিস্তারিত ব্যাখ্যায় একটি উপসংহারে পৌঁছার চেষ্টা করেন।
৮.
দীর্ঘ সময়ব্যাপী আলাউদ্দিন হুসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯) বাংলার কৃতী সুলতান হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার সময় বাংলায় মুসলিম রাজ্যসীমা ব্যাপক বিস্তৃত হয়। অধ্যাপক করিম মুদ্রা প্রমাণে তার রাজ্যসীমা নির্দিষ্ট করতে পেরেছেন। এতে দেখা যায়, হুসেন শাহ তার ক্ষমতা গ্রহণের শুরুতেই, কামরূপ, কামতা, জাজনগর, উড়িষ্যা অধিকার করেছিলেন।
মোগল অধিকারের আগেই যে স্বাধীন সুলতানি যুগে ঢাকার একাংশ একটি প্রদেশ বা বিভাগ অর্থাৎ ইকলিমের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তা অধ্যাপক করিম প্রথম লিপি প্রমাণে নিশ্চিত করেছিলেন। পুরান ঢাকার নাসওয়ালা গলিতে নির্মিত মসজিদের শিলালিপির গায়ে সমকালীন সুলতান হিসেবে নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের নাম উৎকীর্ণ ছিল। একজন গভর্নর বা খাজা জাহানের কর্তৃত্বেই যে ইকলিম মুবারকাবাদ পরিচালিত হতো তাও এ শিলালিপি থেকে জানা সম্ভব হয়েছে।
অধ্যাপক আবদুল করিমের দেখানো প্রত্নসূত্রের পথ ধরেই পরবর্তী সময়ে ড. একেএম শাহনাওয়াজ (অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) ঢাকা নগরীর প্রাচীনত্ব নিয়ে গবেষণা করার চেষ্টা চালান। তাতে ঐতিহাসিক প্রমাণেই অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে ৪০০ বছর আগে মোগল প্রতিষ্ঠিত ঢাকা নগরী থেকেই ঢাকার নগরযাত্রা শুরু হয়নি। বরং ঢাকা হাজার বছরের ইতিহাসের ভাষ্য হয়ে দাড়িয়ে আছে।
আব্দুল করিম ইতিহাসের যে পথে হেঁটেছেন সেই পথেই আলোকিত করেছেন। তার সারাটি জীবন ছিল সংগ্রাম ও সাধনার। যারা ফলস্বরুপ আমরা পেয়েছি আজকের বাংলার একটা পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। এই ইতিহাস ছিল না কোন সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প তৈরির জন্য। এতে কারো প্রতি বে-ইনসাফীর চেষ্টা করা হয়নি, যেমনটা করেছেন বড় বড় বাঘা ইতিহাসবিদরা।
এই কথার প্রমাণ আমরা পাই, চবি ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জাহিদুর রহমান কণ্ঠে। তিনি বলেন, “ড. আবদুল করিম স্বাধীনভাবে ইতিহাস চর্চা করেছেন। তিনি রাজনৈতিক ধারা ভেঙে সামাজিক ধারায় ইতিহাস চর্চার রীতিও তিনি চালু করে, যা পরবর্তীতে অনেকে অনুসরণ করেন। ড. আবদুল করিম স্যার যদুনাথ সরকারদের মতো ইতিহাসবিদদের সাম্প্রদায়িক ধারায় ইতিহাস চর্চার প্রথাও ভেঙে দেন। [সিআইইউতে সেমিনারে বক্তারা, ইতিহাস চর্চায় ড. আবদুল করিম একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র/প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০১৭/সমকাল প্রতিবেদক]
আব্দুল করিম ছোট থেকেই বড় হয়েছিলেন অনেক কষ্ট স্বীকার করে। নিজের পড়ালেখার জন্য বাবা-মার সাধ্যে অকুলান কিংবা লজিং বাড়িতে থেকে পড়াশোনা পাশাপাশি টাকা পয়সা জোগাড় করেও বই কিনতে না পারার মত কঠিন বিষয়গুলো তার আত্মজীবনীতে দেখা যায়। তার এই কঠিন বেড়ে ওঠা তাকে কখনো জনমানস থেকে বিচ্ছিন্ন করেনি বা তিনিও হননি। পৃ্থিবীর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আবদুল করিম-এর বই টেক্সট হিসাবে পড়ানো হয়। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁর কোন বই তিনি বিদেশ থেকে ছাপাননি। ব্যাখ্যা দিয়ে ছিলেন, বিদেশে ছাপা হলে ডলারে বইয়ের যে দাম আসবে তা এদেশের পাঠক বা গবেষকরা কিনতে পারবে না।
তিনি বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রী, গবেষকদের স্বদেশের ইতিহাসের রস আস্বাদন থেকে বঞ্চিত করেননি। ইনিই ছিলেন প্রফেসর ড. আব্দুল করিম। এই মহান ইতিহাস বিদ পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ করে, হাজারো ভক্ত-সমর্থক, ছাত্র-শিক্ষকের চোখে অশ্রু ঢেলে ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তথ্যসূত্র:
১. Published on 12:00 AM, July 24, 2019/History writing in South Asia and Prof Abdul Karim/Dr Amit Dey is Professor of History, University of Calcutta. The Daily Star.
২. Professor Abdul Karim: Remembering a great historian”। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৭-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২৪//
৩. www.yumpu.com/…/contributions-of-professor…
৪. ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ: অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাস চর্চার প্রবাদপুরুষ। ২৪ জুলাই ২০১৯, ১২:০০ এএম । প্রিন্ট সংস্করণ, যুগান্তর।
৫. সমাজ ও জীবন, ড. আব্দুল করিম (আত্মজীবনী)। হাসি প্রকাশনী, প্রকাশিত – ২০০৩ সাল।
৬. আবদুল মমিন চৌধুরী, ঐতিহাসিক মূল্যায়ন: আবদুল করিম, ড. আবদুল করিম সংবর্ধনা গ্রন্থ, চট্টগ্রাম: বাঁশখালী গুণীজন সংবর্ধনা পরিষদ, ২০০৬
৭. কীর্তিমান ইতিহাসবিদ আবদুল করিম, শনিবার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, প্রিন্ট সংস্করণ। ড. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হুসাইন, দৈনিক সংগ্রাম।