ধরুন, মসজিদের ভিতরে যদি ১৪ বছর বয়স কিংবা ১৮ বছর বয়সের একজন যুবক ছেলে থ্রী কোয়াটার প্যান্ট পড়ে সালাত আদায় করতে আসে, আপনারা রাগ করবেন, না আদর করবেন? হ্যাঁ রাগ করবেন, এত বড় বেয়াদব। কিন্তু সে যদি কোনোদিন মসজিদেই না যায় তাহলে? তখন রাগ করবেন না।
তাহলে আমাদের ইসলামটা কি? যে সালাত হলো একটা নফল কাজ, যদি করিস তাহলে ভালো করে করো। আর না করলে কোনো সমস্যা নেই। কি জঘন্য কথা! আপনি বুড়ো হয়েছেন মসজিদে তো যাবেনই, ওর মতো লাখ লাখ যুবক মসজিদে আসেনি, ও যে গেল এজন্যই তো ওকে জড়িয়ে ধরা দরকার ছিল। “বাবা মাশাল্লাহ তুমি মসজিদে এসেছ, তোমায় একটা টুপি কিনে দিবো বাবা পড়বা?”- একথাটা বলা যেতো না?
একজন যুবক, বন্ধুদের সাথে গল্প করছিল, খেলছিল। আযান দিয়েছে, মসজিদে এসে ফরজ সালাতটুকু পড়েই দৌঁড় দিয়েছে। তখন রাগ করেন, না আদর করেন? রাগ করেন। তবে যদি সে মসজিদেই না আসত, ঐ ফরজটুকুও না পড়ত তবে কেউ রাগ করেন না। এর নাম ইসলাম? ওর মতো ছেলে দুই রাকাত ফরজ সালাত আদায় করলে যে সওয়াব পাবে, আমার মতো বুড়ো সারা রাত তাহাজ্জুদ পড়েও সেই সওয়াব পাবে না। সে যে সালাতের টানে মসজিদ পর্যন্ত আসছে এটাই তার জন্য যথেষ্ট।
ফরয সালাত না পড়লে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায়, সুন্নাত না পড়লে আমাদের বুড়োদের গুনাহ হবে, ওরা দুই-একবার না পড়লে গুনাহ হবে না। ওদের আদর করে মাথায় হাত দিয়ে বলবেন- “বাবা সুন্নাতটা পড়ো, সুন্নাত না পড়লে আল্লাহ রাগ করবেন। বাবা আজকে খেলছিলে যাও, তবে মাঝে মাঝে সুন্নাতটা পড়ো কেমন?” এভাবে বললে একটু বড় হয়ে সে এমনিতেই পড়বে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবক-কিশোরদেরকে খুব পছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন যুবক প্রিয়। একটা ঘটনা বলি- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নামাজ পড়াচ্ছেন রুকুতে চলে গেছেন। আপনারা মসজিদে ঢুকে দেখলেন ইমাম রুকুতে চলে গেছে, আপনারা মসজিদের দরজায়। তখন কি করেন? দরজা থেকেই দৌড় দেন। দৌড়ে গিয়ে যদি রুকু পাওয়া যায় তাহলে ভালো, কিন্তু যদি দেখেন ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠে গেছেন, আস্তে করে হাত বাধতে গিয়েও ছেড়ে দেন।
ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠে দুই সেজদা শেষ করে দাঁড়ালে তখন আবার আল্লাহু আকবর বলে হাত বাঁধেন। এই দুটো কাজই মাকরুহ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন নামাজ শুরু হয়ে যাবে, ইকামত শুরু হয়ে গেছে, রুকু হোক যা-ই হোক, তুমি সালাতে দাঁড়িয়ে যাবে। মনটা শান্ত থাকবে অস্থির হওয়া যাবে না। সালাত দুই রাকাত মিস হয়ে গেছে তো কি হয়েছে, ইমামের সাথে শেষ করে বাকিটা নিজে পড়বে।
কারণ দৌড়াচ্ছ কেন? তুমি যখন বাড়ি থেকে, দোকান থেকে মসজিদে যাওয়ার নিয়ত নিয়ে বেরিয়েছ তোমার পা মাটিতে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে তোমার আমলনামায় সালাত পড়ার সওয়াব লেখা হচ্ছে। তুমি তো মসজিদেই আছো, মসজিদে গিয়ে দেখলে সালাত শেষ হয়ে গেছে, তারপরও তোমার আমলনামায় জামাআ’তের সওয়াব লেখা হবে। তাহলে দৌড়াবে কেন, শান্তভাবে যাবে।
আপনি অভ্যাস করেন, বিশ্বাস করেন মাস দুয়েক অভ্যাস করবেন, তারপর মন শান্ত, আপনি শান্ত, মন অস্থির হচ্ছে না। দেখবেন আপনার দুনিয়ার সব কাজে মন শান্ত হয়ে যাবে। তাহলে বুঝা গেল দৌড়ে যাওয়া একটা অন্যায় কাজ। আরেকটা অন্যায় হলো- রুকু মিস করলে পরের রাকাতের জন্য দাঁড়াই থাকা। আপনি কি রাকাত গণনা করতে মসজিদে গিয়েছেন না সওয়াব পাওয়ার জন্য। ইমাম যখন রুকু থেকে উঠে গেছে কোন অসুবিধা নেই, আপনি আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরিমা করে ইমামের সাথে সাথে সিজদায় চলে গেলেন।
আপনি একটা সিজদাও যদি করেন হতে পারে এই একটা সিজদার জন্য আল্লাহ তায়ালা আপনার সকল গুনাহ মাফ করতে পারেন। সুবহানাল্লাহ। একটা সিজদার অনেক দাম, কবরে গেলে আমরা দেখব একটা সিজদার জন্য, একটা সিজদার সওয়াবের জন্য দুনিয়ার সব সম্পদ দেওয়ার জন্য মন ছটফট করবে। কাজেই ভাইরা মসজিদে যদি দেখেন, রুকুতে গেছে ইমাম শান্তভাবে যাবেন। আরো অনেকগুলো ভুল করি আমরা। মসজিদে আগের কাতারে জায়গা রেখে পিছনের কাতারে দাঁড়ানো গুনাহের কাজ।
মুসল্লীরা প্রত্যেকের গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়াবে।। সাহাবীরা কেমন দাঁড়াতেন? তাদের পায়ের সাথে পা, টাখনু সাথে টাখনু, হাটুর সাথে হাটু পুরো লেগে যেত। অন্তত এমন হবেন যেন শরীর রেগে আছে কাছাকাছি। আর বাঙালি কি করে, চারজন ঠেলাঠেলি আরেকজন বারান্দায় একা। এতে নামাজ মাকরুহ হবে, গুনাহ হবে। আর কাতারে ফাকা রাখলে আল্লাহ মুসলমানদের অন্তরের ভিতর ফাকা তৈরি করে দেয়। মানে পরস্পর মতভেদ-ঝগড়া।
শান্তভাবে কাতারে হেটে যাবেন, আপনি যতগুলো পদক্ষেপ পা ফেলবেন প্রত্যেকটার সওয়াব হবে। বিশেষ করে কাতারের ফাক পূরণের জন্য হাঁটা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন এর চেয়ে বেশি সওয়াবের আর কিছু নেই। আপনি একটা পা ফেলবেন কাতারের একটা ফাক পূরণের জন্য সওয়াব পাবেন। ডানে বামে সামনে এই একটা পদক্ষেপ আপনাকে জান্নাতের দিকে এগিয়ে নেবে।
তো ঐ যুবক সাহাবী মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে চলে গেছেন। এখন তিনি তো আমাদের মত খিছে দৌঁড় দেওয়া বুঝেন নি। উনি একটা অনেক সুন্দর কাজ করেছেন। ঐ দরজাতেই আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে চলে গেছেন, দিয়ে রুকু অবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে কাতারে চলে গেছেন।
আমাদের দেশে যদি কেউ এমন করে তাহলে তো নামাজ শেষে আর লোকে ছাড়বে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যুবকদের কোনো ভয়ছিল না। যুবক চলে গেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে।
-ইয়া রাসূলুল্লাহ আজকে একটা কাজ করে ফেলেছি।
-কি কাজ করেছো?
-এই কাজ করছি।
আমাদের মত হুজুররা হলে কি করত? প্রথমেই বকা দিত, হেহ এইটা কোনো কাজ করলি, এই কাজ মানুষ করে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি করলেন? প্রথমে দোয়া করলে। মাশাল্লাহ তোমার জামায়া’ত ধরার যে আগ্রহ আল্লাহ বরকত দিক, আমি দোয়া করি। কিন্তু বাবা এরকম আর করো না কোনোদিন রাগ করেননি, গাল দেননি, আবার নামাজ পড়তে বলেননি, কিছুই বলেননি। শুধু বলেছিলেন এরকম কাজ আর করো না।
তাহলে দেখুন আমাদের আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শের মধ্যে মত পার্থক্য? আমাদের তো উনার আদর্শই বাস্তবায়ন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিক, আমীন।
শ্রুতিলিখন: মাহমুদুল হাসান