চিকিৎসকরা বলছেন বেশিরভাগ কোভিড রোগীকেই বাসায় রেখেই সুস্থ করা সম্ভব। তাহলে কখন কোভিড রোগীকে হসপিটালে জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি করতে হবে?
১. শ্বাসকষ্ট শুরু হলে।
২. ঠোঁট, জিহবা, মুখ ইত্যাদি নীলচে রঙ ধারণ করলে।
৩. পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেন স্যাচুরেশান ৯৩% এর নিচে নেমে গেলে।
৪. জ্বর এবং কাশির অবনতি হতে থাকলে।
৫. অতিরিক্ত দুর্বলতা দেখা দিলে।
৬. অসময়ে অতিরিক্ত ঝিমুতে থাকা/কোনোভাবে জাগিয়ে রাখা যাচ্ছে না/কিছু মনে রাখতে পারছে না/সময়-স্থান-মানুষ চিনতে পারছে না/অজ্ঞান হয়ে গেলে।
৭. বুকে চলমান ব্যথা/চাপ অনুভূত হতে থাকলে।
এমন সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে কী করণীয়?
১-৩ নাম্বার সমস্যাগুলো দেখা দিলে রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে দিন। বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলে অক্সিজেন দিন।
এবার আসি করোনাকালে কি কি খাবার খেতে হবে। কিছু প্রশ্নের আলোকে উত্তরগুলো দিচ্ছি।
প্রশ্ন-১: এমন কোনো খাবার কি আছে যা খেলে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করতে পারবে না? বরং কুপোকাত হয়ে যাবে?
উত্তর: না, নেই।
প্রশ্ন- ২: এমন কোনো খাবার আছে কি যেটা না খেলে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা যাবে না?
উত্তর: না, নেই।
প্রশ্ন- ৩: তাহলে খাবারের ব্যাপারে পরামর্শ কী?
উত্তর: সুষম খাদ্য বা ব্যালেন্সড ডায়েট খেতে হবে। সেসব খাবার থেকেই শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নিয়ে নেবে।
প্রশ্ন- ৪: কোন কোন খাবার বেশি খাব?
উত্তর: এমন খাবার বেশি খেতে হবে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মূল যুদ্ধটি করে। ভিটামিন সি, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রশ্ন- ৫: কোথায় পাব ভিটামিন সি?
উত্তর: পেয়ারা, আমলকি, লেবু, জাম্বুরা, কমলা, টমেটো, কাঁচামরিচ, মিষ্টি আলু ইত্যাদিসহ অন্যান্য মৌসুমি ফলমূল এবং শাকসবজিতে।
প্রশ্ন- ৬: আচ্ছা জিঙ্কের কথা বলছিলেন, এটা কোন খাবারে পাব?
উত্তর: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বীচি, বাদাম, ডাল এবং গমজাতীয় খাবারে জিঙ্ক থাকে।
প্রশ্ন- ৭: তাহলে ম্যাগনেসিয়াম কোন খাবারে থাকে?
উত্তর: পালংশাক, টক দই, কলা ইত্যাদি খাবারে।
প্রশ্ন- ৮: দৈনিক কতো রকমের শাকসবজি ও ফল খাব?
উত্তর: দিনে কমপক্ষে দুধরনের শাকসবজি এবং এক ধরনের ফল খাওয়া ভালো।
প্রশ্ন- ৯: শাকসবজি কীভাবে কাটতে হবে?
উত্তর: বড় বড় টুকরো করে কাটতে হবে।
প্রশ্ন- ১০: শাকসবজি রাঁধতে হবে কীভাবে?
উত্তর: কম তাপে ঢেকে রান্না করতে হবে যাতে পুষ্টি উপাদানগুলো অটুট থাকে।
প্রশ্ন- ১১: মাছ, মাংস, ডিমও কি অল্প আঁচে রান্না করব?
উত্তর: না। এগুলো বেশি আঁচে সময় নিয়ে রান্না করতে হবে যেন ভালোভাবে সেদ্ধ হয়।
প্রশ্ন- ১২: রান্নার সময় ভাতের মাড় কী করব?
উত্তর: না ফেলাই শ্রেয়।
প্রশ্ন- ১৩: রান্না ও খাওয়ার আগে কোনো বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে?
উত্তর: ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
প্রশ্ন- ১৪: ভিটামিন-ডি-এর ব্যাপারে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। এ সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: ভিটামিন-ডি আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি বড় সংখ্যক মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি-এর স্বল্পতা দেখা গেছে। ভিটামিন-ডি-এর সবচেয়ে বড় উৎস সূর্যের আলো। সূর্যের আলো যখন ত্বকের ওপর পড়ে, তখন আমাদের শরীরে ভিটামিন-ডি তৈরি হয়।
প্রশ্ন- ১৫: কতোক্ষণ সূর্যের আলোতে থাকব প্রতিদিন? কখন?
উত্তর: দিনে অন্তত ১০-১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। মধ্যদুপুরে সূর্য যখন প্রখর হয়ে ওঠে তখন রোদের আলো শরীরে লাগানো ভালো। তবে সামাজিক দূরত্ব যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে ব্যাপারটিও খেয়াল রাখতে হবে। নিজের বারান্দা, ছাদ বা বাগান বেছে নেয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন- ১৬: কোনো খাবারে ভিটামিন-ডি থাকে না?
উত্তর: থাকে। যেমন, মাছের তেল, কলিজা, মাশরুম, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদিতে। তবে প্রধান উৎস সূর্যালোকই।
প্রশ্ন- ১৭: ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট নেয়া যাবে?
উত্তর: চিকিৎসকের পরামর্শে দৈনিক ৪০০ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট খাওয়া যেতে পারে। তবে নিজের ইচ্ছেমতো বেশি ডোজে খেলে কিডনি, হৃদপিণ্ড এবং হাড়ের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
প্রশ্ন- ১৮: পানি খাবার ব্যাপারে কোনো পরামর্শ?
উত্তর: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি অবশ্যই পান করতে হবে। কুসুম গরম পানি হলে ভালো হয়। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীরের নানা ক্ষতি হয়।
প্রশ্ন- ১৯: কীভাবে বুঝব পর্যাপ্ত পানি খাচ্ছি কি না?
উত্তর: প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ হলে বুঝে নিতে হবে পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না শরীর।
প্রশ্ন- ২০: কোন কোন খাবার পরিহার করতে হবে সুস্থ থাকতে চাইলে?
উত্তর: চিনি, চর্বিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত লবণ, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, বোতলজাত কোমল পানীয়, কৃত্রিম জুস, কেইক, পেস্ট্রি ইত্যাদি।
প্রশ্ন- ২১: দিনে কতোটুকু লবণ খাওয়া যাবে?
উত্তর: ১ চা চামচের কম।
প্রশ্ন- ২২: খুসখুসে কাশি বা গলাব্যথা থাকলে বাসায় কী খেতে পারি?
উত্তর: মধু, লেবু-আদা-মধুমিশ্রিত চা, মুরগির গরম স্যুপ ইত্যাদি খেতে পারেন। গলা ব্যথার জন্যে লবণপানি দিয়ে কুলি করা যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে৷
ডা. মারুফ রায়হান খান
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
বসুন্ধরা কোভিড হসপিটাল