কিছু অসুস্থতায় রোগীকে পানি থেকে দূরে রাখতে হয়, দেখেছেন এমন? আপনার কোনো প্রিয়জন এরকম অসুস্থ হলে হাজার চাইলেও আপনি তাকে পানি দিবেন না। সে যদি খুব পিপাসার্ত হয়, তা-ও না। অথচ পানির তো কোনো অভাব নেই। কিন্তু আপনি কেনো তাকে পানি খেতে দিবেন না? কারণ পানি খাওয়াটাই তার জন্য ক্ষতি। চাহিদা পূরণ করে আপনি তাকে বিপদে ঠেলে দিতে পারেন না। মানুষটা আপনার প্রিয়জন, ভালোবাসেন।
এরকম তো আপনার সাথে প্রায়ই হয় যে, দুয়া করছেন কিন্তু সেটা কবুল হয়নি? হচ্ছে না? আপনি খুব করে চাইছেন কিন্তু আল্লাহ দিচ্ছেন না। তাই না? জানেন, আল্লাহ যখন কাউকে ভালোবাসেন, তখন তাকে দুনিয়া থেকে এভাবেই দূরে সরিয়ে রাখেন যেভাবে আপনি আপনার অসুস্থ প্রিয়জনকে পানি থেকে দূরে রাখেন।
আল্লাহর কাছে অভাব নেই, আপনি চাইছেন, আল্লাহ দিচ্ছেন না কারণ তিনি আপনাকে ভালোবাসেন। পরবর্তী ক্ষতি কী হতে পারে তা আপনি জানেন না, হয়তো। কল্পনাও করতে পারেন না। বললে আপনি হয়তো বিশ্বাসও করবেন না, কিন্তু এটাই সত্যি। আপনি যা চাইছেন, তা আপনার জন্য ক্ষতিকর।
আপনি হয়তো ভাবছেন আল্লাহ আপনাকে বুঝেন না, কিন্তু আল্লাহই আসলে আপনাকে সবচেয়ে বেশী বুঝেন। মুখে যা উচ্চারণ করতে পারছেন না, কান্না হয়ে যে কথা গড়িয়ে পড়ছে, আল্লাহ তা-ও বুঝেন, সব বুঝেন। রমযান জুড়ে হয়তো আপনি এমন কিছু চেয়েছেন যা পেলে আপনি আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যাবেন। তার মানে সেটা আপনার জন্য ক্ষতির কারণ। হয়তো এমন কিছু চেয়েছেন যা এখনো পাননি। আপনি অধৈর্য হয়ে পড়েছেন।
কিন্তু না, খুব তাড়াতাড়ি আল্লাহ আপনাকে এতো দিবেন, এতো দিবেন যে আপনি খুশী হয়ে যাবেন। শুধু আপনাকে বুঝতে হবে, সিদ্ধান্তটা আল্লাহ নিয়েছেন, আপনার জন্য। এক সৃষ্টির জন্য তার স্রষ্টার সিদ্ধান্তের চেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত আর কী হতে পারে?
অথবা আপনি যা চাইছেন, তা আপনার জন্য ভালো, এই চাওয়া পূরণ হলে আপনার অবস্থা বদলে যাবে। তখন আল্লাহ সেটি আপনার কাছে থেকে সরিয়ে নেন। কেনো নেন? কারণ সেটি পেলে আপনি তাতে এতোটাই মত্ত হয়ে যাবেন যে জান্নাত থেকে দূরে সরে যাবেন। আল্লাহ এই কথা জানেন, তাই আপনি যা ভালোবাসেন, তা আপনার থেকে দূরে সরিয়ে নেন।
সুখ আল্লাহকে ভুলিয়ে দেয়, এর উদাহরণ বারে বারে দেখেছেন নিশ্চয়ই। দুঃখেও মানুষ আল্লাহকে ভুলে যায়। আপনি যা চাইলেন, তা পেলেন না। নিজেই দূরে সরে গেলেন আল্লাহর কাছ থেকে। বললেন, আমার দুয়া তো কবুল হয়নি, পেলাম না তো।
আপনার চাওয়া পূরণ হলে আল্লাহকে শুকরিয়া জানাতেন? কিন্তু, আল্লাহর সাথে কি আমাদের চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক? আমরা আল্লাহর বান্দা। বান্দা হচ্ছে দাস। একজন দাস আর তার মনিবের মাঝে কি এরকম চুক্তি থাকতে পারে? পারে না। কারণ দাস যখন মনিবের কাছে কিছু চাইছে, ঐ সময়টাতেও সে মনিবের রাজত্বেই বাস করছে।
আল্লাহর দয়ায় থেকে কি এরকম ভাবা যায়?
-যায় না।
রমযান জুড়ে আপনি যা চেয়েছেন, আপনি হয় তা পাবেন, অথবা তার চেয়ে ভালো কিছু পাবেন।
কিছুই পাবেন না, এমনটা কখনো হবে না। আস্থা রাখুন!