১.
ইসলামী ফিকহে খুনছা ও মুখান্নাছ সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। উভয়ের ধরণ ও মর্ম আলাদা। খুনছা বলে বোঝানো হয়, আন্তঃলিঙ্গ ও হিজড়াদেরকে। কিন্তু মুখান্নাছ বলে স্বাভাবিকভাবে বোঝানো হয়, ঐ ধরণের পুরুষকে যে অঙ্গভঙ্গি, বাকভঙ্গি, দৃষ্টি ইত্যাদিতে হুবুহু নারীদেরকে অনুসরণ করে। খুনছা একজন প্রাকৃতিক যৌন সংকটাপন্ন ব্যক্তি আর মুখান্নাছ যৌন বিকারের একটা নমুনা।
হিজড়া সাধারণভাবে তিন ধরণের হয়ে থাকে।
- অপ্রকৃত পুরুষ হিজড়া (Male Pseudo Hermaphrodite)
- অপ্রকৃত নারী হিজড়া (Female Pseudo Hermaphrodite)
- প্রকৃত হিজড়া (True Hermaphrodite)
ইসলামী ফিকহে তৃতীয় নং প্রকারকে বলা হয় ‘আল-খুনছাল মুশকিল’। আর প্রথম দুই প্রকারকে বলা হয় ‘আল-খুনছা গাইরুল মুশকিল’।
অপ্রকৃত হিজড়া (Pseudo Hermaphrodite) বা ‘আল-খুনছা গাইরুল মুশকিল’ গর্ভে থাকাকালীন সময়ে অন্যান্য শারীরিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মতই শিশুর যৌনাঙ্গ গঠিত হয়। যৌনাঙ্গ গঠনে ক্রোমোজোমের ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ক্রোমোজোমের ত্রুটিবিচ্যুতির ফলেই জন্ম নেয় যৌন প্রতিবন্ধী শিশু। এই ধরণের হিজড়াদের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায়, নারী অথবা পুরুষ, দুই লিঙ্গের কোন একটি লিঙ্গের প্রাধান্য স্পষ্ট হয়ে যায় বিভিন্ন মাধ্যমে। অপ্রকৃত পুরুষ হিজড়া (Male Pseudo Hermaphrodite)-এর সকল বিধান ইসলামী ফিকহে, পুরুষদের মতই। ধরা হবে, পুরুষ ব্যক্তির মধ্যে যেন কিছুটা অঙ্গগত বৃদ্ধি আছে। তেমনিভাবে অপ্রকৃত নারী হিজড়া (Female Pseudo Hermaphrodite) ইসলামের বিধি-বিধান পালন করবে নারীদের মতই।
অপ্রকৃত পুরুষ বা অপ্রকৃত নারী হিজড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে ফিকহে উদাহরণস্বরূপ কিছু আলামত বর্ণনা করা হয়। যেমন, সেই হিজড়া প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর দাঁড়ি-গোঁফ প্রকাশ, পুরুষদের মত বীর্জপাত, নারীদের সাথে যৌনমিলনে সক্ষম হওয়া ইত্যাদি। এছাড়া পুরুষদের মত সাহস, শক্তি, শত্রুর মুখোমুখি হওয়াকেও জামালুদ্দিন ইসনাওয়ী অপ্রকৃত পুরুষ হিজড়ার আলামত হিসেবে বর্ণনা করেছেন, ‘ই’দাহুল মুশকিল মিন আহকামিল খুনছাল মুশকিল’ গ্রন্থে। স্বাভাবিক পুরুষের যৌন ক্রোমোজোম বিন্যাস XY এবং নারীর ক্ষেত্রে XX। কিন্তু অপ্রকৃত পুরুষ হিজড়ার ক্রোমজোম বিন্যাস সাধারণত হয়ে থাকে XXY।
অন্যদিকে অপ্রকৃত নারী হিজড়া চিহ্নিত করা যায় বয়ঃপ্রাপ্তির পর স্তনের স্ফীতি, সেখান থেকে দুগ্ধ উৎপাদনের ক্ষমতা, ঋতুস্রাব হওয়া, যোনির উপস্থিতি, গর্ভধারণ ইত্যাদির মাধ্যমে। হিজড়াদের লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইসলামী ফিকহে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয়; সেটা হল যৌন-অনুরাগ। যদি কোন হিজড়ার যৌন-অনুরাগ ও আকাঙ্খা থাকে নারীদের প্রতি তাহলে সে অপ্রকৃত পুরুষ হিজড়া বলে বিবেচিত হয়। পুরুষদের প্রতি অনুরাগ থাকলে বিবেচিত হয় নারী হিজড়া হিসেবে।[1]
প্রকৃত হিজড়া (True Hermaphrodite) বা ‘আল-খুনছাল মুশকিল’-দের শরীরে শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় উভয়ই অবস্থান নেয়। এরা অধিকাংশই পেশীবহুল শরীরের অধিকারী থাকে। সাথে স্তনও থাকে। যোনির সাথে থাকে শিশ্ন। অল্প হলেও কারো কারো শিশ্নের বদলে যোনি থাকে কিন্তু ভগাঙ্কুর স্বাভাবিকের তুলনায় বড় থাকে অনেক সময় তা পুরুষ শিশ্নের মত হয়ে থাকে। এদের মূত্রনালি ও যোনিপথ একসাথে থাকে। একে বলে ইউরোজেনিটাল সাইনাস। ফেলোপিয়ান নালী ও জরায়ুও থাকে। জরায়ু অত্যন্ত ছোট হয়। চিকিৎসার ভাষায় একে বলে হাইপোপ্লাস্টিক বা ইউনিকরনেট।
এই ধরণের হিজড়াদের ক্ষেত্রে ইসলামী ফিকহে বিভিন্ন ধরণের বক্তব্য আছে। অস্পষ্টতার দরুণ এক্ষেত্রে প্রচুর মতভেদ আছে। সর্বশেষ কথা বলে এখানে কিছু নেই। তবে এই ধরণের হিজড়াদের বিবাহ জায়েয নেই, জুমহুর উলামায়ে কেরামের মতে। কারণ, সে পুরুষ নাকি নারী সেটাই স্পষ্ট নয়। তো তার বিবাহ কার সাথে হবে? পুরুষের সাথে নাকি নারীর সাথে। এখন কথা হল, তার যৌন-আকাঙ্খা থাকলে সে কি করবে। যদি স্পষ্টভাবে কোন এক লিঙ্গের প্রতি যৌন-অনুরাগ থাকে, তাহলে সে ‘আল-খুনছাল মুশকিল’-এর প্রকার থেকে বেরিয়ে যাবে। পুরুষের প্রতি যৌন অনুরাগ থাকলে নারী বলে গণ্য হবে। নারীদের প্রতি অনুরাগ থাকলে গণ্য হবে পুরুষ বলে। কিন্তু যদি দুই লিঙ্গের প্রতিই যদি তার সমান অনুরাগ থাকে, তাহলে সে প্রকৃত ‘আল-খুনছাল মুশকিল’। তাকে সবর করতে বলা হবে। হয়ত একসময় আল্লাহ তার অবস্থা পরিবর্তন করে দেবেন।
বিবাহ যেহেতু লিঙ্গের সাথেই ওৎপ্রোতভাবে জড়িত, তাই এক্ষেত্রে প্রায় নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। কিন্তু অন্যান্য ইবাদতের পদ্ধতি ও উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে চার মাজহাবের ইমামগণ ন্যূনতম অনুমান করে হলেও এই ধরণের হিজড়াকে কোন না কোন প্রকারে ভাগ করার পক্ষপাতি। এক্ষেত্রে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম আলামত লক্ষ্য করে তাকে নারী অথবা পুরুষের কাছাকাছি বলে ভাগ করেছেন। কারণ, যদি তার লিঙ্গ অনুমান করেও নির্ধারণ না করা হয়, তাহলে শরীয়তের আহকাম-বিধান সে কিভাবে পালন করবে, সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত অস্পষ্টতা তৈরি হয়।
হিজড়া ব্যক্তি নারী নাকি পুরুষ, সেটার অনুমান নেয়ার জন্য প্রসাবের পরিমাণ দেখতে বলেছেন ফোকাহায়ে কেরাম। যদি প্রবল ধারায় প্রসাব করে সে, তাহলে নারী অনুমান করে নেয়া হবে। আর ক্ষীণ ধারায় করলে পুরুষ। দুই লিঙ্গের কোন লিঙ্গে সে প্রসাব করে, সেটাও বিবেচ্য। যদি দুই লিঙ্গ দিয়ে তার প্রসাবের অভ্যাস থাকে, তাহলে কোনটার মাধ্যমে আনুপাতিক হারে বেশি হয়, সেটা দেখা হবে। যদি দেখা যায়, ঋতুস্রাব বা বীর্যপাত, দুটোরই অভ্যাস আছে তার, তাহলে লক্ষ্য করতে হবে, কোনটির মাধ্যমে প্রথমে সে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছে। এছাড়াও অন্য অন্য সূক্ষ্ম আলামত লক্ষ্য করার কথা তো আছেই।
এসবের মাধ্যমেও যদি নির্ধারণ না করা যায়, তাহলে সেই হিজড়া ব্যক্তি নিজের মনের প্রবল ধারণার উপর ভিত্তি করে আমল করবে। মানুষ নিজের মধ্যে কোন না কোন দিকের টান ও প্রাধান্য অবশ্যই অনুভব করতে পারে। মোটকথা, ‘আল-খুনছাল মুশকিল’-এর বিষয়টা যদিও চূড়ান্ত অস্পষ্ট, কিন্তু ন্যূনতম অনুমান ও মনের ধারণার ভিত্তিতে হলেও যেকোন এক দিকে তাকে নিয়ে যেতে চেয়েছে ইসলামী ফিকহ, যেন শরীয়া পালনের ক্ষেত্রে তার কোন প্রতিবন্ধক না থাকে।[2]
বোঝা গেল, খুনছা ব্যক্তি নিছক মানবিক ও প্রাকৃতিক যৌনগত সমস্যায় আক্রান্ত। খুনছা মানেই ইসলামে নিন্দনীয় কেউ নয়। হিজড়াদেরকে ইসলাম কোন ধরণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেনি। তাদের জন্য বিভিন্ন আহকাম বিধান বর্ণিত হয়েছে। অন্যান্য স্বাধীন মুসলমানদের মতই তারা শরীয়ত পালনে বাধ্য। নিছক আন্তঃলিঙ্গত্বের দরুণ তাদেরকে শরীয়া পালনে মাজুর ও অক্ষম হিসেবে গণ্য করেনি। বর্তমানে সামাজিকভাবে তাদেরকে যে একঘরে করে রাখা হয়েছে, সেটা তাদের উপর সামগ্রিক একটা জুলুম। এই জুলুমের জন্যই তাদের মাঝে যৌন বিকারের সৃষ্টি হচ্ছে।
সমাজের চোখে তারা হাস্যরসের পাত্র হওয়ার দরুণ, তাদের শক্তি-সামর্থ অর্থনৈতিক খাতে ব্যবহৃত হতে পারছে না। বরং তাদের বিশাল গোষ্ঠীটা কেবলই ভিক্ষাবৃত্তি ও চাঁদাবাজির উপর টিকে থাকছে। অন্যদিকে অপ্রকৃত নারী ও পুরুষ হিজড়াদের মধ্যে যৌনক্ষম ব্যক্তিদের জন্য সামাজিকভাবে বৈধ বিবাহের প্রচলন না থাকার দরুণ, ব্যাপকভাবে যৌন বিকারের সম্মুখিন হচ্ছে তারা। অপ্রকৃত নারী হিজড়ারা শরয়ী পর্দা-পুশিদার ধারও ধারছে না।
অপ্রকৃত পুরুষ হিজড়ারা অনবরত মুখান্নাছ হওয়ার পাপ কামিয়ে যাচ্ছে। আর ‘আল-খুনছাল মুশকিল’-এর সংখ্যা নিতান্নই গৌণ। দেখা যাচ্ছে, হিজড়াদের অর্থনীতি, নৈতিকতা ও যৌনতার বিকারের ক্ষেত্রে সামাজিকতাই অনেকাংশে দায়ী। সমাজচ্যুত হওয়ার দরুণ, শরীয়ার দেয়া অধিকার ও কর্তব্যবোধ আর থাকছে না তাদের মাঝে।
২.
‘মুখান্নাছ’ শব্দটি নির্গত হয়েছে ‘খানাছ’ শব্দের ধাতুমূল থেকে। খানাছ শব্দ দ্বারা বোঝানো হয় মেয়েলিপনা, নারীত্ব, কোমলতা, নম্রতা, সংবেদনশীলতা।[3] শাব্দিকভাবে মুখান্নাছ শব্দের অর্থ, বালিকাসুলভ স্বভাবের অধিকারী পুরুষ। পৌরুষ বলে যেসব গুণাবলির কথা বোঝানো হয় সেগুলো থেকে সে বঞ্চিত; যেমন, সাহস, স্বাধীনচেতা হওয়া, দৃঢ়তা প্রভৃতি। কথা, কাজ, চলন, বলন তার নারীদের মত।[4]
চার মাজহাবের গ্রন্থাবলিতেই মুখান্নাছ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। হানাফী মাজহাব মতে, যদি কেউ কৃত্রিম মুখান্নাছ সেজে বিভিন্ন পাপ করে, তাহলে সে অন্যান্য পুরুষদের মতই একজন পাপী পুরুষ বলে গণ্য হবে। নারীদের থেকে তাকে দূরে রাখতে হবে। কিন্তু কারো মাঝে যদি সৃষ্টিগতভাবে চলাফেরা ও কথায় নারীদের মত লাজুকতা ও নম্রতা থাকে, নারীদের প্রতি প্রবৃত্তি না থাকে, পাপ কাজ না করে, তাহলে এই ধরণের মুখান্নাছকে নারীদের কাছে রাখার রোখছত বর্ণনা করেছেন কতক মাশায়েখ।[5]
মালেকি মাজহাব মতে, কৃত্রিম পাপাচারী মুখান্নাছ আসলে প্রকৃত মুখান্নাছ নয়। প্রকৃত মুখান্নাছ হল সে, যে নম্রতা, কথা, দৃষ্টি, স্বর, কাজ, বুদ্ধির দিক থেকে নারীত্বের দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত। সে পাপাচারী হোক কিংবা না হোক, সেটা বিবেচ্য নয়। যেই মুখান্নাছের নারীদের প্রতি যৌন-অনুরাগ নেই, বুদ্ধি-সুদ্ধিও কম, নারীদের ঘরে প্রবেশ করা তাদের জন্য বৈধ।[6]
শাফেয়ী মাজহাব মতে, ভঙ্গিমা ও কর্মের ক্ষেত্রে যে সৃষ্টিগতভাবে মেয়েলিসূলভ আচরণ করে, তার জন্য কোন গোনাহ নেই।[7] হাম্বলী মাজহাব অনুযায়ী, যেই মুখান্নাছের কোন যৌন-প্রবৃত্তি নেই, সে নারীদের জন্য মাহরামের হুকুমে। আর যদি কোন মুখান্নাসের নারীদের প্রতি প্রবৃত্তি থাকে, তাহলে তার হুকুম অন্যান্য পুরুষদের মতই।[8]
এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে, চার মাজহাব মতেই মুখান্নাছ পারিভাষিকভাবে দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
১. সৃষ্টিগত মুখান্নাছ। সৃষ্টিগতভাবে যার কথা, কাজে ও অঙ্গভঙ্গিতে নারীত্বের স্বভাব বিদ্যমান থাকে। কিন্তু নারীদের প্রতি তার যৌন-অনুরাগ নেই। সে পাপাচারীও নয়। এ ধরণের মুখান্নাছদের ব্যপারে শরীয়ায় কোন নিন্দা বা অভিশাপ বর্ণিত হয়নি। পুরুষত্ব সামাজিকভাবে প্রস্ফুটিত হয়, কিন্তু সামাজিক ও জীববৈজ্ঞানিক প্রভাবক দ্বারা গঠিত হয়। সৃষ্টিগত মুখান্নাছ ব্যক্তি জীববিজ্ঞানগত পুরুষ লিঙ্গ হতে কিছুটা আলাদা। কারণ, তাদের সাধারণত যৌন-অনুরাগ থাকেনা। এই ধরণের পুরুষের ক্ষেত্রে বর্তমানে কখনো কখনো এন্ড্রোজিনাস শব্দটাও ব্যবহৃত হয়।
২. কৃত্রিম মুখান্নাছ। যারা চলন-বলন, কথা-কাজে নারীদেরকে অনুসরণ করে ইচ্ছাকৃতভাবে। সামাজিক ও জীববিজ্ঞানগত দিক থেকে তারা প্রকৃত পুরুষ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তারা নিজেদের আদত অভ্যাস বানিয়ে নিয়েছে মেয়েলিপনা।
অনেক মুফাসসিরের মতে, সৃষ্টিগত মুখান্নাছের কথা কোরানে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, “আর ঈমানদার নারীদেরকে বলে দাও, তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, আর তাদের শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ না করতে– যা এমনিতেই প্রকাশিত হয় তা ব্যতীত। তাদের ঘাড় ও বুক যেন মাথার কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, নিজেদের মহিলাগণ, স্বীয় মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনামুক্ত পুরুষ আর নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্যের কাছে নিজেদের শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজেদের গোপন শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।”[9]
এই আয়াতে উল্লেখিত ‘পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনামুক্ত পুরুষ’ বলতে কোন শ্রেণীকে বোঝানো হয়েছে, সেটা নিয়ে মুফাসসিরে কেরামদের মাঝে ইখতেলাফ পরিলক্ষিত হয়। কেউ বলেছেন, এটা দ্বারা উদ্দেশ্য স্বাভাবিক যৌন-অক্ষম ব্যক্তি। কেউ বলেছেন, খোঁজা। কেউ বলেছেন, চূড়ান্ত বৃদ্ধ ইত্যাদি। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার বলেছেন, এটা দ্বারা সৃষ্টিগত মুখান্নাছ ব্যক্তি উদ্দেশ্য।[10]
সৃষ্টিগত মুখান্নাছ ব্যক্তিরা সাধারণভাবে নবীজির যুগে নারীদের সাথে দেখা করতে পারত। যদি ন্যূনতম অনুমান করা যেত, সে কৃত্রিম মুখান্নাছ তাহলে তার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যেত। এজন্যই বর্ণিত হয়েছে, “উসমান ইবনু আবি শায়বা রহ. … উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে থাকাকালে, সেখানে একজন মেয়েলী ভাবাপন্ন পুরুষ ছিল। ঐ মেয়েলী পুরুষটি উম্মে সালামার ভাই আবদুল্লাহ ইবনু আবি উমাইয়াকে বলল, যদি আগামীকাল আপনাদেরকে আল্লাহ তায়েফ বিজয় দান করেন, তবে আমি আপনাকে গায়লান-কুমারীকে গ্রহণ করারা পরামর্শ দিচ্ছি।
কেননা, (সে এত কোমলদেহী যে,) সম্মুখ দিকে আগমন করলে তার পেটের চামড়ায় চার ভাঁজ পড়ে আর পিছু ফিরে যাওয়ার সময় আট ভাঁজ পড়ে। একথা শোনার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এ মেয়েলী পুরুষ) সে যেন কখনো তোমাদের কাছে আর না আসে।”[11] ইবনে জুরাইজ বলেছেন, সেই কৃত্রিম মুখান্নাছের নাম ছিল হীত। এই মুখান্নাছের কথার মাধ্যমে বোঝা যায়, সে যৌনতাকে অনুভব করে।
কৃত্রিম মুখান্নাছদেরকে নবী সা. লানত পর্যন্ত করেছেন। বর্ণিত হয়েছে, “মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহ.) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেছেন নারীরূপী পুরুষ (মুখান্নাছ) ও পুরুষরূপী নারীদের উপর এবং বলেছেন, তাদেরকে বের করে দাও তোমাদের ঘর হতে এবং তিনি অমুক অমুককে বের করে দিয়েছেন।”[12]
হাদিসে আল্লাহর নবীর লানতের মাধ্যমে বোঝা যায়, কৃত্রিম মুখান্নাছ সাজা একটা হারাম কাজ। ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন, “হাদিসে যেই লানতের কথা বর্ণিত হয়েছে, সেটা কৃত্রিম মুখান্নাছের ক্ষেত্রে, সৃষ্টিগত মুখান্নাছের ক্ষেত্রে নয়। তবে সৃষ্টিগত মুখান্নাছকে নারীসূলভ আচরণ ত্যাগ করার জন্য অন্তত চেষ্টার উপদেশ দেয়া হবে। যদি সে চেষ্টা না করে, নিজের মতই চলতে থাকে, তাহলে সেও শরীয়তের নিন্দার পাত্র। ইমাম নববী অবশ্য শর্তহীন বলে দিয়েছেন, সৃষ্টিগত মুখান্নাছ কোন ধরণের নিন্দার পাত্র হবে না। তার কথার ব্যাখ্যায় আমরা বলতে পারি, হয়ত তার উদ্দেশ্য ঐ ধরণের মুখান্নাছ, যারা চেষ্টা করার পরও সেই স্বভাবে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনতে পারেনি।[13]
মুখান্নাছ পুরুষ গায়রে মাহরাম নারীকে দেখতে পারবে কিনা, এই মাসআলায়ও ফোকাহায়ে কেরামের বিভিন্ন মত বিদ্যমান। তবে কৃত্রিম মুখান্নাছ যে নারীকে দেখতে পারবে না, এক্ষেত্রে কোন মতভেদ নেই।[14]
তবে যদি সে সৃষ্টিগত মুখান্নাছ হয়, সেক্ষেত্রে ফোকাহায়ে কেরামের দুই ধরণের বক্তব্য বিদ্যমান।
- মালেকি, হাম্বলি ও হানাফী মাজহাবের কিছু মানুষের মতে, এমন পুরুষদেরকে নারীদের কাছে রাখার রোখসত দেয়া যায়। তাদেরকে দেখলেও অসুবিধা নেই। তাদের দলিল সূরা নূরের ৩১ নং আয়াত।[15]
- শাফেয়ী ও অধিকাংশ হানাফীদের মতে, প্রাকৃতিক মুখান্নাসদের জন্যও জায়েয নেই নারীদের দিকে তাকানো। কারণ, তারা মূলত পুরুষই। তাদের দলিল, সহিহ বুখারীর ৪৮৫৫ নং হাদিসে বর্ণিত নবীজির আদেশ, “(এ ধরণের মেয়েলী পুরুষ) যেন কখনো তোমাদের (নারীদের) কাছে আর না আসে।”[16]
কিন্তু কোন পুরুষের মাঝে মেয়েলিপনা থাকলেও তাকে ‘মুখান্নাছ’ বলে সম্মোধন করা যাবে না। এ সম্পর্কেও হাদিসে হুঁশিয়ারী এসেছে। সুনানে তিরমিজিতে আছে, “মুহাম্মদ ইবনু রাফি’ রহ. … ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি অন্য কাউকে বলে, হে ইয়াহুদী, তবে তাকে বিশ ঘা বেত্রদন্ড দিবে। যদি বলে হে মুখান্নাছ, তবে তাকেও বিশ ঘা বেত্রদন্ড দিবে। আর কেউ যদি মাহরাম মহিলার সাথে উপগত হয় তবে তাকে কতল করবে।”[17] সুনানে ইবনে মাযাহ-তে আছে, “ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ‘‘হে মুখান্নাস’’ বললে তাকে বিশটি বেত্রাঘাত করো এবং কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ‘‘হে লুতী’’ (সমকামী) বললে তাকেও বিশটি বেত্রাঘাত করো।”[18] তবে ব্যাখ্যাকারগণ বলেছেন, এই হাদিসটি দুর্বল। এটার মূল অর্থ উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হল, ব্যক্তিগতভাবে ভীতি প্রদর্শন আর রাষ্ট্রীয়ভাবে অনির্দিষ্ট শাস্তি প্রদান (তা’যির)। এজন্যই ইমাম বাইহাকী এই হাদিসের ক্ষেত্রে বলেছেন, “এই হাদিসটি শক্তিশালী নয়। তবে যদি হাদিসটি সহিহ হয়, তাহলে এর উদ্দেশ্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে অনির্দিষ্ট শাস্তি প্রদান (তা’যির)। হাদিসে উল্লেখিত বাহ্যিক বিষয় উদ্দেশ্য নয়।[19]
হানাফী মাজহাব মতে, এই ধরণের গালিবাজ লোককে শাসকের পক্ষ থেকে তা’যির করা হবে।[20] মালেকি মাজহাব মতে, কেউ যদি কোন মানুষকে মুখান্নাছ বলে সম্মোধন করে, তাহলে শাসকের কাছে তার বিষয়টা পেশ করা হবে। সেখানে তাকে হলফ করতে বলা হবে, ‘আল্লাহর কসম, মুখান্নাছ সম্মোধন দ্বারা আমি যৌনতার অপবাদ দিতে চাইনি।’ যদি সে এই কসম করতে না পারে, তাহলে তার উপর যৌন অপবাদের হদ প্রয়োগ করা হবে। আর যদি সে কসম করে, তাহলে তাকে কিছুটা শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে। তবে বিচারালয়ে মামলা দায়ের করার আগেই, অপবাদকৃত লোকটি যদি অপবাদকারীকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে পরবর্তীতে শাসক তাকে আর শাস্তি দিতে পারবে না।[21]
শাফেয়ী মাজহাব মতে, ‘মুখান্নাছ’ সম্বোধনে কাউকে গালি দিলে সেটা ইঙ্গিতার্থে যৌন-অপবাদ বলে ধরে নেয়া হবে। এবং তাকে শাসকের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্ট শাস্তি দেয়া হবে। ইবনে আবদিস সালাম অবশ্য বলেছেন, এটা সুস্পষ্ট অপবাদ। তাই তাকে অবশ্যই যৌন-অপবাদের হদ লাগানো হবে।[22] হাম্বলী মাজহাব মতে, কেউ যদি কাউকে ‘মুখান্নাছ’ বলে গালি দেয়, তাহলে তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। যদি সে তার কথাকে ব্যাখ্যা করে যৌন-অপবাদের বাইরে নিয়ে যেতে পারে, তাহলে তার উপর যৌন-অপবাদের হদ প্রয়োগ করা হবে না।[23]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. কৃত্রিম মুখান্নাছের বিবাহ সম্পর্কে বলেছেন, “যেই নারী এই ধরণের পুরুষকে বিয়ে করবে, সে যেন যিনাকারীকেই বিবাহ করল; বরং সে যিনাকারী থেকেও বড়। কারণ, একদিকে সে অভ্যন্তরীণ দিক থেকে সমকামিতায় আক্রান্ত, অন্যদিকে নারীসূলভ কাজ করতে ভালবাসে। দুটি বিষয়ের জন্য হাদিসে আলাদা আলাদা অভিশাপ ও নিন্দা বর্ণিত হয়েছে। কোন নারী কিভাবে এমন পুরুষকে পছন্দ করতে পারে, যার যৌন-প্রবৃত্তি পশ্চাতদেশকে ঘিরে।”[24]
তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, কৃত্রিম মুখান্নাছ মানেই যে সমকামী এমনটা ভাবার অবকাশ নেই। তবে তাদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সমকামিতা। ইবনে বায বলেছেন, “মুখান্নাছ মানে শুধু ঐ ব্যক্তি, যে নারীদের অনুসরণ করে চলে। এর অর্থ এই নয় যে, তাকে সমকামী হতেই হবে। যেমনটা কিছু সাধারণ মানুষ মনে করে থাকে।”[25]
ট্রাডিশনাল গ্রন্থাবলিতে সেই যুগের পুরুষত্বের সংজ্ঞা অনুযায়ী, কৃত্রিম মুখান্নাছের আরো কিছু আদত অভ্যাসের উল্লেখ দেখতে পাই। যেমন, হাত-পায়ে নারীদের মত মেহেদি রং মাখা[26], তবলা বাজানো[27], যৌনোদ্দিপক গান গাওয়া[28], নারীদের মত নৃত্য করা; তবে স্বাভাবিক নৃত্য হারাম নয়।[29] কতকের মতে স্বাভাবিক নৃত্য মাকরূহ।[30] সম্পূর্ণ দাঁড়ি মুণ্ডনকেও ট্রাডিশনাল গ্রন্থাবলিতে, কৃত্রিম মুখান্নাছ ব্যক্তির অভ্যাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[31] বর্তমানে টিকটক, লাইকিসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ছেলের নারী সাজা, যুবকদের হাতে চুড়ি, কানে দুল, বৈধ বাবরি থেকে বড় চুল রাখা ইত্যাদি কৃত্রিম মুখান্নাছের অভ্যাস বলে গণ্য হতে পারে।
ইসলামী ফিকহে কৃত্রিম মুখান্নাছের জন্য রাষ্ট্রীয় শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। তবে কৃত্রিম মুখান্নাছ যদি অন্য কোন পাপ কাজ না করে, তাহলে তার জন্য কোন হদ ও কাফফারা নেই। তবে তার অবস্থা অনুযায়ী শাসক তাকে তা’যির করবে। হানাফী মাজহাব মতে, মুখান্নাছকে শাস্তি হিসেবে কারাগারে আটক রাখা হবে, তাওবা করার আগ পর্যন্ত।[32] শাফেয়ী ও হাম্বলী মাজহাব মতে, মুখান্নাছকে দেশান্তরিত করা হবে, তবে তার পাপের জন্য নয়; সামাজিক স্বার্থে।[33] ইবনে কায়্যিমিল জাওযিয়াহ বলেছেন, মুখান্নাছকে এমন দেশে স্থানান্তরিত করা হবে, যেখানে তার ক্ষতির আশংকা নেই। যদি এমন কোন অঞ্চল না থাকে, তাহলে তাকে শাসক কারাগারে বন্দি করে রাখবে। ইমাম আহমাদ থেকে এমন মত বর্ণিত আছে।[34]
কোন মুখান্নাছ যদি ব্যাপকভাবে তার সাথে যৌনতায় প্ররোচনা দিতে থাকে মানুষকে, তাহলে তার শাস্তির ক্ষেত্রে মতভেদ আছে। অনেক ফকিহ বলেছেন, তাকে সমকামিতার শাস্তি দেওয়া হবে। আবু হানিফা বলেছেন, তার শাস্তিও তা’যির। তবে এই তা’যির কখনো তার অবস্থার গুরুতরতা অনুযায়ী হত্যা পর্যন্তও গড়াতে পারে।[35] এজন্য সামাজিকভাবে যারা কৃত্রিম মুখান্নাছ, তাদের উচিত তাদের মেয়েলিপনা ত্যাগ করে তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ফিরে আসা। সাথে সাথে সাধারণ মানুষদেরও উচিত, কোন পুরুষের নারীসূলভ স্বভাবের কারণে তাকে ‘মুখান্নাছ’ বলে গালি না দেয়া। কারণ, সেক্ষেত্রেও শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।
তথ্যসূত্র:
[1] আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, (২০/ ২১-২৩)
[2] ইদাহুল মুশকিল মিন আহকামিল খুনছাল মুশকিল- জামালুদ্দিন আল-ইসনাওয়ী, আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, আশ-শারহুল মুমতি’ আলা যাদিল মুসতাকনি’- মুহাম্মদ সালেহ উসাইমিন, আল-মুগনী- ইবনে কুদামা হাম্বলি
[3] লিসানুল আরব (২/ ১৪৫)
[4] মু’জামু লুগাতিল ফোকাহা (১/ ৪১৭)
[5] মাবসুত (১২/ ৩৮২), আল-বাহরুর রায়েক শারহু কানযিদ দাকায়েক (৬/ ৫০)
[6] আত-তামহিদ লিমা ফিল-মুআত্তা মিনাল মাআনী ওয়াল আসানিদ (২২/ ২৭৩)
[7] মুগনিল মুহতাজ ইলা মা’রিফাতি মাআনি আলফাজিল মিনহাজ (৪/ ৪৩০)
[8] আল-মুগনি (৭/ ৪৬২)
[9] সূরা নূর, আয়াত: ৩১
[10] তাফসিরে কুরতুবী (১২/ ২৩৪), তাফসিরে তাবারী (১৯/ ১৬৩), তাফসিরে ইবনে কাসির (৬/ ৪৮)
[11] সহিহ বুখারী, হাদিস নং: ৪৮৫৫
[12] সহিহ বুখারী, হাদিস নং: ৬৩৭৩
[13] ফাতহুল বারী (১০/ ৩৩২)
[14] দেখুন, ফাতহুল কাদির (২২/ ২২২), আত-তামহিদ (২২/ ২৭৩), মুগনিল মুহতাজ (৩/ ১২৮), আল-মুগনি (৭/ ৪৬২)
[15] আত-তামহিদ (২২/ ২৭৩), আল-মুগনী (৭/ ৪৬২)
[16] মুগনিল মুহতাজ (৩/ ১২৮), নিহায়াতুল মুহতাজ ইলা শারহিল মিনহাজ (৬/ ১৮৭), আল-মাবসুত (১২/ ৩৮২), আল-ইনায়া শারহুল হিদায়া (১৪/ ২৪৮)
[17] সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং: ১৪৬৮
[18] সুনানে ইবনে মাযাহ, হাদিস নং: ২৫৬৮
[19] আস-সুনানুল কুবরা (৮/ ২৫২)
[20] মাজমাউল আনহার ফি শারহি মুলতাকাল আবহার (১/ ৩৭১)
[21] আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা (১৬/ ২১৬)
[22] মুগনিল মুহতাজ ইলা মা’রিফাতি মাআনী আলফাজিল মিনহাজ (৩/ ৩৬৯)
[23] আল-মুগনী (১০/ ২০২)
[24] মাজমুউল ফাতওয়া (১৫/ ৩২১)
[25] মাকালাতে ইবনে বায (৩/ ৪৫২)
[26] আল-মাজমু’ (১/ ২৯৪)
[27] মুগনিল মুহতাজ (৪/ ৪৩০)
[28] মাজমুউল ফাতাওয়া (১১/ ৫৬৫)
[29] আল-মিনহাজ-ইমাম নববী (১/ ৪৯৭)
[30] হাশিয়াতুস সাভী আলাশ শারহিস সগির (৫/ ২১৭)
[31] হাশিয়াতু ইবনে আবেদিন (২/ ৪১৮)
[32] আল-মাবসুত (২৭/ ২০৫)
[33] আসনাল মাতালিব ফী শারহি রাওদিত তালিব (৪/ ১৩০), মুগনিল মুহতাজ ইলা মা’রিফাতি মাআনি আলফাযিল মিনহাজ (৪/ ১৯২)
[34] বাদাঈউল ফাওয়াঈদ (৩/ ৬৯৪)
[35] আল-মাবসুত (১১/ ৭৮), রওদাতুত তালিবিন ওয়া উমদাতুল মুফতীন (১০/ ৯০), আল-মুগনি (১০/ ১৫৫)