বইয়ের নাম: ইসলামে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার মূলনীতি
লেখক: মুহাম্মাদ আসাদ
বই পরিচিতি:
মুহাম্মদ আসাদ উত্তর আধুনিক বিশ্বে একজন প্রধান মুসলিম চিন্তাবিদ। উত্তর আধুনিক কালে সমস্যা অনুধাবন,বিশ্লেষণ ও ইসলামের সাথে এর সম্পর্ক করণে উনার মৌলিক ও সূক্ষ্ম চিন্তার বিশ্ব ব্যাপী সমাদৃত। তিনি একজন ইউরোপিয়ান, জীবিকার তাগিদে উনি মুসলিম বিশ্বে আসেন আর দীর্ঘদিন এই সমাজের সাথে বাস করে মনে প্রাণে ইসলামকে গ্রহণ করে নেয়। উপনিবেশিক শক্তি থেকে স্বাধীনতা উত্তর অনেক গুলো দেশের জন্য বুদ্ধি ভিত্তিক অনেক কাজের আঞ্জাম দিয়েছেন এই চিন্তক। লিখেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই যার মধ্যে রোড টু মক্কা, সংঘাতের মুখে ইসলাম ও ইসলামে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার মূলনীতি এই তিনটি বই বাংলায় অনূদিত হয়েছে। বাংলায় বই তিনটি অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক শাহেদ আলী।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব সরকার এর ইসলামি পুনর্গঠন বিভাগে কাজ করার সময় তিনি যেসব মতামত প্রদান করেন তার পুস্তক রূপ হচ্ছে এই বই। যদিও তিনি আক্ষেপ করে বলেন যে আমার পরামর্শগুলোর অতি অল্প কয়েকটি মাত্র গৃহীত হয়েছে। বইটি কয়েকটি কারণে ইসলামি রাজনীতি বা ইসলামে রাষ্ট্র ব্যবস্থা কি হবে তা নিয়ে লেখা অনেক গুলো বই থেকে আলাদা। বইটিতে আবেগধর্মী উপস্থাপনা নেই বরং বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে কিভাবে ইসলামের মৌলিক নীতি অনুযায়ী সাজানো যায় তার একটি বাস্তব প্রকল্প তুলে ধরা আছে।
এটি একটি রাজনৈতিক প্রচারণামূলক বই নয় আর শুধু ধর্মীয় নীতির বইও নয়। রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামের শরিয়াহতে যে বিস্তর স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে মানুষকে তার সময় উপযোগী ব্যবস্থা প্রণয়নে এই বইটি আপনার সামনে তাকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করবে। বইটিতে লেখক আগের জমানার লেখকদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংক্রান্ত নীতি সমূহ তুলে না ধরে সরাসরি কোরান-হাদিস থেকে মূলনীতি গুলো নেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং ইতিহাস থেকে তার উদাহরণ টেনেছেন। যারা ইসলামে রাজনীতির বিধান জানতে আগ্রহী, যারা এটির সাথে যুক্ত এবং যারা এটির বিরোধিতা করেন সবার জন্যই এটি একটি সুখপাঠ্য বই।
বই থেকে নেয়া নোট
ইসলামে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার মূলনীতি বইটিতে লেখক যে রাষ্ট্র কাঠামটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ বর্ণনা করেছেন আমি তাকে সংক্ষিপ্ত ভাবে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। এই সংক্ষিপ্ত বর্ণনাতে ইসলামের মূলনীতি অনুযায়ী একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ইসলামের মৌলিক নীতি গুলো আপনাদের সামনে ফুটে উঠবে। যারা একটি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখেন তাদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রসদ হতে পারে নতুন পরিকল্পনার ও আগের চিন্তাকে ঝালিয়ে নিতে। এই বইটিতে লেখকের অনেক কথা বা ব্যাখ্যাই আপনার চিরাচরিত ব্যাখ্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
লেখক তার ভূমিকায় বলেছেন আগের যুগে ইসলামী সিয়াসত নিয়ে যারা গ্রন্থ লিখে গেছে এবং আধুনিক যুগে যারা পশ্চিমা ধ্যানধারণায় পক্ষ নিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের যে ব্যাখ্যা লিখে গেছেন তিনি তার দুটো কেই পাশ কাটিয়েছেন। তার মতে তিনি সরাসরি কুরআন ও হাদিস থেকে প্রাপ্ত সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বিধি নির্দেশের ভিত্তিতে ইসলামী শাসন-সংবিধানের একটা তত্ত্ব-গত কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন।
বইটির শুরুতে আমাদের কিছু সমস্যা ও তার সমাধানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
প্রথম প্রশ্নটি তিনি করেছেন কেন আমাদের ইসলামী রাষ্ট্রের প্রয়োজন ?
তিনি বলেন উপনিবেশিকতা থেকে মুক্তি পাবার পর মুসলিম ভূমি গুলোর হাতে সুযোগ এসেছে নিজেদের মত করে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি নির্ধারণে । তিনি এমন একটি কাঠামো বা সংহিতার কথা বলেছেন যাতে আধ্যাত্মিক, দৈহিক, ব্যক্তিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় দিকগুলো সহ মানব জীবনের সামগ্রিক একটা রূপরেখা থাকবে; তা যতই স্থূল হোক আর এটি একমাত্র ইসলামের ঐশী আইন পূরণ করে। যেহেতু সৃষ্টির পরম লক্ষ্য হচ্ছে স্রষ্টার ইচ্ছার প্রতি সৃষ্টির আনুগত্য তাই মুসলিম সমাজকে বেছে নিতে হবে তারা কি আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী রাষ্ট্র কাঠামো দার করাবে না নিজের খেয়াল খুশি অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। আল্লাহ-তায়ালা নিজেই মানুষকে এই পছন্দের এখতিয়ার দিয়েছেন। তবে যথার্থ অর্থে ইসলামী জীবন যাপন করতে চাইলে ইসলামী রাষ্ট্র একটি পরিহার্য বিষয়। ইসলামী রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় লেখক বলেন, “ একটা রাষ্ট্রকে তখনই ইসলামী রাষ্ট্র বলা যায়, যখন ইসলামের সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিধানগুলো জাতির জীবনে সক্রিয়ভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং সে দেশের মৌলিক শাসন-সংবিধানে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয় ”।
দ্বিতীয় প্রশ্নটি তিনি করেছেন কেন ধর্মনিরপেক্ষ বা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ধর্মের হস্তক্ষেপ থাকবেনা এমন রাষ্ট্র চাই না?
আধুনিক ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ‘ভালো’, ‘মন্দ’, ‘ন্যায়’, ‘অন্যায়’ নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থায়ী কোন আদর্শ মাপকাঠি বা পরম-মানদণ্ড নেই। একটি মানদণ্ড হতে পারে জাতির স্বার্থ। কিন্তু এই জাতির স্বার্থ একটি জাতির মধ্যে থাকা বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আবার পরিবর্তনশীল মানুষ নিজের খায়েশ অনুযায়ী এসব মানদণ্ডে সুবিধাজনক পরিবর্তন এনে সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা করতে পারে। অন্যদিক রাষ্ট্রের ‘ভালো’, ‘মন্দ’, ‘ন্যায়’, ‘অন্যায়’ মানদণ্ডে একটি সমাজ যথেষ্ট ঐক্যবদ্ধ না হলে নিজ সমাজে যথেষ্ট ঐক্যবদ্ধ থাকা কঠিন। সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে এমন একটি মানদণ্ড হতে পারে ধর্মের নৈতিক-বিধান। ধর্ম ও নৈতিকতা পাশাপাশি হেঁটেছে মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই তাই ধর্ম ও নৈতিকতাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন লেখক।
লেখক এখানে রাষ্ট্রের আদর্শ হওয়ার জন্য যে ধর্ম ও নৈতিকতাকে পরম মানদণ্ড হিসাবে ধরতে হবে তার দুইটি শর্ত দিয়েছেন-
প্রথমত মানুষের জৈবিক ও সামাজিক চাহিদা পূরণের পূর্ণ সুযোগ এবং
দ্বিতীয়ত মানব সমাজ সমগ্রভাবে যে ঐতিহাসিক ও মানসিক বিকাশের নিয়ম ধারার অধীন, তার পূর্ণ স্বীকৃতি।
এই দুইটি শর্ত পূরণে এমন একটি ধর্ম আদর্শকে বেছে নিতে হবে যার মাধ্যমে মানুষের আধ্যাত্মিক ও জৈবিক দুই প্রকৃতিকেই মূল্যবান মনে করে এবং আদর্শটিকে হতে হবে বাস্তব ও সর্বপ্রকার অনমনীয়তা থেকে মুক্ত। ইসলাম বর্ণিত রাজনৈতিক নীতিমান উপরের দুইটি শর্তকেই পূরণ করে।ইসলামের আইনের পরিসর
লেখক পরবর্তী অধ্যায়ে ইসলামের আইনের পরিসর নিয়ে লিখেছেন। এখানেই তিনি তার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও যুক্তিসঙ্গত কথা গুলো বলেছেন। এই অধ্যায়টি ইসলামী রাজনীতির প্রতিটি সদস্য ও যারা ইসলামের রাজনীতির বৈশিষ্ট্য জানতে চান তদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
লেখকের কথার সার সংক্ষেপ হচ্ছে হাজার বছর ধরে চলে আসা ইসলামী ব্যবস্থায় বিভিন্ন ফকিহ বা বাখ্যাকারক ইসলামের নীতির আলোকে সমসাময়িক সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন যার দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে শরিয়তে বা আল্লাহ প্রদত্ত আইনের সমমানের হয়ে গেছে। আমরা যদি পূর্বতন চিন্তাবিদদের সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকে সরিয়ে মূল কোরআন ও হাদিস থেকে আল্লাহ ও তার রসূলের সা. সুস্পষ্ট বিধি নীতি গুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখবো শরিয়াহ খুব সংক্ষিপ্ত ও সুস্পষ্ট। সামাজিক জীবনের সব বিষয়ে মুল শরিয়তের এর সংক্ষিপ্ততার অর্থ এই এই নয় যে তা শরিয়াহ প্রণেতার ( আল্লাহ) দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছে, বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আইনগত ও সামাজিক অনমনীয়তার বিরুদ্ধে একটি উদ্দেশ্য মূলক রক্ষাবাচক। অর্থাৎ মানুষ যেন মূল শরিয়াহ এর সাথে সংগতি রেখে তার প্রয়োজন মাফিক অতিরিক্ত আইন ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এটাই চিরাচরিত ইজতিহাদ যার মাধ্যমে হাজার বছর ধরে ফকিহরা সময় উপযোগী আইন ও ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছেন।
শরিয়াহ এর বৈশিষ্ট্য হিসাবে লেখক বলেন, এটি অপরিবর্তনীয় এর পরিবর্তনের প্রয়োজনও নেই কারণ আল্লাহ এমন বিধানই সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যেসব বিষয় মানব জীবনে পরিবর্তনের ঊর্ধ্বে। আর মানুষের প্রগতির সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে শরিয়াহ বিশদ আইনের ব্যবস্থা না করে শুধু সাধারণ মূলনীতি বর্ণনা করে। এর সাথে শরিয়াহ কিছু বিষয়কে মুবাহ করে দিয়েছে অর্থাৎ এগুলো করা না করা মানুষের ইচ্ছে।
তাই ইসলামের আইন প্রণয়নের এলাকা হচ্ছে
১) যেসব ব্যাপারে খুঁটিনাটি আইন প্রণয়ন না করে শরিয়াহ শুরু সাধারণ মূলনীতি বলেছে সেইসব বিষয় এবং
২) যেসব বিষয়কে শরিয়াহ মুবাহ এর অন্তর্ভুক্ত করেছে অর্থাৎ মূল শরিয়াহ যাকে উহ্য রেখেছে।
তাই ইসলামী শরিয়াহ এর ভিত্তিতে স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে যুগোপযোগী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য আল্লাহ মানুষকে সুযোগ করে দিয়েছেন , দিয়েছেন একটি মুক্তপথ (মিনহাজ) [সূরা মায়িদাহ ৪৮]। লেখক এখানে আগের দিনের ফকিহদের কাছে যা চূড়ান্ত রায় (রাষ্ট্র ও সমাজের আইন) হিসাবে প্রতীয়মান হয়েছে তার উপর অন্ধ অনুকরণ বাদ দিয়ে মূল উৎস গুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার আহ্বান করছেন। তিনি বলেছেন এর মাধ্যমে আমরা দুইটি গুরুত্বপূর্ণ স্বিধান্তে পৌছাতে পারবো,
এক. সাধারণ সরল শরিয়াহ বা ইসলামী আইনের ধারণা, যা সরল অবস্থায় বিধাতা মানুষকে দিয়েছে
দুই. ইসলামী রাষ্ট্রের বাহ্যিক রূপ ও কর্মপ্রণালী হুবহু কোন ঐতিহাসিক দৃষ্টান্তের অনুরূপ হওয়া আবশ্যিক নয়।
একটি রাষ্ট্রকে ইসলামী হওয়ার জন্য রাষ্ট্রের সংবিধানে ও আচরণে ইসলামের শরিয়াহ সেই সুস্পষ্ট নির্দেশ গুলো অন্তর্ভুক্তি করা প্রয়োজন যার সাথে সমাজ, রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক জীবনের সম্পর্ক রয়েছে। আর এর মাধ্যমেই সময় ও সামাজিক অবস্থার চাহিদা মেটাবার বৃহত্তম অবকাশ রয়েছে। অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা একটি গতিশীল ব্যবস্থা।
ইসলামের রাষ্ট্র ব্যবস্থার রূপ কেমন হবে
এই প্রসঙ্গে লেখক প্রথমেই অন্য আদর্শ বা সভ্যতার পরিভাষাকে ইসলামের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ব্যাখ্যায় ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। কারণ প্রতিটি পরিভাষা তৈরিতে সেই সময়ের ও সেই সভ্যতার একটা নিজস্বতা থাকে যা ইসলামের সাথে মিলবে না। যেমন ডেমক্রেসি, লিবার্টি, সমাজতন্ত্র ,থিয়োক্রেসি(যাজকতন্ত্র) ইত্যাদির অনেক পরিভাষার সাথে ইসলামের কিছু অংশ মিলেও সার্বিকভাবে ইসলামের একটা নিজস্ব রূপ রয়েছে যা এই পরিভাষা ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করা যাবে না।
ইসলামের রাষ্ট্র ব্যবস্থা কি হবে তার জন্য আমাদেরকে শরিয়াহ এর মূল উৎস থেকে নির্দেশনা নিতে হবে। ঐতিহাসিক কোন দৃষ্টান্তকে হুবহু অনুসরণ করা অনুচিত। এই প্রসঙ্গে লেখক বলেন অনেক মুসলিমদের মধ্যে এই ধারণা বিদ্যমান যে খুলাফায়ে রাশেদা বা প্রথম চার খলিফার আমলের মত একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থাই একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রের রূপ। অথচ এই চার খলিফাই প্রত্যেকেই তার পূর্বের জনের থেকে আলাদা ব্যবস্থাপনায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং আলাদা ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় এমন নিয়ম চালু করেছেন যা কোরআনে বা হাদিসে সরাসরি নির্দেশ নেই যদিও এর একটি আইনও শরিয়াহ এর মূলনীতির বাহিরে ছিল না এবং এগুলো ছিল ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইন কানুন।
রসূল সা. তার সাহাবিদেরকে এমন করতেই নির্দেশ দিয়েছেন যেমনটা মুয়ায ইবনে জাবাল রা. কে ইয়েমেনের শাসক হিসাবে পাঠানোর সময় বলেছেন যে, কোরআন বা রসূল এর সন্নাহতে সরাসরি নির্দেশ না থাকলে নিজের বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করতে । এখান থেক এই স্বিধান্তে আসা যায় যে ইসলামী রাষ্ট্রের রূপ শুধু একটি নয় বহু হতে পারে এবং প্রতি যুগের মুসলিমদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের যুগের উপযোগী রূপটি কোরআন ও হাদিসের সামাজিক ও রাষ্ট্র সংক্রান্ত নির্দেশনা থেকে বের করে নেয়। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের অবতারণা করেছেন লেখক যে, আমরা কি তাহলে রাষ্ট্র পরিচালনায় সাহাবিদের অনুসরণ করবো না? অথচ তারা সর্বক্ষেত্রে আমাদের জন্য অনুকরণীয়।
সাহাবিদের অনুসরণ এর যথার্থ ব্যাখ্যা হচ্ছে তাদের চরিত্র, আল্লাহ ভীতি, আত্মাতিক ও সামাজিক সততা, নিঃস্বার্থপরতা এবং আল্লাহর কাছে তাদের আত্মসমর্পণের অনুসরণ। অন্যদিকে তারা রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থাপনায় যে সকল প্রথা সৃষ্টি করেছেন তা তদের পরবর্তী কালে আরেক সাহাবি দ্বারাই পরিবর্তিত হয়েছে যা তাদের সৃজনশীলতার উদাহরণ। প্রতিটি নতুন বিজয়, নতুন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার আলোকে তারা নিজেদের শাসন ব্যবস্থাকে সাজিয়েছেন। অর্থাৎ তারা রাষ্ট্র পরিচালনার সময়ের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। আর তারা এই শিক্ষা রসূল সা. সহচার্যে থেকেই শিখেছেন ।
আগের সময়ের ব্যবস্থাপত্র এই যুগে সরাসরি প্রয়োগ হবে সাহাবিদের সৃজনশীল কাজের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ।
ইসলামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য সমূহ:
এই প্রসঙ্গে লেখক বলেন ইসলামী রাষ্ট্র নিজেই একটা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নয় বরং কতগুলো লক্ষ্য অর্জনের উপকরণ।
- প্রথমত এমন একটি সমাজ তৈরি করা যে সমাজ ইনসাফ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করবে এবং ভালোর পক্ষে ও মন্দের বিপক্ষে দাঁড়াবে।
- দ্বিতীয়ত সেই সমাজ তখনই কায়েম হবে যখন একটি সুদৃঢ় ভ্রাতৃত্ববোধ এর বিকাশ হবে। অর্থাৎ সকল বর্ণ, গোত্র ও জাতীয়তাকে বাদ রেখে মানুষ মানুষ সমান এই নীতি বাস্তবায়ন হবে।
- তৃতীয় মুসলিম ও অমুসলিম সবার জন্য ন্যায় বিচার এর ব্যবস্থা।
- চতুর্থ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এমন ভাবে বিন্যাস করা যেন মানুষের ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ হয়।
- পঞ্চম প্রত্যেক নর নারী কে ইসলামের নৈতিক উদ্দেশ্য পালনে সুযোগ করে দেয়া।
- ষষ্ঠ অমুসলিম নাগরিকদের পূর্ণ দৈহিক ও সম্পত্তির নিরাপত্তা, পূর্ণ ধর্মীয় ও সংস্কৃতির স্বাধীনতা ও সামাজিক অগ্রগতির সুযোগ প্রদ…
- সপ্তম রাষ্ট্রকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা ও সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা।
- অষ্টম সারা বিশ্বে ইসলামের শিক্ষা প্রচার।
রাষ্ট্রের মূলনীতি
- ১. শরিয়াহ এর রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগণ সম্পর্কিত নির্দেশন সমূহ হবে রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়নে অলঙ্ঘ্য ভিত্তি। এখানে রাষ্ট্রের পরিসীমা সীমিত করা হয়েছে। অন্যদিকে শরিয়তের পরিসীমা মানুষের জীবনের সব অংশের সাথে। যেহেতু রাষ্ট্রের একমাত্র সম্পর্ক হচ্ছে মানুষের সামাজিক জীবনের সাথে তাই শরিয়াহ এর কাছ থেকে সামাজিক দিকের আইনের ব্যবস্থাটাই রাষ্ট্র গ্রহণ করবে। অন্য পরিসর রাষ্ট্রের পরিসীমায় পরে নাহ।
- ২. শরিয়াহর নির্দেশের ভিত্তিতে বা এর সাথে বিরোধপূর্ণ না হয় এমন ভাবে রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য জাগতিক ও সংশোধনযোগ্য আইন প্রণয়ন করা।
- ৩. সরকারের প্রতি আনুগত্য হচ্ছে নাগরিকের কর্তব্য ও মুসলিমদের জন্য ধর্মীয় কর্তব্য যতক্ষণ সরকার আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্যের মধ্যে থাকে ও সঠিকভাবে গঠিত হয়।
- ৪. শাসককে অবশ্যই জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে অর্থাৎ জনগণের সম্মতি আছে এমন একটি নেতৃত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করা।
রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব
ইসলামে সর্বোচ্চ সার্বভৌমত্ব হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছা ও নির্দেশনা। তাঁর নির্দেশনাই আইন প্রণয়নের মৌলিক ভিত্তি। ইসলামী রাষ্ট্র তার জনগণের ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত ও জনগণ কর্তৃক শাসক দ্বারা শাসিত , সুতরাং জনগণ এখানে পরোক্ষ ধরনের ক্ষমতা ভোগ করবে তা হবে আল্লাহর ক্ষমতার আমানত। সেই আমানত রক্ষা করেই জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত শাসক রাষ্ট্রের জন্য আইন প্রণয়ন করে। বলা যায় এই রাষ্ট্রে জনগণের ইচ্ছাকে রাষ্ট্রের রায় হিসাবে গণ্য হবে যতক্ষণ তা আল্লাহর আমানত রক্ষা করে চলে। শাসক নির্বাচিত হওয়ার পর প্রত্যেক নাগরিককেই শাসকের রায় মেনে নিতে বাধ্য যদিও তা তার পছন্দের না হয়।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রধান কে হবেন, তার যোগ্যতা কি হবে এবং মেয়াদকাল
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে যেখানে আল্লাহর নির্দেশনাকে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ভিত্তি ধরা হয়েছে সেখানে যারা বা যিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক হবে তাদেরকে সর্বাবস্থায় মুসলিম হতে হবে। রাষ্ট্রে শুধু এ ধরনের সর্বোচ্চ পদ ব্যতীত অন্য কোন ব্যাপারে নাগরিকদের মধ্যে ধর্মের কারণে বৈষম্য করা হয় না। শাসক হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা হচ্ছে বিশ্বাসী ও সৎকর্মপরায়ণ অর্থাৎ পরিপক্ব, জ্ঞানী ও চরিত্রে উন্নত। শাসকের শাসনকাল নির্ধারণের ইসলামের কোন নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা নেই। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, আজীবন বা সুস্থ থাকা পর্যন্ত এর যেকোনো একটা বেছে নেয়া যায়।
পরামর্শসভা বা শূরা বা আইন সভা বা সংসদ গঠন
- মৌলিক নীতি: শরিয়াহ এর নির্দেশনা হচ্ছে সামাজিক কর্ম নিজেদের মধ্যে আলোচনার দ্বারা সম্পাদিত হবে ( সূরা শুরাঃ৩৮)। তাই জনগণ এর জন্য সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়নের জন্য জনগণ কর্তৃক একটি নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদ থাকবে। যারা নিজেদের মধ্যে আলোচনার দ্বারা আইন ও ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ করবে ও শাসককে পরামর্শ প্রদান করবে।
- নির্বাচন: এই পরামর্শসভাকে জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধিত্বমূলক হতে হবে। তবে কিভাবে নির্বাচিত হবে সে ব্যাপারে শরিয়াহ কোন ব্যবস্থা নির্দিষ্ট করে দেয় নাই। তাই এখানে রাষ্ট্রের নাগরিকের স্বাধীনতা রয়েছে।
এই পরিষদে নির্বাচনের জন্য শিক্ষা, পরিপক্বতা ও চরিত্র হচ্ছে অপরিহার্য যোগ্যতা। তবে কোন ব্যক্তি নিজের জন্য ক্ষমতা বা নেতৃত্ব চাইতে পারবে না এটা শরিয়াহ এর মূলনীতি। তাই নির্বাচন ব্যবস্থা এই নীতিকে সামনে রেখেই সাজাতে হবে। লেখক এখানে প্রস্তাব করেছেন দল বা সংস্থা নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাবে এবং ব্যক্তি তার নিজের জন্য ক্যাম্পেইন করতে পারবে না।
কিসের ভিত্তিতে আইনসভার স্বিধান্ত সমূহ গৃহীত হবে
লেখকের ভাষায়
“যুক্তনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের সমবায়ে গঠিত কোন পরিষদ যখন কোন সমস্যা আলোচনা করে, তখন তাদের সংখ্যাগুরু অংশ চূড়ান্ত পর্যায়ে এমন একটি সিদ্ধন্তে একমত হবেন, যা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।"
রসুল সা. মুসলিমদের বৃহত্তম দলের অনুসরণ করতে বলেছেন।শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ এর ক্ষমতার সম্পর্ক
সর্বোচ্চ শাসকও আইন পরিষদের একজন হবে এবং পরিষদের নেতা হবেন। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শাসককেই নির্বাচন করেছে।
পরামর্শের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত ইচ্ছেমত গ্রহণ বা বর্জন করা যাবে না বরং তা কার্যকর করতে আইনগত বাধ্য। [সূরা আল ইমরানঃ ১৫৯]
শাসকের ক্ষমতা:
শরিয়াহ এর নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাসক, শাসন ও আইন বিভাগের নেতৃত্ব দিবেন, আইন পরিষদের পরামর্শ ও আইন সমূহ বাস্তবায়ন করবেন। শাসক আইন সমূহ বাস্তবায়ন এর পদ্ধতি ও শাসন এর ব্যবস্থাপনায় পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হবেন। আইন পরিষদ শাসন বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে নাহ। ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হিসাবে লেখক এখানে খুলাফায়ে রাশেদার সময়ে নেতৃস্থানীয় সাহাবা ও গোত্র প্রধান যারা সেই গোত্রের প্রতিনিধিত্ব করে তাদের সাথে পরামর্শ করতেন তার উল্লেখ করেন। মূলনীতির ব্যাখ্যায় লেখক সূরা আল ইমরান এর ১৫৯ নং আয়াতের প্রসঙ্গে হযরত আলী রা. এর মাধ্যমে প্রাপ্ত হযরত মুহাম্মদ সা. এর একটি হাদিস উল্লেখ করেন,
“বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকদের পরামর্শ গ্রহণ এবং অনুসরণ” [তাফসিরে ইবনে কাসির পৃঃ ২৭৭ প্রকাশিত কায়রো ১৩৪৩ হি.]
সরকার কাঠামো
মূল প্রশ্ন হচ্ছে একজন শাসকের হাতেই সব কর্ম ও ক্ষমতা একীভূত থাকবে না একটি মন্ত্রীপরিষদের মাধ্যমে অংশীদারিত্ব মূলক শাসন কাঠামো হবে। লেখক এখানে বলেছেন যেহেতু শরিয়াহতে সরাসরি কোন নির্দেশ নেই কিন্তু অনেক সহি হাদিস থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় একজন আমির (নেতা) এর হাতেই ক্ষমতা প্রদানে তাই লেখক প্রেসিডেন্সিয়াল বা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছেন। যেখানে তিনি একটি মন্ত্রীপরিষদ ঠিক করে নিবেন যারা হবে তার সহকারী বা সেক্রেটারিয়েট, ক্ষমতায় তাদের কোন অংশীদারিত্ব থাকবে না।
এর ব্যবস্থার মাধ্যমে দুইটি মৌলিক সমস্যা দূর হবে বলে লেখক বর্ণনা করেন।
- এক যেহেতু জনগণ একজন সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করেছেন শাসন করার জন্য সেখানে তিনি মন্ত্রীপরিষদের মাধ্যমে অংশীদারিত্ব এর ভিত্তিতে শাসন করলে তিনি উপর পূর্ণ ক্ষমতা্র অধিকারী হন না। কিন্তু শরিয়াহতে একজন আমিরকে অনুসরণের নির্দেশ আছে।
- দুই যেহেতু অমুসলিমরা সরকার প্রধান হতে পারবেন না সেখানে মন্ত্রীপরিষদের মাধ্যমে অংশীদারিত্ব ব্যবস্থা থাকলে অমুসলিমদের মন্ত্রিত্ব দিতেও বাধা চলে আসবে। কিন্তু প্রেসিডেন্সিয়াল বা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার হলে এই সমস্যা থাকবে না বরং সরকার অমুসলিমদের মেধা ও প্রতিভা রাষ্ট্রের কাজে ব্যবহার করতে পারবে।
আইন প্রণয়ন
জনগণ এর মাধ্যমে নির্বাচিত পরামর্শ সভার সদস্যদের কাজ থেকে আইন ও সরকার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ব্যাপক ও সূক্ষ্ম জ্ঞান আশা করা যায় না। তাই প্রতিটি বিভাগের আইন ও পলিসি নির্ধারণের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি আবশ্যক। যারা আইনের খসড়া করে দিবেন যা আইন পরিষদের সদস্যদের আলোচনা ও পরামর্শে সংশোধিত হয়ে গৃহীত হবে।
সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাইব্যুনাল
শাসন বিভাগ ও আইন প্রণয় বিভাগ আলাদা হওয়ায় মতানৈক্য স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে লেখক একটি সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাইব্যুনাল এর প্রস্তাব করেছেন যারা এই মতানৈক্য দূর করবেন, গৃহীত আইনের উপর শরিয়াহ সংক্রান্ত মতামত প্রদান করবেন এবং শাসকে ইমপ্লিচমেন্ট করতে পারবে। শরিয়াহ ও জাগতিক বিষয়ে জ্ঞান রাখেন এমন শ্রেষ্ঠ আইনবেত্তাদের নিয়ে এই পরিষদ গঠন করতে হবে বলে মত দেন লেখক ।
ট্রাইব্যুনালের সদস্যদের শাসক ও আইন পরিষদ যৌথ ভাবে নির্বাচন করবে। যাদের মেয়াদ কাল আজীবন বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হবে এবং সারা জীবন তিনি মর্যাদা ভোগ করবেন এমন প্রস্তাব করেন লেখক।
দল গঠন
শাসন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিশেষ মতামত প্রচার এর জন্য জনগণের দল গঠনের অধিকার রয়েছে তবে তা কোন অবস্থাতেই রাষ্ট্র যে মৌল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত আছে তার বিরোধী হতে পারবে না।
নাগরিকের আনুগত্য
শরিয়াহ এর উপর প্রতিষ্ঠিত আছে এমন সরকার তার নাগরিকদের কাছে জান ও সম্পদের আনুগত্য দাবি করে এবং নাগরিকরা সেই আনুগত্য প্রদর্শনে বাধ্য।
জিহাদ ও প্রতিরক্ষা
ন্যায় সঙ্গত যুদ্ধে (জিহাদ) প্রতিটি মুসলিম নাগরিকদের অংশ গ্রহণের দাবি রাষ্ট্র করতে পারে, তবে অমুসলিমদেরকে বাধ্য করতে পারে না। অমুসলিমরা রাষ্ট্রে প্রতিরক্ষায় স্ব-ইচ্ছায় অংশ নিতে পারবে । সামরিক কাজে অনিচ্ছুক সক্ষম অমুসলিমদের কাজ থেকে প্রতিরক্ষা কর বা যিযিয়া আদায় করতে হবে। এর পরিমাণ মুসলিমদের দেয়া যাকাত থেকে কম।
সরকারের প্রতি আনুগত্যের সীমা ও শাসক অপসারণ
শরিয়াহ এর মূল নীতি
- শাসক যতক্ষণ শরিয়াহ এর ভিত্তির উপর আছেন ততক্ষণ তার কর্ম ভাল লাগুক আর না লাগুক জনগণ তাকে মেনে নিতে বাধ্য।
- শাসক বা সরকার যদি এমন আইন করে যা শরিয়াহ অনুযায়ী পাপ কাজ বলে গণ্য তাহলে নাগরিকদের আনুগত্যের দায়িত্ব থাকেনা।
- শাসক যদি শরিয়াহ এর বিরোধী কাজ করতে সংকল্পবদ্ধ হয় তাহলে তার কাজ থেকে শাসন ক্ষমতা কেড়ে নেয়া কর্তব্য।
- শাসকের বিরুদ্ধে কোন গোষ্ঠিগত সশস্ত্র বিদ্রোহ সঙ্গত হবে না।
এক্ষেত্রে লেখক প্রস্তাব করেছেন সমাজের সংখ্যাগুরু অংশের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ বা জোর পূর্বক শাসকের অপসারণ করেতে। আর শাসককে অপসারণ করার ক্ষমতা এবং এই ব্যাপারে জনগণের মতামত নেয়ার ক্ষমতা সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাইব্যুনাল এর থাকা উচিত বলে মনে করেন লেখক।
নাগরিকের অধিকার
- মত প্রকাশের অধিকার – বিদ্রোহ বা ফ্যাসাদ এর উসকানি দেয় এমন মত বাদে।
- জীবন, সম্পদ, মর্যাদা, সম্মান, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার।
- অবৈতনিক মৌলিক শিক্ষা পাওয়া ও জীবিকা অর্জনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার অধিকার।
- নিরাপদ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা যেন প্রতিটি নাগরিক মানবিক মর্যাদা নিয়ে বাস করতে পারে।
- ইসলামী রাষ্ট্রে আত্মাকে পিষ্ট করে এমন দরিদ্যতা থাকতে পারবে না।
- সকল নাগরিকের জন্য জীবিকা অর্জনের সুযোগ করে দিতে হবে।
- সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সকল নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
- একটি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প গ্রহণ করবে রাষ্ট্র যেন সব নাগরিকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়।
- বিনা খরচে উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার।
- অক্ষম লোকদের জন্য রাষ্ট্রের নিকট থেকে সম্মানজনক খাদ্য , বস্ত্র ও বাসস্থান পাওয়ার অধিকার।
লেখক বইটির উপসংহারে কয়েকটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন:
- ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রণয়নে মূল বাধা হিসাবে তিনি স্বাধীন ইজিতিহাদ এর অনুপস্থিতকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমরা শরিয়াহ এর মূল নির্দেশনাকে প্রধান গুরুত্ব না দিয়ে অতীতের ছকে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে বর্তমান যুগের রাজনৈতিক প্রয়োজন মেটানোর বাস্তব প্রস্তাবনা হিসাবে শরিয়াহকে গ্রহণ অসম্ভব করে তুলেছি। কারণ অতীতের ছক আর ফিকাহি সমাধান আমাদের কাছে শরিয়াহ হয়ে উঠেছে।
- মুসলিম ও অমুসলিম সব নাগরিকের কাছে ইসলামী রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা যে একটি সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার নৈতিক দাবি সেটা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
- ইসলামী রাষ্ট্রকে হতে হবে গোষ্ঠী বা নির্দিষ্ট মাযহাব নিরপেক্ষ শুধু মাত্র ঐশী বানীর উপর নির্ভরশীল।
- আইন প্রণয়ন বা বিষয়বস্তু সংগ্রহের সময় প্রতিটি গোষ্ঠী ও মাযহাবের পন্ডিতদের নিয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল কাজ করবে।
- কোরআন ও হাদিস থেকে মৌলিক নির্দেশনা গুলো শিরোনাম সংযোজন করে একটি সংগ্রহ তৈরি করতে হবে যা বিভিন্ন পন্ডিতদের কাছে পাঠাতে হবে তাদের আলোচনা পর্যালোচনা জানার জন্য। এটি রাষ্ট্রে আইন প্রণয়নের ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে।